As human beings, our greatness lies not so much in being able to remake the world - that is the myth of the atomic age - as in being able to remake ourselves. -Mahatma Gandhi
২২ শে ডিসেম্বর, ১৯৮৯। রুমানিয়ার কমিনিউস্ট রাজা নিকোলাস চেসেস্কু, লাখ খানেক জনগণের তাড়া খেয়ে বুদাপেস্টের রাজপ্রাসাদ থেকে হেলিকাপ্টারে পালাচ্ছেন। শেষ রক্ষা হয় নি। মিলিটারি প্লেন, কয়েক মিনিটের মধ্যেই হেলিকপ্টার ইন্টারসেপ্ট করে। ২৫ শে ডিশেম্বর ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে ঝঁজরা করে দেওয়া হল চেসেস্কু এবং তার স্ত্রী এলেনাকে। শুধু ২০ থেকে ২১ শে ডিসেম্বর, সে দেশের পুলিশ প্রায় দু হাজার গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষকে খুন করে। চেসেস্কুর ২৫ বছরে রাজত্বকালে সিক্রেট পুলিশের হাতেই মারা গেছে ১ লাখের বেশী লোক। ফলে ২৫ বছরের অত্যাচার, খুন দমন এবং নিপীড়নের শাস্তি স্বরূপ ২৩শে ডিসেম্বর, এক বিশেষ জনআদালত চেসেস্কুকে মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা দেয়। ফায়ারিং স্কোয়াডে কে গুলি চালাবে, তার জন্যে ১০,০০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এগিয়ে আসে-চেসেস্কুর ওপর রুমানিয়ান জনগণের রাগ ছিল এতটাই। ভাগ্যের কি করুণ পরিহাস, ওই সপ্তাহের পিপল ডেমোক্রাসিতে ( ভারতের সিপিএমের মুখপাত্র) সীতারাম ইয়েচুরী সদ্য রুমানিয়া থেকে ফিরে, লিখেছেন মহান কমিনিউস্ট নেতা চেসেস্কুর সংগ্রামী জীবন কাহিনী ( এবং আমার মনে আছে, তা বাংলায় গণশক্তিতেও প্রকাশিত হয়)।
এই মহান কমিনিউস্ট নেতা নিজে থাকতেন এক লক্ষ স্কোয়ার ফুটের বিশাল প্রাসাদে। কিন্ত প্রজাবৃন্দকে প্রবল ঠান্ডার মধ্যেও হিটার না চালিয়ে বাঁচতে হত।রুমানিয়াতে বিদ্যুতের উৎপাদন যথেষ্টই ছিল-কিন্ত তা বেচে দেওয়া হত বিদেশে যাতে চেসেস্কু রাজপরিবারের বৈবভ এবং ব্যাঙ্ক একাউন্ট বাড়তে থাকে রুমানিয়ায় কৃষিজ উৎপাদন ছিল বেশ বেশী-কিন্ত তাও আধপেটা খেয়ে থাকত সেই দেশের জনগন, কারন মহান সমাজতান্ত্রিক নেতা আন্তর্জাতিক কালোবাজারে খাদ্য বেচে প্রিয়তমা স্ত্রী বা মিস্ট্রেসের জন্যে গহনা কিনতেন। নতুন নতুন প্রাসাদ উপহার দিতেন তার রক্ষিতাদের।
পশ্চিম বঙ্গে যেমন মানুষের জীবনের এবং সমাজের প্রতিটা পদক্ষেপে পার্টির কতৃত্ব এবং কড়া নজর-রুমানিয়াতেও ছিল তাই। মজার ব্যাপার হল, এই চেসেস্কুই এক সময় ফ্যাসিবাদ বিরোধি ছাত্র আন্দলোনের নেতা ছিলেন। যখন ক্ষমতাই আসেন তখন বেশ জনপ্রিয় যুবনেতা চেসেস্কু। ঠিক আমাদের বর্তমান সিপিএম নেতাদের মতন-এরাও ছাত্রে অবস্থায় কংগ্রেসের অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে ষাঠ এবং সত্তরের দশকে অনেক আন্দোলন করেছেন। আর আজ ভারত বর্ষে শুধু একটি রাজ্যে দেশের সংবিধান না, পার্টির সংবিধান মেনে মানুষকে চলতে হয়। একটি ফ্যাসিস্ট শাসককুল তাদের পোষা কুকুর ছানাগুলোকে নিয়ে, কারারক্ষীদের মতন পাহারা দিচ্ছে। স্বভূমে এই ভাবেই পরাধীন আমাদের রাজ্যের লোকেরা।
