Sunday, June 14, 2009

সিপিএম এবং রাজনৈতিক হিংসা


ইদানিং তৃণমুলের হাতে মার খেয়ে সিপিএম হিংসা হিংসা ফ্যাসিবাদ ইত্যাদি বলে চিৎকার করছে--

সিপিএমের আইডোলজি ত গান্ধীবাদি না-লেনিন স্টালিন সবাই হিংসাকে কাজে লাহিয়েই ক্ষমতাই এসেছেন-কোন গণতান্ত্রিক রায় তাদের পক্ষে ছিল না।
হিংসা ব্যাবহার করে মানুষ খুন করে ক্ষমতা দখলের নাম কমিনিউস্ট বিপ্লব। কমিনিউস্টরা তা অস্বীকারও করে না।

মোদ্দা কথা সিপিএমের আইডিওজ়িতে হিংসা আপাংত্বেয় না।

যারা হিংসাত্মক কাজ করে-তারা সব সময় হিংসার সপক্ষে সাফাই দেওয়ার চেস্টা করে। লেনিন লোক খুন করে, সেটাকে বলশেভিক বিপ্লব বলে চালিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। হিংসা, তীব্র হিংসার মাধ্যমে জনগনকে মারধোর করে, লেনিন ক্ষমতা দখল করেন। কারন নির্বাচনে তিনি হেরে ছিলেন। সেটাকে সিপিএম সমর্থন করে। অর্থাৎ গণতন্ত্রকে গলা টিপে খুন করাতে সিপিএমের কোন আপত্তি নেই। কারন সেটাই লেনিনবাদ।

তৃণমূলও হিংসার পক্ষে সাফাই গাইতে বলছে সিপিএমের গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচতে এটা আত্মরক্ষা। হার্মাদ বাহিনীর হাত থেকে তারা নানান গ্রাম এবং লোকালয় মুক্ত করছে। লেনিনের রেড টেটর এর থেকেও ভয়ংকর ছিল-তিনি অবাধ্য কৃষক এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দীদের রাশিয়ার ওই প্রবল ঠান্ডায় নগ্ন করিয়ে দাঁড়িয়ে রেখে মারতেন। সিপিএম কোনদিন তার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেনি-কারন তাহা বলশেভিক বিপ্লব।

অর্থাৎ সব ধরনের কমিনিউস্ট হিংসা বিপ্লব , আর তার বিরুদ্ধে নিপীড়িতদের জনঅভ্যুত্থান হচ্ছে প্রতিবিপ্লব!

বাস্তব হচ্ছে হিংসা হিংসাই-যা গান্ধী বলতেন। তার কোন জাস্টিফিকেশন চলে না। হিংসা মানুষের আদিম প্রবৃত্তি-আত্মরক্ষা খাতে ছাড়া আর কোন কাজেই সমর্থন যোগ্য না।

প্রশ্ন হচ্ছে সিপিএম যত দিন না লেনিনবাদ না ছাড়বে-তত দিন হিংসার বিরুদ্ধে বলার কি মরাল রাইট আছে? লেনিনবাদ মানেই ত হিংসার পথে ক্ষমতা দখল। তাহলে, সিপিএমকে তার বিরোধি পার্টি মারধোর করলে, তারা কান্নাকাটি করছে কেন? তাদের আদর্শ, লেনিনবাদই বলছে বিপরীত আদর্শের লোকদের পেটানো এবং খুনোখুনি হারাম না। তাহলে সিপিএমের নেতাদের পেটানো কেন বাজে কাজ? সিপিএমের আদর্শেই তা সিদ্ধ।

একটা দল হিংসার আদর্শকে বক্ষে বহন করে, শতাব্দীর কুখ্যাত দুই খুনী ( লেনিন এবং স্ট্যালিন) কে পূজো করে, কখনোই বলতে পারে না লোকেরা আমার বিরুদ্ধে হিংস্র হচ্ছে কেন! হিংসার পথে হিংসারই জন্ম হয়। যার জন্যে কমিনিউস্ট রাষ্ট্রগুলি মানব সভ্যতাকে নরমেধ যজ্ঞ আর ভয়ঙ্কর সব মিশাইল ছাড়া কিছুই দিতে পারে নি।

তাই আসুন আমরা সিপিএম নেতাদের জিজ্ঞেস করি। মশাই কাঁদছেন কেন? আপনারাইত হিংসার পলিটিক্যাল স্যাংশান দিয়েছেন।

অন্যের মায়ের আঁচল যখন খালি হয়, তখন সেটা বিপ্লব। আর নিজেদের ঘরে হিংসার আঁচ এলে সেটা প্রতিবিপ্লব।

কম্যুনিউস্টদের তুলনা এই বিশ্বে একমাত্র তারা নিজেরাই!

Saturday, June 13, 2009

ছাত্র রাজনীতি না পার্টির সাপ্লাই লাইন?


গত দুই সপ্তাহে পশ্চিম বঙ্গের কলেজ গুলোর একটাই খবর- তৃণমুল বনাম সিপিএমের কুস্তির আখরায় জমি দখলের লড়াই। আগামী দুই বছর আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত বেশ ঝরঝরে -সত্তরের দশকের পদধ্বনি।

বাংলার ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য উজ্জ্বল-এ কথা ছোটবেলা শুনে আসছি। কেন উজ্জ্বল বা ঐতিহ্য কথাটা ব্যাবহার করা হবে-তার আমি যথাযত কোন কারন খুঁজে পাই নি। যদি ধরে নিই বুদ্ধদেব বা বিমান বা মমতা আমাদের 'গৌরবময় ছাত্র আন্দোলনের' প্রোডাক্ট-খুব পরিস্কার ভাবেই বলা দরকার, এদের অপদার্থতার জন্যেই আজ পশ্চিম বঙ্গ সব কিছুতেই শেষের দিক থেকে প্রথম। এর জন্যে সংখ্যাতত্ত্ব নিস্প্রোজন। দুদিন দিল্লীর গুঁরগাঁও বা ব্যাঙ্গালোরের হাইটেল টেক পার্কগুলো ঘুরলেই বোঝা যাবে পশ্চিম বঙ্গ এখন শ্বশান বঙ্গ। কৃষির কথা বলছেন? আমি ১৯৮০ সালে দেখেছি একজন ভূমিহীন কৃষক তখন ২০ টাকা রোজ পেত-এখন পাচ্ছে ৫০টাকা। তাও বছরে ২০ দিন। আর গুজরাট বা মহারাষ্ট্রে এইসব ডেইলি লেবাররা কাজ পায় ৯০-১০০ দিন এবং ১০০/১২০টাকা রোজে। মোদ্দা কথায় পশ্চিম বঙ্গ একটি ভীষন রকমের পিছিয়ে পড়া রাজ্য। শিক্ষা, শিল্প, বিদ্যুত, কৃষি-সব দিক দিয়ে।

ছাত্র আন্দোলনের ফাইনাল প্রোডাক্ট যদি বুদ্ধ বা মমতা হয়--আমাদের লাভটা কি হল? বরং কর্নাটক বা তামিলনাড়ুতে দেখুন। এস এম কৃষ্ণা ব্যাঙ্গালোরের রূপকার-কৃষ্ণা আমেরিকাতে পেশাদারি ডিগ্রী পাশ করে, দেশে এসে রাজনীতি করেছেন। ফলে ব্যাঙ্গালোরকে দেশের মধ্যে এগিয়ে দিতে পেরেছেন। আফগানিস্থানে আমেরিকা প্রস্বাব করলে, কর্নাটকের চাকা বন্ধ করেন নি। খুবই ফোকাসড থেকেছেন ব্যাঙ্গালোরের উন্নতির প্রশ্নে। যেসব ছাত্র কমরেডরা বিগ্রেডে আজ ডি ওয়াই এফ আই এর হয়ে সাম্রাজ্যবাদি শ্লোগান দিচ্ছে, কালকে তারাই পেটের তাড়নায় ব্যঙ্গালোর বা হায়দ্রাবাদে যাচ্ছে! তাই প্রশ্নটা আমি বারবার করছি-পশ্চিম বঙ্গের গৌরবময় ছাত্র আন্দোলনের ফলটা কি? শুন্য না নেগেটিভ?

এর থেকে কি ভাল কোন সাহিত্যিক বা দার্শনিক বা রাজনৈতিক পন্ডিত বেড়িয়েছে? প্রথমে রাজনীতিতেই আসি। বাঙালীদের মধ্যে যারা কমিনিউমের চর্চা করেন তারা কি আদৌ মার্ক্স বোঝেন? আমার নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি-টপ টু বটম কেও মার্ক্সবাদের ম ও বোঝেন না। বুঝলে এদ্দিনে লেনিনবাদের শ্রেফ ধাপ্পাবাজিগুলো অনায়াসের ধরতে পারতেন। ১৯১০ সাল থেকে লেনিনবাদের সমালোচনা রাজনীতি বিজ্ঞানীরা করেছেন-এবং ১৯৩০ সালের মধ্যে এটা বিশেষভাবে গবেষনা মহলে গ্রহনযোগ্য হয় যে লেনিন মার্ক্সবাদ বুঝতেন না-এবং তিনি নিজের ফ্যাসিস্ট তত্ত্বকে মার্ক্সের নতুন অবতার হিসাবে চালিয়ে ভ্যাঙ্গার্ড পার্টির দৈত্য- কমিনিউজম নামক স্বৈরাচারী বস্তুটি তৈরী করেছিলেন। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের ওপর বাংলায় লেখা একটিও আন্তর্জাতিক মানের বই আছে যা মৌলিকত্ব দাবি করতে পারে? যেসব বই আছে সেগুলো সব লিফলেট-কোম সিরিয়াস বিশ্লেষন ধর্মী কিছু না। যেগুলোতে বিশ্লেষনের ভাব আছে, আদের অধিকাংশরই দর্শন শাস্ত্রে প্রাথমিক জ্ঞান নেই। শ্রেফ প্রপাগান্ডা জোক। আর বাংলা সাহিত্যের কথা না বলাই ভাল। আন্তর্জাতিক মানের সাহিত্যে জীবনানন্দই বাংলার শেষ মোহিকান্ত। বাংলা কবিতা যাও বা কিছু হয়-উপন্যাস আর ছোটগল্পের করুন হাল।

তাহলে ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা অশ্বডিম্ব ছাড়া আর কি পেলাম?

আমার গোটা শিক্ষাজীবন কেটেছে আই আই টিতে-সেখানেও অরাজনৈতিক ছাত্র ইউনিয়ান (জিমখানা) আছে। ছাত্রদের দাবি নিয়ে আমরাও আন্দোলন করেছি। কিন্ত আমেরিকা কোথায় হাগুমুতু করছে, তা পরিস্কার করার দাবিতে কোন সময় নষ্ট করি নি।
আমি একথা বলছি না, ছাত্রদের বৃহত্তর রাজনীতি সচেতন হওয়ার দরকার নেই। কিন্ত সেটার জন্যে যদি, ছাত্ররাজনীতি বড় দলগুলির পুতুল নাচের স্টেজ ওয়ার্ক হয়ে ওঠে, আই আই টি আই আই এমের ফর্মাটেই ছাত্র রাজনীতি হওয়া উচিত। অর্থাৎ দাদাদিদিদের কব্জিমুক্ত হয়ে, ছাত্র ছাত্রীরা সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবেই নিজেদের কলেজ চালাক।

Wednesday, June 10, 2009

রুমানিয়ার চেসেস্কুর মতন অবস্থা হবে বাংলার কমিনিউস্টদের

১৯৮৯ সালের ২১শে ডিসেম্বর-হেলিকপ্টারে পালাচ্ছেন চেসেস্কু
As human beings, our greatness lies not so much in being able to remake the world - that is the myth of the atomic age - as in being able to remake ourselves. -Mahatma Gandhi

২২ শে ডিসেম্বর, ১৯৮৯। রুমানিয়ার কমিনিউস্ট রাজা নিকোলাস চেসেস্কু, লাখ খানেক জনগণের তাড়া খেয়ে বুদাপেস্টের রাজপ্রাসাদ থেকে হেলিকাপ্টারে পালাচ্ছেন। শেষ রক্ষা হয় নি। মিলিটারি প্লেন, কয়েক মিনিটের মধ্যেই হেলিকপ্টার ইন্টারসেপ্ট করে। ২৫ শে ডিশেম্বর ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে ঝঁজরা করে দেওয়া হল চেসেস্কু এবং তার স্ত্রী এলেনাকে। শুধু ২০ থেকে ২১ শে ডিসেম্বর, সে দেশের পুলিশ প্রায় দু হাজার গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষকে খুন করে। চেসেস্কুর ২৫ বছরে রাজত্বকালে সিক্রেট পুলিশের হাতেই মারা গেছে ১ লাখের বেশী লোক। ফলে ২৫ বছরের অত্যাচার, খুন দমন এবং নিপীড়নের শাস্তি স্বরূপ ২৩শে ডিসেম্বর, এক বিশেষ জনআদালত চেসেস্কুকে মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা দেয়। ফায়ারিং স্কোয়াডে কে গুলি চালাবে, তার জন্যে ১০,০০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এগিয়ে আসে-চেসেস্কুর ওপর রুমানিয়ান জনগণের রাগ ছিল এতটাই। ভাগ্যের কি করুণ পরিহাস, ওই সপ্তাহের পিপল ডেমোক্রাসিতে ( ভারতের সিপিএমের মুখপাত্র) সীতারাম ইয়েচুরী সদ্য রুমানিয়া থেকে ফিরে, লিখেছেন মহান কমিনিউস্ট নেতা চেসেস্কুর সংগ্রামী জীবন কাহিনী ( এবং আমার মনে আছে, তা বাংলায় গণশক্তিতেও প্রকাশিত হয়)।
এই মহান কমিনিউস্ট নেতা নিজে থাকতেন এক লক্ষ স্কোয়ার ফুটের বিশাল প্রাসাদে। কিন্ত প্রজাবৃন্দকে প্রবল ঠান্ডার মধ্যেও হিটার না চালিয়ে বাঁচতে হত।
রুমানিয়াতে বিদ্যুতের উৎপাদন যথেষ্টই ছিল-কিন্ত তা বেচে দেওয়া হত বিদেশে যাতে চেসেস্কু রাজপরিবারের বৈবভ এবং ব্যাঙ্ক একাউন্ট বাড়তে থাকে রুমানিয়ায় কৃষিজ উৎপাদন ছিল বেশ বেশী-কিন্ত তাও আধপেটা খেয়ে থাকত সেই দেশের জনগন, কারন মহান সমাজতান্ত্রিক নেতা আন্তর্জাতিক কালোবাজারে খাদ্য বেচে প্রিয়তমা স্ত্রী বা মিস্ট্রেসের জন্যে গহনা কিনতেন।
নতুন নতুন প্রাসাদ উপহার দিতেন তার রক্ষিতাদের।

পশ্চিম বঙ্গে যেমন মানুষের জীবনের এবং সমাজের প্রতিটা পদক্ষেপে পার্টির কতৃত্ব এবং কড়া নজর-রুমানিয়াতেও ছিল তাই। মজার ব্যাপার হল, এই চেসেস্কুই এক সময় ফ্যাসিবাদ বিরোধি ছাত্র আন্দলোনের নেতা ছিলেন। যখন ক্ষমতাই আসেন তখন বেশ জনপ্রিয় যুবনেতা চেসেস্কু। ঠিক আমাদের বর্তমান সিপিএম নেতাদের মতন-এরাও ছাত্রে অবস্থায় কংগ্রেসের অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে ষাঠ এবং সত্তরের দশকে অনেক আন্দোলন করেছেন। আর আজ ভারত বর্ষে শুধু একটি রাজ্যে দেশের সংবিধান না, পার্টির সংবিধান মেনে মানুষকে চলতে হয়। একটি ফ্যাসিস্ট শাসককুল তাদের পোষা কুকুর ছানাগুলোকে নিয়ে, কারারক্ষীদের মতন পাহারা দিচ্ছে। স্বভূমে এই ভাবেই পরাধীন আমাদের রাজ্যের লোকেরা।

যাইহৌক আবার চেসেস্কুতেই ফিরে আসি। ২২ ডিসেম্বর ছেড়ে পালানোর আগে, ২১শে ডিসেম্বর ও মনে হয় নি চেসেস্কুর পতন হবে। বেলগ্রেডের রেড স্কোয়ারে বিক্ষোভকারিদের বিরুদ্ধে গুলি চালিয়ে, তাদের হটিয়ে, কমিনিউস্ট পার্টি ক্যাডার নামিয়ে বিরাট জনসভা করে চেসেস্কুর
সমর্থনে- টিভিতে তাই দেখানো হয়। তখনো গোটা বিশ্ব বুঝতে পারে নি কমিনিউস্টদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ কোথায় পৌঁছেছে। বহিঃবিশ্বত দূরের কথা চেসেস্কু নিজেও বোঝেন নি। নইলে ২১ তারিখেই দেশ ছেড়ে পালাতেন। কিন্ত কমিনিউস্টরা মানুষকে বলপূর্বক দাবিয়ে রেখে, বন্দুকের নলের সামনে নিজেদের সমর্থনে লোক নামিয়ে, ভাবে লোকে লাল ঝান্ডা জিন্দাবাদ বলতে বাধ্য হচ্ছে মানে, তাদের গদির হারানোর ভয় নেই!

ডিয়ায়াল উইথ রিয়ালিটি। কমিনিউস্টরা সর্বত্র এর জন্যেই বিখ্যাত-পশ্চিম বঙ্গে তাদের অন্তিম যবনিকাগুলোই বা বাদ যাবে কেন?

কাল খেজুরিতে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্ব, যেভাবে সিপিএমের ২০ট পার্টি অফিস পোড়ানো হয়েছে এবং সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি সার্চ করে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তাতে আমার প্রথমেই চেসেস্কুর শেষ দিনের কথা মনে পড়ল। খেজুরিতেও অস্ত্রবাজ পার্টির গুন্ডাগুলোকে ধরিয়ে দিয়েছে, অতীতে লাল ঝান্ডা তুলে নিতে বাধ্য হওয়া নির্যাতিত জনগণ। ২১ শে ডিসেম্বর চেসেস্কু যে লোকগুলিকে বন্দুকের নল দিয়ে নিজের সমর্থনে নামিয়েছিলেন, ২২ তারিখে পার্টির ভয় থেকে মুক্ত হয়ে, তারাই তাকে ধাওয়া করে। তৃণমুলের এই বিজয়ে, নির্যাতিত্ জনগণ বুঝেছে, সিপিএমকে আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ফলে আরাম্ বাগ, খেজুরী, কেশপুর-সর্বত্র যেখানে হার্মাদ বাহিনীর একচেটিয়া রাজত্ব চলত-আজকে সেসব জায়গার নির্যাতিত জনগন সিপিএমের গুন্ডাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

সিপিএমের বিরুদ্ধে যেভাবে জনরোষ ফুঁসলে উঠেছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে ২০১১ সালের আগেই নির্বাচন হয়ে যাবে। আগামী দুই বছর সিপিএমের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হবে না। ইচ্ছা থাকলেও না। এমন অবস্থাতে বুদ্ধদেব বাবু, সরকার ভেঙে দিলে রাজ্য এবং সিপিএম পার্টির আসু মঙ্গল। নইলে প্রতিটি লোকাল থেকে উচ্চ স্তরের নেতাদের চেসেস্কু বানিয়ে ছাড়বে জনগণ। বত্রিশ বছর এই ভাবে মানুষকে নিস্পেষন করার পর, জনগণের এই প্রতিক্রিয়া স্বতস্ফুর্ত।

কে জানে ভবিষ্যতের ইতিহাস হয়ত এটাকেই জুন বিপ্লব বলবে ।

Sunday, June 7, 2009

মমতাকি বামপন্থীদের প্রত্যাশা পূরন করতে পারবেন?

