সম্প্রতি রতন টাটা বলেছেন গুজরাটে যে বিনিয়োগ করে না সে বোকা।
সিঙ্গুরে মমতার অতিবাম হাতের চড় থাপ্পর খেয়ে, উনি বিলক্ষন বুঝেছেন বাম-বাঙালীর শ্বশান বঙ্গ শিল্পের মরূভূমি। ধ্বংশের রাজনীতি বাঙালী জাতির ক্রমবর্ধমান দৈন্যদশার নিত্যসাথী। গুজরাটে ৮০ বিলিয়ান ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতির ওপর বসে মোদি ন্যানোর সাথে পোজ দিলেন-সেইদিন ই উলটোডাঙায় শিল্পরথের ভাঙাচাকার জন্যে "অন্যদের" দুষছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। শুধু একজন মুখ্যমন্ত্রী বা বিরোধি নেত্রীই বা কি করবেন-যখন দেখি মোদির সাফল্যে বাম-বাঙালীর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে-তাতে কি? গুজরাটে ধণ বৈষম্য ত অনেক বেশী। গরীব বড়লোকের মধ্য পার্থক্য বাড়ছে। ভাগ্যিস এরা বলে নি-তাতে কি-আমেরিকাতে ধণ বৈষম্য পশ্চিম বঙ্গের চেয়েও অনেক বেশী! তাই পশ্চিম বঙ্গ ভাল-আমেরিকা খারাপ। অথবা উত্তর কোরিয়াতে কোন বৈষম্যই নেই-সবাই আধবেলা খেয়ে থাকে-তাই তা ভারতের থেকেও ভাল-কারন সেখানে সাম্য প্রতিষ্ঠিত।
সন্দেহ নেই গরীব এবং ধণীর পার্থক্যে সমাজে রাজনৈতিক অস্থিরতা আসে এবং তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে কাম্যও নয়। শুধু ধণের জোরে, এক পরজীবি নিয়ন্ত্রক শ্রেনীর উদ্ভব হৌক সেটা অবশ্যই আমরা চাই না। কিন্ত এই 'সাম্য' টা কি সমাজ ব্যাবস্থার মৌলিক চাহিদা? সাম্যের ধারণা ত আজকের নয়। বিদুর যুধিষ্ঠিরকে বলেছিলেন -সেই নরপতিই শ্রেষ্ঠ যিনি সমাজ থেকে ধণ বৈষম্য কমাতে পারেন। কৃষ্ণভাস্যেও আমরা দেখি-যারা প্রয়োজনের অধিক ধণ সংগ্রহ করে, তাদের চোর বলা হয়েছে। কোরানে ধন সম্মত্তি দান করে সাদামাটা জীবনের উপদেশ সর্বত্র। কোরান বলছে বিত্তশীল ভোগবিলাসে ডোবে অজ্ঞ এবং বোকারা। এই সাম্যের ধারনা থেকেই প্রাচীন গ্রীসে স্টয়িক দর্শনের উৎপত্তি। ইউলিটারিয়ানরাও সামাজিক সাম্যে বিশ্বাস করেন। শুধু মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্টরা ত নয়-বিশ্বশুদ্ধ প্রায় সব দর্শনেই সাম্যের ধারনার জয়জয়াকার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-এই সামাজিক সাম্য, সামাজিক উন্নতির চেয়েও বেশী জরুরী? সামাজিক সাম্যকি এতই মৌলিক?
এখানেই আমি দ্বিমত পোষন করি। আমাদের জীবনের লক্ষ্য কি? আমি না আমাদের ভবিশ্যত প্রজন্ম? আমি কখনোই হতে পারি না-কারন 'আমি' মরণশীল। একমাত্র 'ভবিষ্যত প্রজন্মই" চিরন্তন। তাই আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে শিক্ষা, খাদ্য, সাস্থ্য, পরিবেশ, চাকরীর সুরক্ষা। সেটাই মৌলিক। প্রশ্ন হচ্ছে এই লক্ষ্য সাধনের পথে সাম্যের ভূমিকা। প্রতিটা ভবিষ্যত নাগরিকের অবশ্যই এই সুরক্ষাগুলি 'নুন্যতম' পাওয়া উচিত। যাতে তার জেনেটিক সারভাইভাল নিশ্চিত হয়। কে বেশী পাচ্ছে-কে কম পাচ্ছে-দেখার চেয়ে কত কম লোক দারিদ্র সীমার নীচে থাকে সেটাই প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিভাবে এবং কিপ্রকারে দ্রুত দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করা লোকেদের মধ্যবিত্ত শ্রেনীতে তোলা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সাম্যের নামে কমিনিউস্ট রাষ্ট্রের মতন সবাইকে আধপেটা খায়িয়ে, না খেতে দিতে পারলে জেলে পাঠিয়ে মেরে ফেলা নিশ্চয় আমরা চাই না। উন্নয়নের প্রাধমিক পর্বে অসাম্য আসবেই। কারন উন্নয়নের প্রথম শর্তই ধন বিনিয়োগ-আর ধনের ধর্মই অসাম্য। সুতরাং ধণ আসম্যকে এড়িয়ে উন্নয়ন সম্ভব না। চীনের উন্নয়ন ও সেই অসাম্যের পথেই এসেছে। তবে হ্যাঁ-কমিনিউস্টরা এই প্রসঙ্গে প্রায় "সাম্যবাদি স্ট্যালিনিস্ট" মডেলের কথা বলেন। শুধু ভুলে যাওয়া হয়-সেখানে মানুষকে পশুতের ক্রীতদাস করে, ২ কোটি লোককে মেরে-চূড়ান্ত মানব ধ্বংশলীলা সাঙ্গ করে-সেই উন্নয়ন হয়েছিল রাশিয়াতে। পিরামিড নিয়েও আমরা গর্ব করি-শুধু ভুলে যাওয়া হয়, ঐ ইমারত বানাতে হাজারে হাজারে ক্রীতদাস প্রান দিয়েছে। রাশিয়াতে রাষ্ট্র মানুষকে ক্রীতদাস বানিয়ে সাফল্যের পিরামিড তুলেছে-সাম্যবাদের সেই পিরামিড টেকে নি-সবাইকে ক্রীতদাস বানিয়ে বলতে পারি না, তোমরা সবাই সমান কারন তোমাদের সবার স্টাটাস আজ স্লেভ!
তাই বাম বাঙালীদের আজ আত্মসমীক্ষার ভীষন প্রয়োজন। তাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে-শ্বশানের সাম্য কাম্য না ধণের অসাম্যকে মেনে নিয়ে আমরা সুজলা সুফলা বঙ্গকে তৈরী করব। ধণের অসাম্য সাধারনত উন্নয়নশীল অবস্থাতেই বেশী থাকে-যা আজ গুজরাটে হচ্ছে। উন্নয়ন হয়ে গেলে, রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট আস্তে আস্তে কমতে থাকলে-ধণের প্রাদুর্ভাবও আস্তে আস্তে কমতে থাকে। বস্তুত আমেরিকাতে সমাজতান্ত্রিক ধারনাগুলির ভিত্তি ভারতের থেকে অনেক বেশী দৃড়। এখানে শ্রমিকের অধিকার বা জনসাধারনের প্রতি রাষ্ট্রের প্রোটেকশন অনেক বেশী-জনগণ আরো বেশী তা চাইছে-তাই তারা ওবামাকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু বন্ধুগণ উণ্ণয়ন না হলে ত এসব কিছুই সম্ভব না! রাষ্ট্র টাকা পাবে কোথা থেকে? তাছাড়া নাই নাই করেও গুজরাটে ভূমিহীন শ্রমজীবিরা বছরে ২০০ দিন কাজ পায়-শ্বশান বঙ্গে পাচ্ছে ২০ দিন। তাও মুজুরী কম! এরে কই শ্বশানবঙ্গের সাম্য!
বামবাঙালী যতদিন না তাদের আত্মবিশ্লেষনে সমর্থ হবে-আমাদের অধোগতি ঠেকায় কার বাপের সাধ্য?
Wednesday, January 14, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
badda bhat bokchhis calpol. sei jana katha bolar abhyes gelo. esab gyan shune ki korbo.. mulik kono chinta bhabna nei keno?
ReplyDelete