মহানায়ক তাপস পাল কৃষ্ণনগরে কংগ্রেসের পার্টি অফিসে নিজেই যেচে ঘুরে কল্কে পাচ্ছেন না। নদীয়া জেলারা কংগ্রেস সর্বাধিনায়ক শঙ্কর সিংহ দিল্লীর ডিকটাট নিয়ে পাত্তা দিচ্ছেন না। দেওয়া সম্ভবও না। কারন তাহলে নী্চু স্তরের কর্মীরা ক্ষুন্ন হবে। এতে ভোটের পাটিগণিতে সিপিএম সুবিধা পাবে তা না। কংগ্রেস বা তৃণমূলের সিপিএমের মতন বাঁধা ভোট আছে-তবে সংখ্যাটা অনেক কম। এরা জেতে মূলত সিপিএম বিরোধি ভোট পেয়ে-ভোটটা যতটা না পক্ষে তার থেকে বিপক্ষে বেশী। এবং কংগ্রেসের নেতারা যতই 'বিদ্রোহ' করুন না কেন-তা নিতান্তই নেতা-বিদ্রোহ। জনবিদ্রোহের সুযোগ নেই এই সিপিএম বিরোধিতার ভরা বাজারে। ফলে দিল্লীর সিদ্ধান্ত যতই চিরতার জল হৌক না কেন-গিলতে হবে। আন্দোলন বিমুখ ভোট সর্বস্ব বিরোধিতার আরামকেদারা না ছাড়লে-এর থেকে বেশী কিছু আশা না করাই ভাল।
কিন্ত কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তই বলে দিচ্ছে জাতীয় দলগুলির আধিপত্য একদম ফিকে। লালু কংগ্রেসকে তিনটে সিট ছাড়তেও দরাদরি করছেন বিহারে-যেখানে কংগ্রেস স্বাধীনতার পর অনেক দিন সরকার চালিয়েছে। বিজুত সিট ছাড়তে না চাওয়াই বিজেপির সাথে জোটই হল না। শরদ পাওয়ারও কংগ্রেসকে ঘুঘু দেখাচ্ছেন-শিবসেনার তোল্লা দেখিয়ে। উত্তরপ্রদেশের কথা না বলায় ভাল। ভয় পেয়ে নীতিশ যা চাই, বিজেপি রাজী হয়ে গেল বিহারে। অসহায় আত্মসমর্পন।
কেন জাতীয়দলগুলির এই হাল?
আসলে এই হাল না হওয়াটাই আশ্চর্য্য। যেসব নেতা কর্মীরা সারা বছর কাজ করবেন, জনগনের গালাগাল খাবেন-বিরোধিদের লাঠি খাবেন-তাদের বাদ দিয়ে যদি দিল্লীর নেতারা নিজেদের ক্ষমতালাভের অঙ্ক দেখেন-তাহলে সেই দল বেশী দিন চলতে পারে না। যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা দখল করে রাজনীতির ব্যাবসা করা সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি সব দিল্লী ভিত্তিক প্রধান নেতাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। রাজ্যের কথা তারা ভাবেন না। ভাবলে প্রকাশ কারাত নিউক্লিয়ার ডিল নিয়ে ইউ পি এ ছাড়তেন না পশ্চিম বঙ্গের ক্ষতি জেনেও। রাহুল গান্ধী জোর করে পার্টিতে এক বছর হয় নি এমন মহিলাকে টিকিট দেওয়ার চেষ্টা করতেন না জেলা নেতৃত্বের সাথে কথা না বলে। বা তৃণমূলকে ২৮ টা সিট ছাড়তে রাজী হতেন না-যেখানে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা মোটেও এর পক্ষে ছিলেন না। বিজেপি তপন শিকদারে কথা শুনে অনেকদিন আগেই মমতার আঁচল ছাড়ত।
সেরকম কিছু হয় না। কারন খেলাটা অনেক জটিল। জাতীয় দল মানে দিলীর নেতারা দেখতে চাই প্রদেশের নেতারা অনুগত। আনুগত্য বোঝা যায়, অনুগত কতটা ছাপানো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। ফলে চাপানোর প্রক্রিয়াটা আনুগত্যের প্রশ্নে পরীক্ষিত পদ্ধতি। এই ভাবেই প্রকাশ কারাত অজস্র বাজে সিদ্ধান্ত রাজ্য সিপিএমের ওপর চাপিয়েছে। রাহুল মুখে বলছেন চাপাবেন না-কিন্তু কার্যক্ষেত্রে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের কথা না শুনেই মমতার কাছে মাথাদান অব্যাহত।
এখন ব্যাপারটা হচ্ছে এই-রাজ্যের স্বার্থ না দেখলে এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো টিকবেই না। বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলন এখন অনেক কম-কারন আঞ্চলিক দলগুলির রমরমা। এটা ভারতের স্থিতিশীলতার জন্যে ভাল। কিন্ত জাতীয় দল একদম না থাকলে কেন্দ্রে সুস্থির সরকার গঠন সম্ভব না। যে দুইবার সরকার অস্থায়ী হয়েছে-প্রতিবার মূল সমস্যা একটাই-কোন জাতীয় দল ছিল না সরকারে। কংগ্রেস বা বিজেপির অধীনে গঠিত কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ণ মেয়াদ কাটিয়েছে।
ফলে একটা ভারসাম্য দরকার। জাতীয়তাবাদি, সমাজবাদি এবং বামপন্থী তিনটি জাতীয় দল থাকা ভারতের রাজনীতির স্বার্থেই দরকার। কিন্ত এই সব দলের নেতারা আনুগত্য প্রিয় হলে-সখ্যাত সলিলে যমুনা নদীতে আত্মহত্যা করবেন।
Wednesday, March 18, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment