
গত দুই সপ্তাহে পশ্চিম বঙ্গের কলেজ গুলোর একটাই খবর- তৃণমুল বনাম সিপিএমের কুস্তির আখরায় জমি দখলের লড়াই। আগামী দুই বছর আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত বেশ ঝরঝরে -সত্তরের দশকের পদধ্বনি।
বাংলার ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য উজ্জ্বল-এ কথা ছোটবেলা শুনে আসছি। কেন উজ্জ্বল বা ঐতিহ্য কথাটা ব্যাবহার করা হবে-তার আমি যথাযত কোন কারন খুঁজে পাই নি। যদি ধরে নিই বুদ্ধদেব বা বিমান বা মমতা আমাদের 'গৌরবময় ছাত্র আন্দোলনের' প্রোডাক্ট-খুব পরিস্কার ভাবেই বলা দরকার, এদের অপদার্থতার জন্যেই আজ পশ্চিম বঙ্গ সব কিছুতেই শেষের দিক থেকে প্রথম। এর জন্যে সংখ্যাতত্ত্ব নিস্প্রোজন। দুদিন দিল্লীর গুঁরগাঁও বা ব্যাঙ্গালোরের হাইটেল টেক পার্কগুলো ঘুরলেই বোঝা যাবে পশ্চিম বঙ্গ এখন শ্বশান বঙ্গ। কৃষির কথা বলছেন? আমি ১৯৮০ সালে দেখেছি একজন ভূমিহীন কৃষক তখন ২০ টাকা রোজ পেত-এখন পাচ্ছে ৫০টাকা। তাও বছরে ২০ দিন। আর গুজরাট বা মহারাষ্ট্রে এইসব ডেইলি লেবাররা কাজ পায় ৯০-১০০ দিন এবং ১০০/১২০টাকা রোজে। মোদ্দা কথায় পশ্চিম বঙ্গ একটি ভীষন রকমের পিছিয়ে পড়া রাজ্য। শিক্ষা, শিল্প, বিদ্যুত, কৃষি-সব দিক দিয়ে।
ছাত্র আন্দোলনের ফাইনাল প্রোডাক্ট যদি বুদ্ধ বা মমতা হয়--আমাদের লাভটা কি হল? বরং কর্নাটক বা তামিলনাড়ুতে দেখুন। এস এম কৃষ্ণা ব্যাঙ্গালোরের রূপকার-কৃষ্ণা আমেরিকাতে পেশাদারি ডিগ্রী পাশ করে, দেশে এসে রাজনীতি করেছেন। ফলে ব্যাঙ্গালোরকে দেশের মধ্যে এগিয়ে দিতে পেরেছেন। আফগানিস্থানে আমেরিকা প্রস্বাব করলে, কর্নাটকের চাকা বন্ধ করেন নি। খুবই ফোকাসড থেকেছেন ব্যাঙ্গালোরের উন্নতির প্রশ্নে। যেসব ছাত্র কমরেডরা বিগ্রেডে আজ ডি ওয়াই এফ আই এর হয়ে সাম্রাজ্যবাদি শ্লোগান দিচ্ছে, কালকে তারাই পেটের তাড়নায় ব্যঙ্গালোর বা হায়দ্রাবাদে যাচ্ছে! তাই প্রশ্নটা আমি বারবার করছি-পশ্চিম বঙ্গের গৌরবময় ছাত্র আন্দোলনের ফলটা কি? শুন্য না নেগেটিভ?
এর থেকে কি ভাল কোন সাহিত্যিক বা দার্শনিক বা রাজনৈতিক পন্ডিত বেড়িয়েছে? প্রথমে রাজনীতিতেই আসি। বাঙালীদের মধ্যে যারা কমিনিউমের চর্চা করেন তারা কি আদৌ মার্ক্স বোঝেন? আমার নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি-টপ টু বটম কেও মার্ক্সবাদের ম ও বোঝেন না। বুঝলে এদ্দিনে লেনিনবাদের শ্রেফ ধাপ্পাবাজিগুলো অনায়াসের ধরতে পারতেন। ১৯১০ সাল থেকে লেনিনবাদের সমালোচনা রাজনীতি বিজ্ঞানীরা করেছেন-এবং ১৯৩০ সালের মধ্যে এটা বিশেষভাবে গবেষনা মহলে গ্রহনযোগ্য হয় যে লেনিন মার্ক্সবাদ বুঝতেন না-এবং তিনি নিজের ফ্যাসিস্ট তত্ত্বকে মার্ক্সের নতুন অবতার হিসাবে চালিয়ে ভ্যাঙ্গার্ড পার্টির দৈত্য- কমিনিউজম নামক স্বৈরাচারী বস্তুটি তৈরী করেছিলেন। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের ওপর বাংলায় লেখা একটিও আন্তর্জাতিক মানের বই আছে যা মৌলিকত্ব দাবি করতে পারে? যেসব বই আছে সেগুলো সব লিফলেট-কোম সিরিয়াস বিশ্লেষন ধর্মী কিছু না। যেগুলোতে বিশ্লেষনের ভাব আছে, আদের অধিকাংশরই দর্শন শাস্ত্রে প্রাথমিক জ্ঞান নেই। শ্রেফ প্রপাগান্ডা জোক। আর বাংলা সাহিত্যের কথা না বলাই ভাল। আন্তর্জাতিক মানের সাহিত্যে জীবনানন্দই বাংলার শেষ মোহিকান্ত। বাংলা কবিতা যাও বা কিছু হয়-উপন্যাস আর ছোটগল্পের করুন হাল।
তাহলে ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা অশ্বডিম্ব ছাড়া আর কি পেলাম?
আমার গোটা শিক্ষাজীবন কেটেছে আই আই টিতে-সেখানেও অরাজনৈতিক ছাত্র ইউনিয়ান (জিমখানা) আছে। ছাত্রদের দাবি নিয়ে আমরাও আন্দোলন করেছি। কিন্ত আমেরিকা কোথায় হাগুমুতু করছে, তা পরিস্কার করার দাবিতে কোন সময় নষ্ট করি নি।
আমি একথা বলছি না, ছাত্রদের বৃহত্তর রাজনীতি সচেতন হওয়ার দরকার নেই। কিন্ত সেটার জন্যে যদি, ছাত্ররাজনীতি বড় দলগুলির পুতুল নাচের স্টেজ ওয়ার্ক হয়ে ওঠে, আই আই টি আই আই এমের ফর্মাটেই ছাত্র রাজনীতি হওয়া উচিত। অর্থাৎ দাদাদিদিদের কব্জিমুক্ত হয়ে, ছাত্র ছাত্রীরা সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবেই নিজেদের কলেজ চালাক।
No comments:
Post a Comment