Saturday, March 21, 2009

সইফুদ্দিন না কবীর সুমন?

সইফুদ্দিন চৌধুরী যাদবপুরে পার্থী হওয়াই অনেক বিরোধি বন্ধুরাই স্পস্টত ক্রুদ্ধ। কেও কেও কুৎসা রটাচ্ছেন সিপিএমের টাকা খেয়ে সইফুদ্দিন পার্থী হয়েছেন যাতে সিপিএমের সুবিধা হয়। কি আনন্দের কথা-একজন লোক যে সিপিএমের তিনবারের এম পি ছিলেন-বাঁধা ছিল নিশ্চিত পলিটবুরোর সদস্যপদ-তিনি সেইসব ছেড়ে দিয়ে আদর্শের প্রশ্নে, সিপিএমের অগণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করে নতুন পথের নতুন দল তৈরী করলেন। আর আজ বলা হচ্ছে তিনি সিপিএমের টাকা খেয়েছেন? শুধু যারা তৃণমূল করে তারাই একমাত্র সিপিএম বিরোধি? সিপিএম বিরোধিতাকি মমতার খাস তালুক না কি?

একটা কথা সিপিএম এবং তৃণমূলের 'সমর্থক' দের পরিস্কার জানা উচিত। কজন সি পিএম কে চাই?
১৫%? ২০%--সংখ্যাটা ২৫% বেশী হওয়া সম্ভব না। বাকী ২৫% বামফ্রন্টকে ভোট দিতে বাধ্য হয়-তাদের পছন্দ করে বলে এই ভোট দেয় না। তার কারন, তারা বিরোধিদের আরো বেশী অপদার্থ বলে মনে করে। আর কজন বঙ্গবাসী তৃণমূলকে পছন্দ করে? মমতাকে পছন্দ করে? সংখ্যাটা ১০% এর বেশী? আমি খুব জোর গলায় বলবো-তারও কম। কিন্তু তাও মমতার দল ইদানিং বিপুল ভোটে জিতছেন। কারন সিপিএমের আত্মরম্ভিকতা এবং অগণতান্ত্রিকতায়-সাধারন মানুষের চারিদিকে যে চক্রব্যুহ তৈরী হয়েছে-তার থেকে সাধারন মানুষ মুক্তি চাইছে।

এর পরেও বলব, মমতা এবং সিপিএমকে ঘৃণা করে এমন বাঙালীর সংখ্যা ৫০% এর বেশী। এরাই সাধারন বাঙালী। এই তৃতীয় শক্তির জায়গাটা কংগ্রেস নিতে পারত-কিন্ত দিল্লীদের নেতাদের অপরিনামদর্শিতায় নিতে পারল না। পি ডিএস ও নিতে পারত। কিন্তু সমীরবাবু মমতার আঁচল ধরে থেকে পার্টির অস্তিত্বই ঝুলিয়ে দিলেন। সংখ্যাধিক্য যে বাঙালী-যারা চাইছিল অহিংসার রাজনীতি-উন্নতির রাজনীতি-গণতন্ত্রের রাজনীতি-তাদের প্রতিনিধিত্ব করার কেও রইল না বাংলায়। পড়ে রইল, সিপিএমের অগণতান্ত্রিকতার সাথে মমতার উন্নয়ন বিরোধি আন্দোলনের ফলে কৃত এক শ্বশান বঙ্গ।

এর পরেও আমাকে মানতে হবে সইফুদ্দুন চৌধুরীর মতন পার্থীদের প্রাসঙ্গিকতা নেই? যিনি মমতা এবং সিপিএমের থেকে সমান দূরত্বে থেকে গণতন্ত্র, অহিংসা এবং উন্নয়নের রাজনীতির প্রতীক হিসাবে দাঁড়াতে চাইছেন? যারা মমতা এবং সিপিএম -উভয়কেই চান না-তারা সইফুদ্দিনকে ভোট দিয়ে তাদের নীরব প্রতিবাদ জানাবেন সেইসব ক্ষমতালোভি হাঙরদের বিরুদ্ধে যাদের জন্যে পশ্চিম বাংলার আজ এই হাল।

জনগণের প্রতি সেই দৃঢ় বিশ্বাস আমার আছে।

যাদবপুরের মানুষ কাকে ভোট দেবেন তাদের ব্যাপার। আমার নিজের কেন্দ্র কৃষ্ণনগর। ভোট দেওয়ার জন্যেই আমি আমেরিকা থেকে ভারতে আসছি-কারন তখন পর্যন্ত জানতাম ওখানে কংগ্রেস দাঁড়াবে। এখন বুথে যাব-এবং সংবিধানের ৪৯ ধারা মেনে কাওকে ভোট না দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করব। সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট সেটা আগেই বলেছি। তাপস পালকে ভোট দেব কেন? উনি ওই অঞ্চলের সমস্যা নিয়ে কি জানেন? কটা নদী মারা গেছে আমাকে বলতে পারবেন? বৃটিশ আমলের পর একটাও খাল কাটা হয় নি-একটাও ব্রীজ তৈরী হয় নি-বন্যা হলে এখন ভেসে যায়। মমতার একদিন মনে হলে ওখানে তাপস পালকে দাঁড় করানো হৌক -টিকিট দিয়ে দিলেন। চাপিয়ে দিলেন স্থানীয় মানুষদের ওপরে। যেভাবে ওই এলাকাতে আগে সিপিএম দীর্ঘদিন অজয় মুখার্জী বলে এক অপদার্থ এম পি কে রেখেছিল-যিনি স্থানীয় লোক ছিলেন না। অজয় বাবু সম্মন্ধে এই কথা বলতে খুব খারাপ লাগছে-আমার ছোটদাদু উনার আপ্ত সহায়ক ছিলেন বহুদিন। সেই সুত্রে অনেকবার দেখা হয়েছে। কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া পার্থীরা এই এলাকার জন্যে কিছুই করে নি।

আসলে অধিকাংশ জনগনই বোঝে সিপিএমের আদর্শের বুলিও যেমন ফানুস-তৃণমূলের সিপিএম বিরোধিতাও ততটাই অন্তসারশুন্য -পশ্চিম বঙ্গের জন্যে আরো ভয়ংঙ্কর। তৃণমূল এবং সিপিএমের আসল খেলাটা ক্ষমতার। সেই জন্যেই এত হিংসা চারিদিকে। এর থেকে মুক্তির জন্যে-নিদেন পক্ষে এদের ক্ষমতার রাশে টান ধরতে জনগনের তৃতীয় শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার ভীষন দরকার আজ পশ্চিম বঙ্গে। সইফুদ্দিন চৌধুরী যদি ভালো ভোট টানতে পারেন-তাহলেই বোঝা যাবে এক বৃহৎ অংশের জনগন মমতার ক্ষমতালোভি ভোট সর্বস্ব বিরোধিতাকে বর্জন করেছে। বোঝা যাবে তারা সদার্থক বিরোধিতা দেখতে চাইছে। এই তৃতীয়শক্তির পথ ছাড়া --মমতার উন্নয়ন বিরোধি রাজনীতি-যা পশ্চিম বঙ্গকে সোনার বাংলা থেকে কানার বাংলা বানাচ্ছে-তার থেকে মুক্তির পথ নেই। বিরোধি রাজনীতির নামে তৃণমূলের ধ্বংশাত্মক রাজনীতিকে আটকানোর একটাই পথ-তাদের বিকল্পকেও শক্তিশালী করা-যাতে মমতা বুঝতে পারেন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন বিরোধিতা করলে, তার রাজনৈতিক অস্তিত্বও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

পশ্চিম বঙ্গের জনগণ যেন সর্বদা স্মরণে রাখেন-সিপিএমের যে অগণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে তাদের যাবতীয় ক্ষোভ-সেটা তৃণমূল মসনদে আসলেই মিটে যাবে- এমন আশা করা মুর্খামি। কারন মমতা ব্যানার্জির পার্টিতে কোন গণতন্ত্র নেই। তৃণমূল একটি ফ্যাশিস্ট পার্টি। বাম পন্থি ফ্যাশিস্টদের সরিয়ে দক্ষিন পন্থী ফ্যাশিস্টদের আনলে পশ্চিম বঙ্গের গণতান্ত্রিক পরিবেশের উন্নতি হবে-এ কথা মানা যায় না।

সিপিএমের অগণতান্ত্রিক অপশাসনের বিরুদ্ধে আমি মনে করি, সইফুদ্দিন চৌধুরিই সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছিলেন-সেই পথ ছিল অহিংস উন্নয়নকামী গনতন্ত্রমুখী সমাজতন্ত্র ( আপনারা এই সাইটে ভিজিট করুন, সিপিএমের বিরুদ্ধে সঠিক পথ কি হওয়া উচিত ছিল জানতে http://www.pdsindia.org/). কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, পশ্চিম বঙ্গে সিপিএমের অগনতান্ত্রিক শাসনকে দূর করতে আমরা যার দিকে তাকিয়ে আছি-সেই ভদ্রমহিলা নিজে চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক। জনগণ বুঝতে পারছে না-গণতন্ত্র কোন কাগুজে শব্দ না। তা প্রতিনিয়ত অভ্যেসের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয়। বাম ফ্যাসিজম সরিয়ে ডান ফ্যাসিজমকে আনলে, রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিবেশের কোন উন্নতিই সম্ভব না। সেই জন্যেই সইফুদ্দিনের মতন তৃতীয় শক্তিকে শক্তিশালী করা দরকার-যাতে লাগাম ছাড়া উন্নয়ন বিরোধি রাজনীতি করে মমতা ব্যানার্জি পশ্চিম বঙ্গকে ধ্বংশের মুখে ঠেলে দেওয়ার আগে দুবার ভাবতে বাধ্য হন। তৃতীয় শক্তির উত্থান না হওয়া পর্যন্ত মমতা এটা একদমই ভাববেন না। কারন তিনি জানবেন, সিপিএমের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধদের ভোট তিনি পাবেনই। কিন্ত অধিকাংশ জনগন সিপিএমের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হলেও, সিপিএম যেভাবে জমি নিয়েছে তা সমর্থন না করলেও, তারা রাজ্য সরকারের শিল্পস্থাপনের পক্ষেই। য়েই বিশাল সাধারন জনগনের একমাত্র ভরসাস্থল হতে পারে, সইফুদ্দিন চৌধুরীর মতন তৃতীয় শক্তি-যারা পচে গলে যাওয়া সিপিএম এবং তৃণমূলের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখবেন। তাই জনগণের কাছে অনুরোধ, আপনারা এই তৃতীয় শক্তিকে শক্তিশালী করুন-যাতে শাসক এবং বিরোধি দল আরো দ্বায়িত্বপূর্ন ভূমিকা নিতে পারে।

তৃতীয় শক্তি না থাকলে কিন্তু এই রাজ্যে সিপিএম এবং তৃণমূল উভয়ই আরো বল্গাহীন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন কান্ডকারখানা চালিয়ে যাবে।

মনে রাখবেন-কোয়ালিটি প্রোডাক্ট পেতে প্রতিযোগিতার বিকল্প নেই। তাই তৃতীয় শক্তিকে শক্তিশালী করে মমতা এবং সিপিএমের আরো একটি প্রতিদ্বন্দী তৈরী করুন। এতেই পশ্চিম বঙ্গের আসু মঙ্গল।

No comments:

Post a Comment