যাইহৌক আবার চেসেস্কুতেই ফিরে আসি। ২২ ডিসেম্বর ছেড়ে পালানোর আগে, ২১শে ডিসেম্বর ও মনে হয় নি চেসেস্কুর পতন হবে। বেলগ্রেডের রেড স্কোয়ারে বিক্ষোভকারিদের বিরুদ্ধে গুলি চালিয়ে, তাদের হটিয়ে, কমিনিউস্ট পার্টি ক্যাডার নামিয়ে বিরাট জনসভা করে চেসেস্কুর
সমর্থনে- টিভিতে তাই দেখানো হয়। তখনো গোটা বিশ্ব বুঝতে পারে নি কমিনিউস্টদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ কোথায় পৌঁছেছে। বহিঃবিশ্বত দূরের কথা চেসেস্কু নিজেও বোঝেন নি। নইলে ২১ তারিখেই দেশ ছেড়ে পালাতেন। কিন্ত কমিনিউস্টরা মানুষকে বলপূর্বক দাবিয়ে রেখে, বন্দুকের নলের সামনে নিজেদের সমর্থনে লোক নামিয়ে, ভাবে লোকে লাল ঝান্ডা জিন্দাবাদ বলতে বাধ্য হচ্ছে মানে, তাদের গদির হারানোর ভয় নেই!
ডিয়ায়াল উইথ রিয়ালিটি। কমিনিউস্টরা সর্বত্র এর জন্যেই বিখ্যাত-পশ্চিম বঙ্গে তাদের অন্তিম যবনিকাগুলোই বা বাদ যাবে কেন?
কাল খেজুরিতে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্ব, যেভাবে সিপিএমের ২০ট পার্টি অফিস পোড়ানো হয়েছে এবং সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি সার্চ করে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তাতে আমার প্রথমেই চেসেস্কুর শেষ দিনের কথা মনে পড়ল। খেজুরিতেও অস্ত্রবাজ পার্টির গুন্ডাগুলোকে ধরিয়ে দিয়েছে, অতীতে লাল ঝান্ডা তুলে নিতে বাধ্য হওয়া নির্যাতিত জনগণ। ২১ শে ডিসেম্বর চেসেস্কু যে লোকগুলিকে বন্দুকের নল দিয়ে নিজের সমর্থনে নামিয়েছিলেন, ২২ তারিখে পার্টির ভয় থেকে মুক্ত হয়ে, তারাই তাকে ধাওয়া করে। তৃণমুলের এই বিজয়ে, নির্যাতিত্ জনগণ বুঝেছে, সিপিএমকে আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ফলে আরাম্ বাগ, খেজুরী, কেশপুর-সর্বত্র যেখানে হার্মাদ বাহিনীর একচেটিয়া রাজত্ব চলত-আজকে সেসব জায়গার নির্যাতিত জনগন সিপিএমের গুন্ডাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
সিপিএমের বিরুদ্ধে যেভাবে জনরোষ ফুঁসলে উঠেছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে ২০১১ সালের আগেই নির্বাচন হয়ে যাবে। আগামী দুই বছর সিপিএমের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হবে না। ইচ্ছা থাকলেও না। এমন অবস্থাতে বুদ্ধদেব বাবু, সরকার ভেঙে দিলে রাজ্য এবং সিপিএম পার্টির আসু মঙ্গল। নইলে প্রতিটি লোকাল থেকে উচ্চ স্তরের নেতাদের চেসেস্কু বানিয়ে ছাড়বে জনগণ। বত্রিশ বছর এই ভাবে মানুষকে নিস্পেষন করার পর, জনগণের এই প্রতিক্রিয়া স্বতস্ফুর্ত।
কে জানে ভবিষ্যতের ইতিহাস হয়ত এটাকেই জুন বিপ্লব বলবে ।
Wednesday, June 10, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment