এবার সিপিএমকে লোকসভায় কেন ভোট দেবেন বলুনত?
আমি ভেবে দেখলাম প্রকাশ কারাত যদ্দিন সিপিএমের জেনারেল সেক্ট্রেটারী আছেন-সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে রাজ্যের সাংঘাতিক ক্ষতি। ভোট শুধু নষ্ট নয়-বিশাল ক্ষতি আমাদের।
প্রথমত সিপিএমের থার্ড ফ্রন্ট কোনদিন ক্ষমতাই আসবে না। সব মিলিয়ে ওরা ১০০ টাও পাবে না। বামফ্রন্ট মেরেকেটে ৩৫, মায়াবতী ৩০, বিজু ১০-আরো মেরেকেটে না হয় চল্লিশ জুরে দিলাম। তাহলেও ১০০ হয়-২৭২ অনেক দূর। অর্থাৎ বিরোধি হয়ে বসে থাকবে। পাঠক মনে রাখুন, বিরোধিতা করে ১৯৭৭ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত আমরা দিল্লীর কাছ থেকে কি পেয়েছি। আর ২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত রাজ্য কি পেয়েছে। বুদ্ধর প্রায় সব আর্জি বা দাবী মনমোহন মেনে নিয়েছিলেন গত পাঁচ বছরে। প্রকাশ কারাতের বালখিল্যতার মাশুল না দিলে আজ একটা নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট পশ্চিম বঙ্গ পেত। কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র পেতে কোন প্রকল্পে পশ্চিম বঙ্গের কোন অসুবিধা হয় নি। কারন মনমোহন এবং প্রণব মুখার্জি পশ্চিম বঙ্গের জন্যে দুহাত খুলে বসে ছিলেন। প্রনব-বুদ্ধ জুটিতে ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত পশ্চিম বঙ্গে কেন্দ্রীয় সাহায্যে ভাল কাজ হয়েছে। সেটাত সিপিএমই বলে।
২০০৮ এর অক্টবর থেকে ইউ এস নিউক্লিয়ার ডিল থেকে খেলা ঘুরে গেল। আপনারা দেখলেন কিভাবে রাজ্যের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে প্রকাশ কারাত ইউ পি এ থেকে বেড়িয়ে গেলেন। রাজ্যের শিল্পের ত ক্ষতি হলই-সবাই এটাও জানল প্রকাশ কারাতের হাতে সিপিএম বাস্তববাদি পথে চলবে না। হাওয়াই উড়ে ফানুস ফাটাবে-আর তার মূল্য চোকাবে এই গরীব রাজ্য।
সবথেকে বড় কথা রাজ্যের উন্নতির জন্যে বুদ্ধর সমস্ত চেষ্টায় জল ঢেলেছেন কারাত। জুজুর নাম কখনো আমেরিকা-কখনো কংগ্রেস।
যাইহোক যারা ভাবছেন বামেরা গিয়ে বিমা বা ব্যাঙ্কিং এর বেসরকারীকরন ঠেকাবে-তারা এবার ভাবুন। সেটা ইউ পি এ তে থেকে ঠেকানো সহজ না বেড়িয়ে গিয়ে? কংগ্রেসের ও সমাজতন্ত্রী লবি আছে-সুতরাং ইউ পি এতে সমাজতান্ত্রিক এজেন্ডা নিয়ে ত কংগ্রেস আপত্তি করে নি গত চার বছর। কিন্ত ভুলভাল লেনিনিজমের ধুয়ো তুলে যখন প্রকাশ কারাত দেশের সর্বনাশ করতে গেছেন, তখন কংগ্রেস-সিপিএম বিরোধ সামনে এসেছে। প্রকাশ কারাত মুর্খের মতন নিউক্লিয়ার ডিল ঠেকাতে গেলেন দেশের ক্ষতি করে-এবার কি ওর মুখ রক্ষা হবে? ওই চুক্তির পরে ভারত এখনো আমেরিকা থেকে কোন ফুয়েল বা প্রযুক্তি কেনে নি। যা কিছু কিনেছে সবই ফ্রান্স বা জাপান বা অস্ট্রেলিয়া থেকে। সবথেকে বড় কথা ফ্রান্স নিউক্লিয়ার প্রযুক্তিতে একনাম্বার। সুতরাং ভারত সেখান থেকে কিনবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। অথচ এই কারাত এবং তাদের মিথ্যুক কমি বাহিনী রটিয়ে বেড়িয়েছে এটা আমেরিকার ব্যাবসায়িক স্বার্থ। তা সেই স্বার্থ ছিল ত-এখন দেখা আমেরকার সাথে ভারত কি নিউক্লিয়ার ব্যাবসা করছে? সবটাই ত হচ্ছে ফ্রান্সের সাথে-যেটা প্রত্যাশিত ছিল। এখন ক্ষমতার লোভে দেশ ও পশ্চিম বঙ্গের ক্ষতি করা কারাত মুখ ঢাকবে কোথায়?
কিন্ত ইউ পি এ থেকে বেড়িয়ে কার লাভ হল? বীমার বেসরকারী বিল পাশ হয়ে গেল। সিপিএম ইউ পি এ তে থাকলে এটা হত না-এটা নিয়ে কংগ্রেস-সিপিএম মনোমালিন্য হওয়া কঠিন। কারন কংগ্রেসের মধ্যেই সোশালিস্ট লবি আছে। সিপিএম ইউ পি এ ছেড়ে দেওয়ায়, কংগ্রেসের সমাজতন্ত্রী লবি দুর্বল হল।
দেশে বামেদের কি কোন শক্তি আছে? নেই। অথচ জাতীয় সংস্থা গুলির , বিশেষত ব্যাঙ্কিং এর বেসরকারীকরন ঠেকানো দরকার। শিক্ষার অধিকার বিলটা আনা দরকার। এগুলো কি বামেরা একা পারবে কোন দিন? পারবে না। এর জন্যেই কংগ্রেসের সমাজতন্ত্রীদের সাথে জোট করে বেসরকারীকরন আটকানো ছিল একমাত্র বাস্তববাদি পথ। তৃতীয় ফ্রন্টে কি বেসরকারীকরনের বিরোধিতা করবে?? কংগ্রেসে যাও বা দু একটি আদর্শবাদি শিক্ষিত নেতার দেখা মিলবে-বিজু জনতা বা মায়াবতীর দলে সেরকম কারা আছে? না তাদের নিয়ে বেসরকারীকরন ঠেকাতে পারবে?
আমি নিশ্চিত কংগ্রেসকে নিয়ে রাজ্য সিপিএমের সমস্যা ছিল না। বাস্তবটা তারাও বোঝেন। আমি মনে করি এই রাজ্যের সিপিএমের নেতারাও রাজ্যকে যথেষ্ঠ ভালবাসেন। তাই দিল্লীতে কংগ্রসের সাথে জোট করে থাকার গুরুত্ব বোঝেন। কিন্ত তারা এখন প্রকাশের হাতের জিম্মি। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বহিস্কার করে-সুভাষকে ধমকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এই রাজ্যে কোন কমরেড প্রকাশের বিরুদ্ধে গেলে তার হাল কি হবে।
এই অবস্থায় পশ্চিম বঙ্গে সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে প্রকাশ কারাতের হাত শক্ত করা-যে ব্যাক্তিটি এই রাজ্য নিয়ে কিছু ভাবেন না-এবং এই রাজ্যের ক্ষতি করেই নিজের ক্যারিয়ার ও ক্ষমতা সিদ্ধ করতে চান। সুতরাং আমি রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করব প্রকাশ কারাতকে সবক শেখাতে। এই রাজ্যের ওই শত্রুকে বোঝানো হৌক রাজ্যবাসী তাকে পছন্দ করে না কারন তিনি এই রাজ্যকে ধ্বংশ করে নিজের আখের গোছাতে চান। বরং ভেবে দেখুন-এবার ইউ পি এ ক্ষমতাই আসছেই। তৃতীয় ফ্রণ্টের জন্যেই আসছে। সেক্ষেত্রে আমাদের রাজ্য থেকে যত বেশী তৃণমূল এবং কংগ্রেস এম পি আমরা পাঠাতে পারব-আমাদের তিনগুন লাভঃ
-রাজ্য থেকে বেশী মন্ত্রী হলে, তারা আমাদের বেকার ছেলেদের কাজ দিতে পারবেন।
-রাজ্যের জন্যে বেশী টাকা আনতে পারবেন। একথা কি কেও অস্বীকার করবে, প্রিয়দা বা প্রণব এই রাজ্যের জন্যে যা করেন তা রবীন দেবের করা সম্ভব ? এত অবাস্তব প্রশ্ন।
-রাজ্যে নতুন কেন্দ্রীয় গবেষনাগার বা প্রতিষ্ঠান আনতে পারবেন।
এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা বাংলায় হিসাব করুন। সিপিএমের কাউকে জেতালে তিনি পার্লামেণ্টের বাইরে সিগারেট ফোঁকা ছাড়া আপনার জন্যে কিছু করতে পারবে না। কারন তৃতীয় ফ্রন্ট ১০০ সিটও পাবে না। অন্যদিকে আমরা যত বেশী কংগ্রেস-তৃণমূল এমপি পাঠাতে পারব-তত বেশী মন্ত্রী পাব-আমাদের ছেলেরা কাজ পাবে। পশ্চিম বঙ্গে কেন্দ্রীয় সাহায্য আসবে।
একটা কথা মনে রাখবেন। এখন মন্দার বাজার। সামনের বছর গুলিতে বেসরকারী উদ্যোগে উন্নতি খুব বেশী হবে না। প্রায় সব উন্নতিই হবে সরকারী উদ্যোগে। তাই কেন্দ্রে আমাদের রাজ্য থেকে যত বেশী ক্ষমতা দখল করা যায়-তত ভাল।
তাই প্রকাশ কারাতের মতন নির্বোধদের দরজা না দেখালে-তারা পশ্চিম বঙ্গের ক্ষতি করেই যাবে। এতে বঙ্গের সিপিএম নেতাদের ও লাভ নেই। জনগনের ত কিছু ই নেই। আমি ত বামপন্থীদের বন্ধুদের অনুরোধ করব রাজ্যের স্বার্থের কথা ভেবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কংগ্রেসকে ভোট দিতে পারবেন না। ঠিক আছে। দেবেন না। কিন্ত নিজের ভোটটা সিপিএমকে দিয়ে রাজ্যের ক্ষতি করবেন না দয়া করে। রাজ্যবাসী প্রকাশ কারাতকে শিক্ষা না দিলে এই রাজ্যের ক্ষতি-রাজ্য সিপিএমের ও ক্ষতি। কারন সিপিএমের নেতাদের যতদিন প্রকাশের অধীনে কাজ করতে হবে-তাদের সদিচ্ছা থাকলেও তারা রাজ্যের জন্য অনেক কিছুই করতে পারবেন না। আর বৃহত্ত্বর ক্ষেত্রে বেসরকারীকরন আটকাতে যে কংগ্রেস-বাম জোট হওয়া দরকার-সেটাও প্রকাশ থাকা কালীন হবে না।
ডান-বাম-রাজ্য। সবার জন্যেই আজ প্রকাশ কারাতকে গোহারা হারানো বাঞ্ছনীয়।
নিজের ভোটটা সিপিএমকে দেওয়ার আগে দুবার ভাবুন।
Monday, March 9, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Bangla news
ReplyDelete