" কারণ, যাঁহাকে রাজ্য চালাইতে হয়, অর্থ সংস্থানের কথা ভাবিতে হয় তাঁহার পক্ষে বাস্তববাদী হওয়া ভিন্ন উপায় নাই। দুঃখের কথা, শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় চোখ বুজিয়া থাকিলেন। ‘পরিবর্তন’-এর হাওয়ায় ভর করিয়া তিনি পশ্চিমবঙ্গের মসনদে অধিষ্ঠিত হইয়াছেন। কিন্তু, তাহা নিতান্তই বাহ্যিক পরিবর্তন। মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন আসে নাই। একুশ শতকের বিশ্ব-অর্থনীতি কোন পথে হাঁটিতেছে, তাহা বুঝিতে তিনি ব্যর্থ। খুচরা বিক্রয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আসিলে আখেরে যে সাধারণ মানুষেরই লাভ, এই কথাটি তিনি বুঝিয়াও বুঝেন নাই।"
আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ লেখেন আমি জানি না। তাদের কাছে আমি শুধু কিছু তথ্য পেশ করতে চাইব
(১) ১৯৭৮ সালে আমেরিকান বাজারে , নিয়ন্ত্রনমূলক আইনের সংখ্যা ছিল ৮০,০০০/ বর্তমানে, সংখ্যাটি ২,৪০,০০০ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ বাজার সরকারকে টেকাতে, ধণতন্ত্রের তথা উদার অর্থনীতির পীঠস্থানে রেগুলেশনের সংখ্যা তিনগুন বাড়ানো হয়েছে তিন দশকে মধ্যে। এবং তার সবটায়, আরো স্বাস্থ্যপূর্ণ বাজারের জন্যে।
(২) যে রেগুলেশনগুলো বাড়ানো হয়েছে, তার মধ্যে সবথেকে বেশী যে আইনটি বারবার বলপ্রয়োগ করে চাপাতে হয়েছে-তার নাম এন্টিট্রাস্ট। অর্থাৎ দুটি প্রতিযোগী কোম্পানী কখনো একসাথে মিশে বা গোপনে দামের শলা করে বাজারে একাধিপত্য কায়েম রাখতে পারবে না। অর্থাৎ কোন কোম্পানী যাতে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তার জন্যে আমেরিকাতে সরকার সব থেকে বেশী আইন জারী রেখেছে।
(৩) এবার আসি আমেরিকাতে অর্গানাইজড রিটেলের প্রসঙ্গে। ওয়ালমার্টের জন্যে বহু স্থানীয় মুদিখানার দোকান উঠে গেছে। এমন কিছু দোকান যা ওয়ালমার্টের আগমনে উঠছে উঠছে করছে, তাদের সাথে আমি কথা বলে বুঝেছি ছোট ব্যবসায়ীদের কি যন্ত্রনা। ওশান সিটি যাওয়ার পথে রুট ৫০ এর ওপর ১৫০ বছরের পুরানো একটা দোকানে একবার বাটার আর স্থানীয় চকলেট কিনেছিলাম। সেইবারই মালিকিন আমাকে বলেছিল-এর পরের বার আর আমদের দেখতে পাবেন না-এখানে ওয়ালমার্ট এসে গেছে। কি অদ্ভুত। ২০১০ সালেই দেখেছি সেই দোকানে ঝাঁপ নেমে গেছে। এছাড়ার আরো অনেকের সাথে আমার কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে-নিজের চোখে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পিকেটীং দেখেছি ওয়ালমার্টের বিরুদ্ধে।
(৪) অনেকের ধারনা অর্গানাইজড রিটেল-মানে এই সব ঝকঝকে মল বানিয়ে -কি দারুন কেনাকাটার অভিজ্ঞতা দেবে! খুব ভুল ধারনা খাওয়াচ্ছে বাজার আনন্দ আর বাংলা মিডিয়া। অর্গানাইজড রিটেলের ক্ষেত্রে উৎপাদক পুরো দিশে হারা হয়ে যাবে। ওয়ালমার্টের উৎপাতে শুধু ব্যবসা বন্ধ হয় নি-স্থানীয় যেসব দুধ, দই ইত্যাদির উৎপাদন ছিল-তারাও ঝাঁপ টেনেছে। কারন ওয়ালমার্ট ভেন্ডরকে যে পয়সা দেয়, তাতে শুধু বড় বড় উৎপাদকরাই পারে সাপ্লাই দিতে। স্থানীয় অর্থনীতি ভেঙে যাবে-যা আমেরিকার বহু শহরে হয়েছে। এমন একটা টাউন দেখেছিলাম ভার্জিনিয়াতে- মাইনিং টাউন অক্সিডেন্ট। খুব কম লোকের বাস। তাও আগে শহরে বেশ কিছু দোকান ছিল-আশে পাশে কিছু শাক সব্জির উৎপাদন হত এককালে। ওয়ালমার্ট আসার পর সব দোকান বন্ধ। শুধু একপায়ে ওয়ালমার্ট দাঁড়িয়ে!
(৫) ওয়ালমার্ট আমেরিকান বাজাএর কোয়ালিটিও সাংঘাতিক কমিয়ে দিয়েছে। ওয়ালমার্টের যেকোন জিনিস যেমন সস্তা -ঠিক ততটাই বাজে। সেদিন ওয়ালমার্ট থেকে একটার সস্তার স্ক্রু ড্রাইভার কিনলাম-স্ক্রু খোলার বদলে, ড্রাইভারের মুন্ডীগেল ঘুরে। এত বাজে কোয়ালিটি ভারতেও দেখি নি। ওরা ভেন্ডরদের পয়সা কমাতে কমাতে এমন জায়গায় এনেছে, আর কোন কোয়ালিটি সাপ্লায়ার নেই ওয়ালমার্টে।
এন্টিট্রাস্ট আইন যদি ক্রেতাদের কথা ভেবে করা হয়ে থাকে অর্গানাইজড রিটেল বন্ধেও আইন দরকার। ভারতে খাবারের দাম যে হারে বাড়ছে-সেখানে খাবারের সাপ্লাই চেইন উন্নত না করে, মল বানানো দৃষ্টিকটুই শুধু না-সম্পূর্ন ভুল দিকে একটা দেশকে চালনা করা। আর সেই ভুল পথে চালনা করতে বাজার আনন্দের চেয়ে পারদর্শী আর কে আছে?
No comments:
Post a Comment