Thursday, December 22, 2011

শিল্প স্থাপনে মমতা সম্পূর্ন ব্য র্থ

মমতা এবং পার্থবাবু দুজনেই শিল্প স্থাপনে আন্তরিক। কিন্ত বাস্তব নীট ফল হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গের শিল্পায়ন গত ছমাসে সম্পূর্ন স্থগিত। জয় বালাজী থেকে ভূষন স্টীল- জমির অভাবে সব বন্ধ। উপরন্তু পেনশন থেকে রিটেল এফ ডি আই-সর্বত্র তৃণমূলের বাম মনোভাবে, ভারতের শিল্পপতিরাও মমতাকে সিপিএমের ক্লোন হিসাবেই দেখছেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গে আশু বিনিয়োগের কোন সুযোগ তৈরী হবে বলে মনে হচ্ছে না।

১৯৭৭-৮৪ সালের ইতিহাস ফিরে আসছে। জ্যোতিবাবু বা তৎকালীন সিপিএম নেতৃত্ব মোটেও চান নি, শিল্প পশ্চিম বঙ্গ ছেড়ে চলে যাক। শিল্পায়নের জন্যে মমতার মতন জ্যোতিবাবুও আন্তরিক ছিলেন। কিন্ত নিজেদের বামপন্থী অবস্থানে অনঢ় থাকায় , পশ্চিম বঙ্গ শিল্প শ্বশানে পরিণত হয়। মমতার সৌভাগ্য এই যে উনি শ্বশান থেকেই শুরু করবেন-পশ্চিম বঙ্গকে শ্বশান বানানোর দায়ভার উনাকে বইতে হবে না।

বাস্তবটা তাহলে আমরা কি শিখলাম? জনবিরোধি এবং বৃহৎশিল্পের পক্ষে অবস্থান না নিলে, রাজ্যের শিল্পোন্নতি সম্ভব না। বৃহৎ শিল্পের স্বার্থের সাথে জনগণের বিরোধ কেন বাধছে? এটা রাজনীতি না বাস্তব? এখানে উইন-উইন গেমপ্ল্যান বেড় হচ্ছে না কেন? মমতার জমি অধিগ্রহণ নীতি মেনে শিল্পের জন্যে জমি নেওয়া সম্ভব না সব শিল্পপতিরাই বলে দিয়েছে। ঠিক যেমন সম্ভব ছিল না সিটুর দাবির মেনে পশ্চিম বঙ্গে শিল্প চালানো। ফলে শিল্পের জন্যে ক্রমশ সিপিএম বাধ্য হয়েছে জন বিরোধি অবস্থান নিতে। অবশ্য তার আগে বেনফিশের মতন নিজে কিছু ব্যবসা করার চেষ্টা করে লালবাতি জ্বালিয়েছে।

সমাজতন্ত্রের ইতিহাস জানলে, এটা মোটেও অভিনব কোন নতুন অবস্থান না। ধণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে স্যোশালিস্ট রিফর্ম করে সমাজতান্ত্রিক অবস্থান মোটেও সম্ভব না-সেটা বহুদিন আগে বার্নস্টাইনের লেখার জবাব দিতে গিয়ে রোজা লুক্সেমবার্গ লিখেছিলেন। কারন এই ধরনের সংস্কার আসলে ধনতান্ত্রিক এবং শোষণের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে, শোষন কাঠামোকে দীর্ঘায়িত করে। যেটা ভারতের বামআন্দোলনের মধ্যেও আমরা দেখছি। এমন স্থিতিতে সমাধান তিনটি

(১) সম্পূর্ন লেনিনিস্ট বিপ্লব। উৎপাদনের জাতীয়করন। কিন্ত সেটি আসলে ধণতান্ত্রিক গণতন্ত্রের চেয়েও অনেক খারাপ একটি সিস্টেম বলে ইতিহাসের পরীক্ষিত সত্য। লেনিনিজমের পরীক্ষা পৃথিবীর সর্বত্র দুর্ভিক্ষ এবং গণখুন ছারা পৃথিবীকে ভাল কিছু দিতে পারে নি। এটা না মানলে, হয় আপনি নিরক্ষর, নয় বোকা -নইলে পাগল।

(২) ধণতান্ত্রিক কাঠামোকে বাড়তে দেওয়া-কোন বাধা না দেওয়া- এতে উৎপাদন এবং দক্ষতা বাড়বে। কিন্ত সমাজে অসাম্য ও বাড়বে। এই পর্যন্ত আমার আপত্তি ছিল না। খাইতে পেলেই হল। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে ক্ষমতা কুক্ষিগত হবে কিছু হাতে গোনা বণিকদের হাতে। ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন খুব খারাপ জিনিস। গোটা কমিউনিজমটাই এইভাবে ডুবে গেছে। এই জন্যে ইহাও কাম্য না।

(৩) তৃতীয় সমাধান আমার মতে কোয়াপরেটিভ সিস্টেম অব প্রোডাকশনে লুকিয়ে আছে। যেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত, সেখানে রাস্তায় ঝান্ডাবাজি সম্পূর্ন অর্থহীন। প্রকৃত জনআন্দোলন গড়তে গেলে, তা উৎপাদন ব্যবস্থায় কোয়াপরেটিভ বা সমবায়ের মাধ্যমেই করতে হবে।
এই নিয়ে আমি আগে অনেক লিখেছি
http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=15798

আরেক বার এটাই লিখি যে সমাজতন্ত্রের মূল ধারনা সমাজের জন্যে মানুষের আত্মত্যাগ। আর সেটা তখনই সম্ভব যখন ১০টা মানুষ একসাথে একটা সংস্থা চালাতে পারবে। ১০ জন মানুষ কোন সরকারী সংস্থায় চাকরি করলে মোটেও অন্যদের জন্যে কোন অনুভূতি গড়ে ওঠে না। বরং সে আরো স্বার্থপর হয়। আবার ১০ জন মিলে রাস্তায় নেমে পার্টিবাজি করলেও কোন সমস্যার সমাধান হয় না। জনশক্তি তখনই কার্যকরী যখন তা ১০ জনে মিলে একসাথে একটা ব্যবসা বা ফার্ম খুলে উন্নততর উৎপাদনের পথ দেখাতে পারে।

Saturday, December 10, 2011

অপদার্থ তোদিরা না আমরা?



স্টিফেন কোর্টের আগুন থেকে রাজ্যবাসী বা সরকার যে কিছুই শিক্ষা নেয় নি সেটা আবার পরিস্কার হল।


বাস্তবটাকে স্বীকার করাতে কল্পনাপ্রেমিক বাঙালীর সমস্যা সর্বদা। বাস্তব এটাই কোলকাতার সব ব্যবসা মারোয়ারী ব্যবসায়ীদের হাতে যাদের " বিজনেস এথিকস" বলতে কিছু নেই-সমাজমুখী কোন চিন্তাই নেই।ঘুঁশ দিয়ে, সব সরকারী আইনকে হিমঘরে পাঠিয়েছে এরা। নইলে কি করে একাধিক সরকারী আইন ভাঙা হল আমেরীতে? আর তোদি, গোয়েঙ্কাদের ধরবে কে? এরেস্ট ত আই ওয়াশ। কালকেই শিল্প স্থাপনের জন্যে মমতাকে তোদির কাছে ছুটতে হবে।


সরকারের ঘুম ভাংবে? বাজে কথা। ইন্সপেকশন করলে কোলকাতার ৭০% বাড়ির মালিকদের লাইসেন্স বাতিল হবে। সে ক্ষমতা কার আছে? কারুর নেই। আর নেই বলেই কালকে আবার আরেকটা আগুনের ঘটনা হবে। হবেই। আমি স্টিফানকোর্টের আগুনের ঘটনার সময় এই কথাটাই লিখেছিলাম। যেখানে ১০০/১০০০ টাকা দিয়ে ইন্সস্পেক্টর ম্যানেজ করলে ১ লাখ টাকা লাভ, সেই পাটিগণিতের সুবিধা নেবে না কোন মারোয়ারী? সমাজের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা নিয়ে ব্যাবসা করাটা ভারতীয় ব্যাবসায়ী ফামিলিগুলির মধ্যে নেই।


এর মধ্যে যদি ব্যবসার নাম চিকিৎসা আর শিক্ষা হয়-তাহলে, তার মধ্যে এই শ্রেনীর ব্যাবসায়ীরা ঢুকলে কি হবে আমেরি তার উদাহরণ। আমেরির বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ। এটা টাকা আদায় করার মেশিনে পরিণত হয়েছিল। সেদিক দিয়ে আরেকটা পাপের মৃত্যু হল। শিক্ষা এবং চিকিৎসাকে ব্যবসার বাইরে রাখতে হবেই। সরকারি চিকিৎসা খারাপ হলে- কমিউনিটির হাতে যেমন মিউনিসিপালিটি বা দরকার হলে চিকিৎস্ ক কোয়াপরেটিভের হাতে হাসপাতাল চলুক

Friday, November 25, 2011

বাজার আনন্দের "শেষ বামপন্থী"

খুচরো বিণপন ক্ষেত্রে বা দেশী রিটেলে বিদেশী বিনিয়োগের বিরোধিতা করেছে তৃণমূল-এই ব্যপারে বাজার আনন্দর সম্পাদকীয় বক্তব্যঃ

" কারণ, যাঁহাকে রাজ্য চালাইতে হয়, অর্থ সংস্থানের কথা ভাবিতে হয় তাঁহার পক্ষে বাস্তববাদী হওয়া ভিন্ন উপায় নাই। দুঃখের কথা, শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় চোখ বুজিয়া থাকিলেন। ‘পরিবর্তন’-এর হাওয়ায় ভর করিয়া তিনি পশ্চিমবঙ্গের মসনদে অধিষ্ঠিত হইয়াছেন। কিন্তু, তাহা নিতান্তই বাহ্যিক পরিবর্তন। মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন আসে নাই। একুশ শতকের বিশ্ব-অর্থনীতি কোন পথে হাঁটিতেছে, তাহা বুঝিতে তিনি ব্যর্থ। খুচরা বিক্রয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আসিলে আখেরে যে সাধারণ মানুষেরই লাভ, এই কথাটি তিনি বুঝিয়াও বুঝেন নাই।"

আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ লেখেন আমি জানি না। তাদের কাছে আমি শুধু কিছু তথ্য পেশ করতে চাইব
(১) ১৯৭৮ সালে আমেরিকান বাজারে , নিয়ন্ত্রনমূলক আইনের সংখ্যা ছিল ৮০,০০০/ বর্তমানে, সংখ্যাটি ২,৪০,০০০ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ বাজার সরকারকে টেকাতে, ধণতন্ত্রের তথা উদার অর্থনীতির পীঠস্থানে রেগুলেশনের সংখ্যা তিনগুন বাড়ানো হয়েছে তিন দশকে মধ্যে। এবং তার সবটায়, আরো স্বাস্থ্যপূর্ণ বাজারের জন্যে।

(২) যে রেগুলেশনগুলো বাড়ানো হয়েছে, তার মধ্যে সবথেকে বেশী যে আইনটি বারবার বলপ্রয়োগ করে চাপাতে হয়েছে-তার নাম এন্টিট্রাস্ট। অর্থাৎ দুটি প্রতিযোগী কোম্পানী কখনো একসাথে মিশে বা গোপনে দামের শলা করে বাজারে একাধিপত্য কায়েম রাখতে পারবে না। অর্থাৎ কোন কোম্পানী যাতে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তার জন্যে আমেরিকাতে সরকার সব থেকে বেশী আইন জারী রেখেছে।

(৩) এবার আসি আমেরিকাতে অর্গানাইজড রিটেলের প্রসঙ্গে। ওয়ালমার্টের জন্যে বহু স্থানীয় মুদিখানার দোকান উঠে গেছে। এমন কিছু দোকান যা ওয়ালমার্টের আগমনে উঠছে উঠছে করছে, তাদের সাথে আমি কথা বলে বুঝেছি ছোট ব্যবসায়ীদের কি যন্ত্রনা। ওশান সিটি যাওয়ার পথে রুট ৫০ এর ওপর ১৫০ বছরের পুরানো একটা দোকানে একবার বাটার আর স্থানীয় চকলেট কিনেছিলাম। সেইবারই মালিকিন আমাকে বলেছিল-এর পরের বার আর আমদের দেখতে পাবেন না-এখানে ওয়ালমার্ট এসে গেছে। কি অদ্ভুত। ২০১০ সালেই দেখেছি সেই দোকানে ঝাঁপ নেমে গেছে। এছাড়ার আরো অনেকের সাথে আমার কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে-নিজের চোখে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পিকেটীং দেখেছি ওয়ালমার্টের বিরুদ্ধে।

(৪) অনেকের ধারনা অর্গানাইজড রিটেল-মানে এই সব ঝকঝকে মল বানিয়ে -কি দারুন কেনাকাটার অভিজ্ঞতা দেবে! খুব ভুল ধারনা খাওয়াচ্ছে বাজার আনন্দ আর বাংলা মিডিয়া। অর্গানাইজড রিটেলের ক্ষেত্রে উৎপাদক পুরো দিশে হারা হয়ে যাবে। ওয়ালমার্টের উৎপাতে শুধু ব্যবসা বন্ধ হয় নি-স্থানীয় যেসব দুধ, দই ইত্যাদির উৎপাদন ছিল-তারাও ঝাঁপ টেনেছে। কারন ওয়ালমার্ট ভেন্ডরকে যে পয়সা দেয়, তাতে শুধু বড় বড় উৎপাদকরাই পারে সাপ্লাই দিতে। স্থানীয় অর্থনীতি ভেঙে যাবে-যা আমেরিকার বহু শহরে হয়েছে। এমন একটা টাউন দেখেছিলাম ভার্জিনিয়াতে- মাইনিং টাউন অক্সিডেন্ট। খুব কম লোকের বাস। তাও আগে শহরে বেশ কিছু দোকান ছিল-আশে পাশে কিছু শাক সব্জির উৎপাদন হত এককালে। ওয়ালমার্ট আসার পর সব দোকান বন্ধ। শুধু একপায়ে ওয়ালমার্ট দাঁড়িয়ে!

(৫) ওয়ালমার্ট আমেরিকান বাজাএর কোয়ালিটিও সাংঘাতিক কমিয়ে দিয়েছে। ওয়ালমার্টের যেকোন জিনিস যেমন সস্তা -ঠিক ততটাই বাজে। সেদিন ওয়ালমার্ট থেকে একটার সস্তার স্ক্রু ড্রাইভার কিনলাম-স্ক্রু খোলার বদলে, ড্রাইভারের মুন্ডীগেল ঘুরে। এত বাজে কোয়ালিটি ভারতেও দেখি নি। ওরা ভেন্ডরদের পয়সা কমাতে কমাতে এমন জায়গায় এনেছে, আর কোন কোয়ালিটি সাপ্লায়ার নেই ওয়ালমার্টে।

এন্টিট্রাস্ট আইন যদি ক্রেতাদের কথা ভেবে করা হয়ে থাকে অর্গানাইজড রিটেল বন্ধেও আইন দরকার। ভারতে খাবারের দাম যে হারে বাড়ছে-সেখানে খাবারের সাপ্লাই চেইন উন্নত না করে, মল বানানো দৃষ্টিকটুই শুধু না-সম্পূর্ন ভুল দিকে একটা দেশকে চালনা করা। আর সেই ভুল পথে চালনা করতে বাজার আনন্দের চেয়ে পারদর্শী আর কে আছে?

Thursday, November 24, 2011

এ পি ডি আর এবং একটি গণতান্ত্রিক তামাশা

সম্প্রতি দিদির সাথে কূট কাচালে, তৃণমুলের অতীত সহচর এ পি ডি আর ( গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি
http://apdr.org.in/index.html) নামে একটি সংগঠনের ভূমিকা কিছুটা মিডিয়া লাইমলাইট টানছে। অতীতে সিপিএমের অভিযোগের সূত্র ধরে এবার তৃণমূলীরাও বলছে এটি মাওবাদিদের মুখোশ-একটি মাওবাদি সহানুভূতিশীল শাখা সংগঠন।

অতীতে এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছিল সিপিএম। তখন তৃণমূল, এর উল্টোগীত গেয়েছিল। এখন দায়ে পড়ে এপিডিয়ারের বিরোধিতা করছে। এমন ভাব যেন তৃণমূল এতদিন জানত না, এ পি ডি আর মাওবাদি বা মাওবাদি সহানুভূতিশীলদের মুখোশ মাত্র। সিপিএমের লাঠি আর বন্দুকের বিরুদ্ধে তখন তৃণমূলের দরকার ছিল সশস্ত্র সাপোর্ট-সেটা ভারতে একমাত্র মাওরাই দিতে পারত দিদিকে। দিয়েও ছে। এখন যখন আর প্রয়োজন নেই, সংঘাত সামনা সামনি।

এপিডিআরের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করলে, এটা খুবই পরিস্কার তারা মাওবাদিদের শাখা সংগঠন এবং পশ্চিম বঙ্গে মাওবাদিদের রক্ষা করা তাদের প্রথম কাজ। গণতান্ত্রিক দাবিটা মুখোশ-কারন মাওবাদের মতন বা কমিনিউমের মতন বা লেনিন বাদিদের মতন চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক বা গণতন্ত্র বিরোধি মতবাদের বিরুদ্ধে তারা কোন দিন একটাও বিবৃতি দেয় নি। মাওদের বিরুদ্ধে তাদের কোন বিবৃতি নেই-কোন কোন নক্সাল আমাকে বলেছিল, এটা মিডিয়ার চাল। এপিডিয়া মাওদের বিরুদ্ধেও "নাকি" বিবৃতি দিয়েছে-মিডিয়া সেসব নাকি প্রচার করে না!!!

এটা হচ্ছে এপিডিয়ার সাইটের প্রেস রিলিজ-এখানে মাওদের বিরুদ্ধে কোন বিবৃতি পাবেন না



এর পরেও আছে। গত ছমাস তৃণমূলীদের অত্যাচারে অনেক সিপিএম কর্মী মারা গেছেন-অনেকেই ঘর ছাড়া। এপি ডিয়ার সেসব নিয়ে চিন্তিত না। তাদের চিন্তা কি করে মাওবাদিদের বাঁচানো যায় যৌথবাহিনীদের হাত থেকে। এখনত জলের মতন পরিস্কার সিপিএমের পতনের পর গ্রামবাসীরা আর মাওবাদিদের চাইছে না-তারাই ইনফর্মাএরের কাজ করে মাওদের ধরিয়ে দিচ্ছে। আগে সিপিএমের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে তারা মাওদের আশ্রয় দিত-এখন আর দিচ্ছে না। ঠিক এই জন্যেই ধরা পরে মারা গেলেন কিশানজী।
এপিডিয়ার যুদ্ধ "বিরতি" নিয়ে বেশী ব্যস্ত ছিল। কিসের যুদ্ধ? মাওবাদিরা কি সংবিধানিক শক্তি যে তাদের সাথে টেবিলে বসতে হবে? তারাত ঘোষিত গণতন্ত্র বিরোধি শক্তি-তাদেরকে কি করে রক্ষা করার কথা ভাবতে পারে সুজাত ভদ্রর দলবল?

সরকারের শক্তি কমিয়ে জনগনের হাতে শক্তি তুলে দিতে গেলে শুধু গণতন্ত্রের মাধ্যমে হবে না। ভোটের মাধ্যমেও হবে না। উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর জনগনের অধিকার আনতে হবে। তার জন্যে বন্দুকের নলের ডগায় বিপ্লবের দরকার নেই-কোয়াপরেটিভ আন্দোলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে কমিউনিটি লিডারশীপ আনা যেতে পারে। রাষ্ট্রের উৎপীড়ন কমানোর একটাই রাস্তা-সেটা হচ্ছে রাষ্ট্রের হাত থেকে উৎপাদন ব্যবস্থার কতৃত্ব কেড়ে, তা আস্তে আস্তে কমিউনিটিকে দেওয়া। কোয়াপরেটভ কে দেওয়া।
রাষ্ট্রের হাত থেকে ক্ষমতা কমানোর জন্যে কমিনিউস্ট গেরিলাদের সাহায্য করার চেয়ে বড় মূর্খামি আর কি হতে পারে? কারন কমিনিউস্টরাই সব থেকে বড় অত্যাচারি রাষ্ট্রে দমনমূলক রাষ্ট্রে বিশ্বাস করে। সুতরাং এপিডিয়ারের কাজকর্ম হচ্ছে মশা মারতে বাঘ ডেকে আনা। সুতরাং সবদিক দিয়েই প্রমাণিত এপিডি আর নামেই গণতান্ত্রিক রক্ষা সমিতি-এটি আসলে মাওবাদিদের আখড়া। এবং সেই ভাবেই এদের দেখা উচিত।

Saturday, November 12, 2011

মমতাতন্ত্রর প্রথম ছমাস


চৌত্রিশ বছরের একটি ধ্বংসপ্রায় অট্টালিকাকে মেরামত করে বসবাসযোগ্য করার জন্যে কি ছমাস যথেষ্ট?

অনেকেই বলবেন "না"।

সিপিএম পশ্চিম বঙ্গে যে অচলায়তনের জন্ম দিয়েছিল, তা সচল করতে হয়ত ছমাস যথেষ্ট নয়। কিন্ত দিনের প্রথম সূর্য্যের রঙে যেমন বাকী দিনটির আকাশ কিছুটা অনুমান করা যায়, মমতাতন্ত্র কোন দিকে গড়াবে-তার একটা আভাস আমরা পাচ্ছি। এবং সেই সিগন্যালগুলি খুব অভিপ্রেত বা আশাব্যঞ্জক না। মমতাকে নিয়ে বাংলা মিডিয়ার হ্যাংলামো অব্যাহত-গণশক্তির নাকি কান্নাও ক্রমাগত-কিন্ত মমতা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা মিডিয়াতে আশ্চর্য্যজনক ভাবে অনুপস্থিত। দেউলিয়া বাংলা মিডিয়ার কাছে অবশ্য প্রত্যাশার কলসটিও নেহাৎই ছিদ্রপূর্ণ।

প্রথমেই লিখি রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে। কোষাগার শুন্য। কেন্দ্রের কাছে মমতা বেইল আউট প্যাকেজ চাইছেন। কিন্ত সাংবিধানিক বাধা আছে। কেন্দ্র রাজ্যের উন্নয়নের জন্যে টাকা দিতে পারে-কিন্ত রাজ্য সরকারের বেতন মেটানোর জন্যে নিয়ম বহির্ভুত অতিরিক্ত টাকা দিতে পারে না। ফলে অসীম দাশগুপ্ত যেভাবে পশ্চিম বঙ্গকে ডুবিয়েছে বাজার থেকে উচ্চসুদের ঋণ নিয়ে-অমিত মিত্রও সেই পথেই হাঁটতে বাধ্য হলেন। সিপিএমের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে মমতার তর্জন গর্জনই সার-রাজ্যর ওপর আরো ধার চাপিয়ে বেতন মেটানোর কবর কাটার খেলা অব্যহত। কলেজ কর্মচারীদের বেতন এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বকেয়া মেটাতে পারছে না রাজ্য সরকার। এই সংকট থেকে বেড়োনোর জন্যে রাজ্যের উপায় বাড়ানোর দরকার। প্রণব এবং মনমোহন একথা বারবার সিপিএমকে বলেছেন-মমতাকেও বলছেন। কেওই শুনছে না। কারন সেটা করতে গেলে কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত-যেমন বর্ধিত কর, বিদ্যুতের বর্ধিত মাশুল , বিদ্যুত চুরি বন্ধ করা, রাস্তার ওপর টোল ট্যাক্স বসানো, অনাবাদি জমিগুলিকে শিল্পের জন্যে উচ্চদামে লিজ দেওয়া ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মমতা জনগণের ওপর বর্ধিত বোঝা চাপাতে চান না। ভাল কথা। সেটা একটা রাজনৈতিক লাইন হতেই পারে। কিন্ত আয় না বাড়ালে, অন্য উপায় খরচ কমানো। কিন্ত সে পথ চালু করলে ( যেটা না চাইলেও উনাকে করতেই হবে) রাজ্য সরকারের সব শুন্যপদে নিয়োগ বন্ধ, নতুন শিক্ষক নেওয়া বন্ধ করতে হবে। যেটি আরো বাজে সিদ্ধান্ত-এবং সেইভাবে শেষ রক্ষা হবেও না-কারন সরকারি খরচ কমানোর জায়গা আর বিশেষ কিছু নেই।

মোদ্দা কথা মমতার অর্থনৈতিক লাইন সিপিএমের থেকে আলাদা কিছু না। সেই বল্গাহীন পপুলিজম যা একটা রাজ্যকে সর্বনাশ ছারা আর কিছু দিতে পারে না।

এবার আসা যাক রাজ্যে স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে। মমতার পরিদর্শনে বা সাসপেনশনে কাজ কি কিছু হয়েছে? শিশুমৃত্যুর হার এবং চিকিৎসায় অবহেলা অব্যাহত। আমি ছমাস আগেই লিখেছিলাম নাটক করে, এসব কিস্যু হবে না। সুস্থ্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এ ধরনের কেন্দ্রীয় কাঠামোতে হবে না। দরকার ক্ষমতা এবং দ্বায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরন। দরকার পেশাদার হসপিটাল ম্যানেজমেন্টের লোক এবং তাদের হাতে ক্ষমতা । মমতা কি করলেন? একটা ভাঙা বাড়িতে এলেন। ছাদে ফুঁটো আছে দেখে বললেন-এই এখানে প্লাস্টার মার। ভাঙা বাড়ি প্লাস্টার মেরে সারানো যায় না। দরকার পুড়ানো জরাজীর্ন বাড়িটিকে ভেঙে, নতুন করে বাড়ি বানানো। পশ্চিম বঙ্গের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমন ধ্বংস প্রাপ্ত, সিপিএম পার্টির উচ্চ স্থানীয় নেতা ত দূরের কথা, পার্টির ক্যাডাররা পর্যন্ত কিছু হলে নার্সিং হোমে ছুটত। তাদের দ্বিচারিতার শাস্তি জনগণ দিয়েছে-এবং আরো কড়া কিছু শাস্তি তারা পঞ্চায়েত নির্বাচন বা আগামী লোকসভা নির্বাচনেও পাবে। কিন্ত সিপিএমের বিরুদ্ধে এই নেগেটিভ আবহ বেশীদিন চলবে না। এর মধ্যেই মমতাকে স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে হবে।

মোদ্দা কথা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। নাটক বন্ধ করে, মমতার উচিত অবিলম্বে হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টের লোক এনে, হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ন বদলে দেওয়া।
এবার আসি শিক্ষা প্রসঙ্গে। প্রেসিডেন্সি, শিক্ষার উৎকর্ষতা এসব নিয়ে ফালতু সময় নষ্ট করছে রাজ্য সরকার। শিক্ষার উদ্দেশ্য ভবিষ্যতের জন্যে আরো উৎপাদনশীল কর্মক্ষম নাগরিক তৈরী-যারা হবে উৎপাদন ব্যবস্থার জন্যে আরো বেশী উপযুক্ত। এর জন্যে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার মান আরো বাড়ানো দরকার। স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার, কমিউনিকেটিভ ইংলিশ , একাঊন্টিং , টাইপিং, মার্কেটিং , ম্যানেজমেন্টের প্রাথমিক শিক্ষাগুলি দেওয়া দরকার। এগুলি আমেরিকাতে দেখছি ভীষন ভাবে আসছে স্কুলের শিক্ষায়। কারন সবাই পন্ডিত হবে না-সবাই বড় প্রযুক্তিবিদ বা ডাক্তার বা বিজ্ঞানী হবে না। কিন্ত এই উন্নত যন্ত্র সভ্যতায় পশ্চিম বঙ্গের ছেলে মেয়েদের যদি জায়গা করে নিতে হয়, তাদের এই লাইফ-সেভিং স্কিলগুলি বাড়াতেই হবে।
এসব নিয়ে কোন আলোচনা বা চিন্তা ভাবনা চোখে পড়ে না-শুধু প্রেসিডেন্সির মলমূত্র পরিস্কার করার এক্যাডেমিক আলোচনা করে এই রাজ্যের অধিকাংশ ছেলে মেয়েদের কিছু হবে না। মোদ্দা কথা শিক্ষা নিয়ে মমতাতন্ত্রের কোন নতুন চিন্তাধারা দেখতে পাচ্ছি না। সস্তার স্টান্টবাজি চলছে। একটা অমর্ত্য সেন তৈরী করার থেকে এই রাজ্যের অনেক বেশী দরকার দশ লক্ষ "স্কিলড শ্রমিক"।

এবার শিল্পের প্রসঙ্গে আসি। পার্থ চ্যাটার্জি পশ্চিম বঙ্গে শিল্প স্থাপনের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক এবং অমায়িক একজন ব্যক্তিত্ব। কোলকাতায় আমার শিল্পপতি বন্ধুদের কাছ থেকে যা শুনেছি -সেটা নিঃসন্দেহে আশার কথা যে পার্থবাবু সবার সাথে পশ্চিম বঙ্গের শিল্পের উন্নতির জন্যে সাহায্য চেয়েছেন। অনেকেই আগে পশ্চিম বঙ্গে বিনিয়োগ করতে চাইত না-এখন চাইছে। এটা খুব ভাল লক্ষণ চোখে পড়ছে। কিন্ত সমস্যা অন্যত্র।

কিছুদিন আগে নিউ ইয়ার্কে শ্যাম পিত্রোদার সাথে পশ্চিম বঙ্গের হাল হকিকত নিয়ে সামান্য আলাপের সুযোগ হয়েছিল। উনিত এখন মমতার মূল পরামর্শ দাতা। শ্যাম পশ্চিম বঙ্গের বর্তমান হাল নিয়ে খুবই চিন্তিত কারন এই রাজ্যটি মহারাষ্ট্র বা গুজরাতের থেকে ২০ বছর পিছিয়ে আছে শিল্পকাঠামোতে। আগামী পাঁচ বছর চলে যাবে শুধু শিল্প কাঠামোর উন্নতি করতে। সমস্যা হচ্ছে রাজ্য সরকার সেটা করবে কি করে? জমি অধিগ্রহণ এই সরকার করতে চাইছে না। কাঠামো না পেলে বড় শিল্প আসবে কি করে? শুধু আন্তরিকতার কারনে ত শিল্পপতিরা আসবে না।

এবার দেখা যাক আইন শৃঙ্খলার অবস্থা। এক্ষেত্রেও রাজ্য আছে আগের মতনই। আগে ছিল সিপিএমের গুন্ডামো-এখন তৃণমূলীদের গুন্ডামো এবং ঔদ্ধত্য অব্যহত। অবশ্য এই ব্যাপারে আমি মমতাকে দোষ দিতে চাইছি না। পশ্চিম বঙ্গের রাজনৈতিক সংর্ষের মূল কারন, মাথা পিছু জীবিকা নির্বাহের স্বল্প সংস্থান। বেকারত্ব এবং দারিদ্রর কারনে সীমিত সম্পদের ওপর অনেক লোকের চাপ-- এখানে যা প্রায়শ দুই দলের মারামারি, খুনোখুনির রূপ নিচ্ছে। এই রাজ্যে জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম না হলে, এটা চলতেই থাকবে।

আমি আশাবাদি। মমতার সদিচ্ছা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। কিন্ত তিনি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন না করলে, আদৌ কিছু করতে পারবেন কি না- সেই নিয়ে আমি সন্দিহান।

Wednesday, November 9, 2011

বিমান বসু ও নাবালক বাঙালী


বিমান বোসের একটি অর্ধসমাপ্ত শাড়ি সংক্রান্ত উপমা হইতে এই ঘোটলার শুরু।

প্রথমেই বলিয়া রাখি, লেখক হিসাবে আমি ব্যক্তি বিমান বোস এবং তাহার রাজনৈতিক লাইনের ঘোর বিরোধি লোক বলিয়াই বেশী পরিচিত।

কিন্ত বিমান বাবুর অর্ধসমাপ্ত শাড়ি সংক্রান্ত মন্তব্যে বাঙালী রাজনীতিবিদগণ, সুশীলজীবিগণ এবং নারীবাদিরা যে পরিমানে ক্ষুন্ন ও বিক্ষুব্ধ হইয়াছেন, তাহাতে আবার প্রমাণিত হইল, বাঙালী রাজনীতি এখনো সাবালক নহে। যৌনতা লইয়া, নেতা ও প্রজাদের দ্বিচারিতা ভারতখন্ডে চলিতেছে চলিবে। যৌনতা লইয়া দ্বিচারিতার মূল বাঙালী জীবনে এত দৃঢ়, বিমান বসুর অর্ধসমাপ্ত শাড়ি সংক্রান্ত বক্তব্য মিডিয়ার সার্চ লাইটের ন্যায় পাক খাইতে থাকে।

কি বলিয়াছেন বিমান বসু?
তৃণমূল এবং কংগ্রেস শাড়ির নীচে থাকিবে না ওপরে থাকিবে, তাহা তিনি জানেন না।

কংগ্রেস এবং তৃণমূলের রাজনৈতিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করিতে-ইহা হইতে উত্তম সাহিত্যিক উপমা আমি ভাবিতে পারিতেছি না। বিমান বসু যাহা বলিতে চাহিতেছেন তাহা এই- কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে যে কলহ বিবাদ আছে, তাহা তারা প্রকাশ্যে আনিবেন না ঢাকিয়া রাখিবেন-তাহা তিনি জানেন না। ইহা বুঝাইতে শাড়িতে নারীদেহ ঢাকা সর্বোত্তম সাহিত্যিক উপমা বলিয়াই বিবেচিত হইবে। বাঙালীর তাহার সাহিত্যরস না বুঝিয়া, অবুঝের ন্যায় বিমান বসুর ওপর যেভাবে রে রে করিয়া উঠিয়াছে, নারীবাদিরা যেভাবে ইহাতে নারীত্বের অপমান দেখিতেছেন, তাহাতে ভয় হইতেছে, বঙ্গভূমি হইতে সাহিত্যের পাঠ এবার না উঠাইতে হয়।

গতকাল ফক্স নিউজ চ্যানেলে দেখিলাম এক প্রখ্যাত আমেরিকান সেনেটর, এম এন বি সি নামক এক ডেমোক্রাটিক টিভি চ্যানেলের ওবামা প্রীতি বোঝাইতে, বলিলেন ওক্ত চ্যানেলটি ওবামার জন্যে পা ফাঁক করিয়া বসিয়া থাকে। কোন আমেরিকান মিডিয়া ইহাকে কুৎসিত বলিল না। কোন নারীবাদি ইহাকে নারীত্বের অপমান বলিয়া দাবি করে নাই-বিশেষত বক্তব্যটি একজন নারীই রাখিয়াছিলেন। কারন এটি ভাষার একটি বিশেষ ব্যবহার। বিমান বোস যা করিয়াছেন, তাহা ইহা অপেক্ষা অনেক সভ্য বক্তব্য। ইহাতে রসবোধ ছিল ষোল আনা। বাঙালী মিডিয়া সেই রস আস্বাদন না করিয়া যেভাবে বিমান বোসের "পেছন মারিতে" উদ্যত হইয়াছে, তাহাতে বঙ্গস্থানে বাকস্বাধীনতার কোরবানীতে চিন্তিয় রহিলাম।

Sunday, September 4, 2011

এবার মমতার হঠকারিতায় ভুক্তভোগী বাংলাদেশীরা


মমতা ব্যানার্জি এই মুহুর্তে ভারতের সব থেকে বড় জনপ্রিয় নেত্রী-আর কোন রাজনৈতিক নেতার পেছনে এত জনসমর্থন নেই। কিন্ত এই জনসমর্থনের ভিত্তি কি-এর জন্যে পশ্চিম বঙ্গ কি খেসারত দিয়েছে এবং ভারত বর্ষ কি কি দিতে চলেছে সেইসব অপ্রিয় প্রশ্ন প্রবল মিডিয়া জোয়ারে ভেসে গেছে।

সেই ফর্দ বাদ দিয়ে বর্তমানে আসা যাক। মঙ্গলবার মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফর শুরু হচ্ছে। বহুদিন থেকে ফেলে রাখা দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি নিয়ে সেখানে চুক্তি সাক্ষর করার কথা। এর মধ্যে তিস্তা এবং ফেনীর জল বন্টন চুক্তিও আছে। চুক্তির খসরা দীপুমনির কালকের বক্তব্য অনুযায়ী শেষ। অর্থাৎ দীর্ঘদিনের তিক্ততার আঁধার শেষ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক নতুন সূর্যের উদয় হতে পারত মঙ্গলবার।

আপাতত সেসব আশা সেগুড়ে বালি। কয়েক ঘন্টা আগে মমতা ঘোষনা করেছেন তিনি মনমোহনের সফর সঙ্গী হচ্ছেন না। মনমোহনের সাথে ভারতের আরো ৫ মুখ্যমন্ত্রী আসার কথা-কারন এই সব চুক্তির সাথে পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, মিজোরম ত্রিপুরা ইত্যাদি রাজ্যও জড়িত। তারা একমত না হলে মনমোহন চুক্তির বয়ান ঠিক করতে পারেন না-সেক্ষেত্রে পরবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস এই সব রাজ্যে বাজে ফল করতে পারে। এর মধ্যে আসাম নিয়ে চিন্তা নেই-ওটা কংগ্রেস শাসিত রাজ্য-তরুন গগৈ দিল্লীর ইয়েস ম্যান-সুতরাং সেখান থেকে বিরোধিতা আসার প্রশ্ন নেই। ত্রিপুরাতে বাম সরকার নীতিগত ভাবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর পক্ষে। বিরোধিতা সেখান থেকেও প্রত্যাশিত না। মমতাও যাবেন বলে ঠিক ছিল-প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারী, তিস্তার জলবন্টন চুক্তিটির বয়ানের জন্যে বেশ কিছু দিন কোলকাতায় ছিলেন। তাতে মমতার সায় ছিল। মমতা মঙ্গলবার যাচ্ছেন-এমনটা ঠিকই ছিল।

কয়েক ঘন্টার আগের খবর, মমতা চুক্তির বয়ানে অসম্মতি প্রকাশ করেছেন। তাকে যা বলা হয়েছিল, চুক্তি নাকি সেই মত হয় নি। স্টার আনন্দ খবর দিচ্ছে মমতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে সর্বাধিক ২৫,০০০ কিউসেক জল দেওয়ার কথা। সেখানে নাকি চুক্তি অনুযায়ী ৩০,০০-৪০,০০০ কিউসেক জল দিতে হতে পারে। আমার পাটিগণিত মিলিল না-তিস্তাতে যতদূর জানি ২৫,০০০ কিউসেক জলই থাকে না-গড় প্রবাহ ১২,০০০ কিউসেকের। সেখানে এই নাম্বারগুলো কে পেল, কোথা হইতে পেল জানি না। বাংলাদেশ বা ভারতের কোন মিডিয়ার কাছে চুক্তির কোন খসরা নেই! এ চুক্তি নিয়ে কোন দেশেই কোন পাবলিক ডিবেট হল না। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর দুই সচিব আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ঠিক হয়েছে এই চুক্তির বয়ান। দুই দেশের জনগণই অন্ধকারে।

এবার মমতা বেঁকে বসায়-মনে হচ্ছে গোটা সফর আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব দস্তানা এখন বিশ বাঁও জলে। মমতা জানিয়েছেন এই চুক্তি পশ্চিম বঙ্গের স্বার্থ বিরোধি। তাই তিনি যাবেন না। কেন স্বার্থ বিরোধি তার কোন ব্যখ্যা নেই। না গিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন! কি অদ্ভুত! যদি ব্যপারটার বিরোধিই তিনি হোন-মনমোহনকে জানালেই হল-তিনি মানছেন না। আবার খসড়া হোক। এই ধরনের নাটক কেন? আমি অবাক নই-আসলে এই ধরনের নাটক না করলে-মিডিয়াতে প্রমান হবে না তিনি দেশপ্রেমী রাজনীতিবিদ। মিডিয়া ম্যানুপুলেশনে মমতা ১০০ তে ১০০ পাবেন-এই ভাবেই তিনি আজ জননেত্রী।

এই ভদ্রমহিলা অবশ্য এমনই নাটক করেন। যেহেতু বাংলার মিডিয়া সম্পূর্ন মমতাময়ী-তার দেশপ্রেমের জন্যে সবাই দুহাত তুলে নাচবে। চারিদিকে মমত বন্দনায় ভরে উঠবে। এই লেখার জন্যে তৃণমূলি এবং দিদি বন্দনায় নিবেদিত প্রাণ ভাইদের গালি খেতে হবে আমাকে।
কিন্ত ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। এই জল বন্টন চুক্তিগুলি বাংলাদেশের ভীষন ভাবে দরকার। দীপুমনি সহ হাসিনা সরকার দীর্ঘদিন চেষ্টা করছেন, ভারতের সাথে এই বিবাদ্গুলি মিটিয়ে নিতে। সব কিছু যখন হয়ে গেছে, তখনই ইন্দ্রপতন ঘটালেন মমতা।

মমতা পশ্চিম বঙ্গের স্বার্থ অবশ্যই দেখবেন-কিন্ত বাংলাদেশের মতন প্রতিবেশীরা জলের অভাবে কিভাবে ভুগছেন, সেটা যদি না দেখেন-তাহলে বিশাল ভুল করছেন। প্রতিবেশীর বাড়িতে আগাছা জন্মালে, সেটা নিজের বাগানেও আসে। উনি নিশ্চয় জানেন ভারত বিরোধিতা হচ্ছে বাংলাদেশের মৌলবাদি শক্তি মূল বারুদ। আর সেই বারুদের মসলা আসে এই জল বন্টন চুক্তিগুলো অমীমাংসীত থাকায়।

ভারত বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখতে ব্যর্থ হয়েছে। জল বন্টন চুক্তি সহ বাকী যা কিছু বাংলাদেশীরা ভারতের কাছ থেকে সুবিচার আশা করে-সেটা হাসিনা সরকারের দীর্ঘ চেষ্টাতে প্রায় মিটতে চলেছে। বাংলাদেশের জন্যে মনমোহনের সফর এবং সেই সফরে এই জলচুক্তিগুলি সার্থক হওয়া জরুরী।
এটা কি মমতা বোঝেন?

মনে হয় না বোঝেন। তার কাছে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তাই শেষ এবং আসল কথা। এতদিন আমরা ভুগেছি। এবার মনে হচ্ছে বাংলাদেশীদের পালা।

এর মধ্যে তিনি যদি বোঝেন এই চুক্তির গুরুত্ব ত ভাল-নইলে এমন নাটক করে, বাংলাদেশের কাছে নিজেদের লজ্জা বাড়িয়ে লাভ নেই।

Sunday, August 14, 2011

বেয়াইনি কল সেন্টার? না বেকারদের পেটে লাথি?

বিপ্লব পাল

১৪ ই আগষ্ট, ২০১১

আনন্দবাজার এবং এদেশের সরকার সমান ভাবে দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন।

আগে আনন্দনাজারে প্রকাশিত খবরটি পড়ুন

রাজ্যে এই প্রথম হদিশ মিলল বেআইনি কল সেন্টারেরও। উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যারাকপুরে। টেলিকম দফতর হানা দিয়ে ওই কল সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, রাজ্যে বেআইনি ভাবে আরও কল সেন্টার চলছে। ওই ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে টেলিকম দফতরের ‘এনফোর্সমেন্ট রিসোর্স অ্যান্ড মনিটরিং (টার্ম) সেল।’ওই সেল-এর ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অতনু ঘোষ জানিয়েছেন, অনুমতি ছাড়া কল সেন্টার চালালে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। কারণ, নিয়মিত বিদেশে কথা বলার জন্য সরকারকে টাকা দিতে হয় কল সেন্টার চালানো সংস্থাকে। কিন্তু ব্যারাকপুরের ওই কল সেন্টার সংস্থাটি তা করছিল না।

তা ছাড়া, কল সেন্টার থেকে নিয়মিত বিদেশি গ্রাহকদের সঙ্গে কথা হয় ইন্টারনেট মারফত। এতে খরচ কম হয়। তার জন্য আলাদা করে ‘সময়’ কিনতে হয় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছ থেকে। এদের মধ্যে ভারতীয় সংস্থা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিদেশি সংস্থাও। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, এই ‘সময়’ কিনতে হয় কেবল ভারতীয় সংস্থার কাছ থেকেই। বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে ‘সময়’ কিনলে বিদেশে করা ফোন সংক্রান্ত নথি ভারত সরকারের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। অতনুবাবুর কথায়, “দেশের নিরাপত্তার জন্য এই ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।” যে সংস্থার কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে ব্যারাকপুরের ওই কল সেন্টারটি চালানো হচ্ছিল, সেই সংস্থাকেও সতর্ক করেছে টেলিকম দফতর। ব্যারাকপুরে এক যুবক তাঁর নিজের নামে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে কল সেন্টারটি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক মাস নিয়মিত দীর্ঘ সময় ধরে ওই যুবকের নামে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে দেখেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি কেন খোঁজখবর নেয়নি, তা জানতে চাওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা দানকারী সেই সংস্থার কাছ থেকে। টার্ম সেল-এর ডিরেক্টর মনীশ দাসের কথায়, “নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি সংস্থারই গ্রাহকদের উপরে নজর রাখার কথা এবং ইন্টারনেট অত্যধিক ব্যবহার হলে সেখানে হানা দেওয়ারও কথা। এ ক্ষেত্রে সে নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে।” রাজ্যে আর কোথাও এই ধরনের বেআইনি কল সেন্টার চলছে কি না, তা-ও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

খবর পড়ে আমি বিশেষ চিন্তিত এ রাজ্যের হাজার হাজার ছেলে মেয়েদের জন্যে, যারা ইন্টারনেটে কাজ করে উপায় করে এবং তাদের সবাইকেই ইহাহু মেন্সেঞ্জার বা স্কাইপ ব্যবহার করেই বিদেশী ক্লায়েন্টদের জন্যে কাজ করতে হয় ।

সরকারের এবং মিডিয়ার অজ্ঞতা এ ব্যাপারে আমাকে লজ্জা দিচ্ছে বলায় বাহুল্য!

[১] প্রথমত এই ইন্টারনেটের যুগে, আজকাল ফোনের থেকে ইণ্টারনেট মেসেঞ্জারে পৃথিবীর সবাই সবার সাথে কথা বলছে। সরকার যদি চান সেই কথাকে জানতে, তাহলে, তাদের প্রযুক্তি উন্নত করতে হবে। কিছু উদ্যোগী ছেলে মেয়ে যারা স্থানীয় চাকরি সৃষ্টী করছিল তাদের পেটে কেন লাথি মারবে সরকার এই ভ্রান্ত যুক্তি দেখিয়ে?

[২] পৃথিবীর সর্বত্র আজকাল স্কাইপ ব্যবহার করে সবাই আন্তর্জাতিক কল করে-আমি নিজেও আমেরিকা থেকে তাই করি। এতে আমেরিকার বৃহৎ কর্পরেশনগুলির বাণিজ্য বসে গেছে যারা এই ব্যবসা করত- স্কাইপের এর বিরুদ্ধে আমেরিকাতেও কর্পরেটগুলো সেনেটরদের ঘুঁষ খাইয়ে বিল আনার চেষ্টা করেছিল-কিন্ত টেকনিক্যাল কমিটি বাতিল করে দেয়। কারন এই ভাবে ইন্টারন্যাশানাল কল কাটকানো যায় না-আর ব্যবসার জন্যে তা উচিত ও না।

[৩] ধরা যার ভারতে এই আইন চালু হল যে ভি ও আই পি ফোন বা স্কাইপ বেয়াইনি। ভারতে প্রায় ৮ মিলিয়ান স্কাইপ ব্যবহারকারী আছে। সেসব ছেরে দিলাম। এই অনলাইন বিজন্সে মার্কেটে ভারতের সাথে রাশিয়া , আর্জেন্টিনা এবং ইস্ট ইউরোপের দেশগুলোর প্রচন্ড প্রতিযোগিতা। তারাত সবাই স্কাইপ ব্যবহার করে ব্যবসা করছে! তাহলে তাদের সাথে ভারতের ব্যবসায়িরা পারবে কি করে?

নিরাপত্তার প্রশ্ন শুনে বোঝা গেল, যে অফিসারটি এই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি আই টির ব্যাপারে নিরক্ষর। ভারতে যদি ২২ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারি থাকে, তাহলে তাদের সবাই কোন কোন ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে বিদেশে ফোন করতে পারেন। কথা বলতে পারেন। কি করে আটকাবে ভারত সরকার? গুগল, ইয়াহু সবাই এই প্রযুক্তি দেয়। এবং পৃথিবীর কোন দেশেই তাদের এই ভয়েস এপ্লিকেশন আটকায় না। শুধু ভারত যদি আটকায়, ভারতে ব্যবসা করার খরচ এত বেড়ে যাবে, এদেশের ছোট ছোট বিপিও ব্যবসা গুলো সব মরে যাবে।

ইন্টারনেট নিরাপত্তা আসলে ভাওতাবাজি। সেটা করতে অন্য প্রযুক্তি লাগে এবং বিদেশ থেকে কেনা যায়।

আসল কথা হচ্ছে বড় কোম্পানীগুলো পুলিশ, মিডিয়া এবং সরকারকে টাকা খাটিয়ে এই সব কল সেন্টারগুলোকে মারতে চাইছে যাতে তাদের পকেটে দু পয়সা আসে। এবং এই ভাবে তারা হাজার হাজার ছেলের জীবিকার পেটে কিল মারছে ।

সরকার যখন জানে এই রাজ্যে জীবিকা তৈরী করা আজকে একটা মুখ্য লক্ষ্য সেখানে এই ধরনেই বেয়াইনি রেড, রাজ্যের হাজার হাজার বেকার যুবকদের আরো বিপদে ফেলবে।

আমি এই ব্যাপারে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং শিল্প মন্ত্রী শ্রী পার্থ চ্যাটার্জির দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

আমি খুব পরিস্কার ভাবে লিখছি সরকারের ভুমিকা এই ব্যাপারে বৃহৎ কর্পরেশনের স্বার্থ দ্বারা চালিত এবং তা রাজ্যের জন্যে বিরাট ক্ষতি।