মহেশ্বতাদেবী বলছেন মমতা না কি পশ্চিম বঙ্গের একমাত্র বামপন্থী। ইস্তাহার দেখুনঃ তৃনমুলের সাথে সিপিএমের পার্থক্য শুন্য। সমাজতন্ত্র আর সংখ্যালঘু তোষনের ককটেল। তৃণমূলও বেসরকারীকরনের বিরুদ্ধ। ব্যাঙ্ক থেকে ইনসুয়ারেন্সে বিদেশী বিনিয়োগ চলবে না-ডিটো সিপিএমের শ্লোগান, তাদেরও নাপসন্দ। বিগ ক্যাপিটাল, মল সংস্কৃতির বিরোধিতা করবে তৃণমুল এটি তাদের ঘোষনা। জ়োট সঙ্গী কংগ্রেস অবশ্যই আরো ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও সোনিয়া গান্ধী ধীরে চলার নীতিই নিচ্ছেন। সেই জন্যেই প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ মন্টেক সিং অর্থমন্ত্রক পেলেন না। সমাজতান্ত্রিক প্রণববাবু পেলেন এই কাঙ্খিত মন্ত্রীত্ব।

পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতিতে এখন ডান-বাম বলে কিছু নেই। আপনি সিপিএমের ফ্যাসিজমের পক্ষে বা বিপক্ষে। লাল ফ্যাসিজম বনাম তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রেমী মানুষদের গণ প্রতিরোধ-এটাই পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতির সার্বিক চিত্র। গোটা রাজ্যজুরেই গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি। ২০১১ সালের ভোটের আগে কটা লাশ পড়বে কেও জানে না।

প্রশ্ন হচ্ছে মমতা এই যে ২১০ টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে আছেন, তা কি ধরে রাখতে পারবেন?
এই প্রশ্ন তুলছি তার কারন বাম-বাঙালীর একটা বড় অংশই মমতাকে এবার ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার সংস্কার জোর কদমে চালালে সেই বামবাঙালীর একটা বৃহৎ অংশ আবার সিপিএমে ফিরে যেতে পারে।

অর্থনৈতিক সংস্কার ভারতে দরকার। নইলে জ়িডিপি বাড়বে না। চীনের থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ব। হ্যাঁ, জনগন এবং জাতীয় স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখেই সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গে ৩২ বছর বামপন্থী ব্রেইন ওয়াশের ফলে, একটা বিরাট বামভোট ব্যঙ্ক সিপিএম তৈরী করছে, যার একটা বড় অংশ এখন তৃণমূলে। সমাজতন্ত্রের বদলে ঠিকাদারতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা সিপিএমের কাছে তা এখন বুমেরাং। বাম বাঙালীর এই অংশটি এখনো লেনিনের স্বর্গরাজ্যের স্বপ্ন দেখেন-তা যতই নারকীয় বলে ঐতিহাসিকরা প্রমান করুন না কেন। এরা সব সংস্কারেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ভূত দেখেন। হ্যাঁ অর্থনৈতিক সংস্কারে রাশটানা দরকার-কিন্ত ম্যানুফাকচারিং সেক্টরে শিল্প আইন সংশোধন না হলে চীনের থেকে আমরা ১০০ বছর পিছিয়ে পড়ব। এসব সূক্ষ পার্থক্য বামবাঙালী বোঝে না। জাতীয় স্বার্থও তারা দেখবে না-তাদের বাইবেল লেনিনের রাষ্ট্র ও বিপ্লব।

যদ্দিন না এই সব বামপন্থী মিথগুলোকে বাঙালীর মাথা থেকে দূর করা না যাচ্ছে, মমতার উচিত এই নব্য বামভোট ব্যঙ্ককে ধরে রাখা। সমস্যা হচ্ছে এর জন্যে জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি হবে। কিন্ত ২০১১ সালে সিপিএম আবার ক্ষমতাই থেকে গেলে বা লোকসভাতে সিপিএমের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে দেশের ক্ষতি আরো বেশী। সুতরাং দীর্ঘ স্বার্থের কথা মনে রেখে, এই নব্য বামভোট ব্যাঙ্ককে ধরে রাখার চেষ্টা করাটাই অনেক বেশী বাস্তব সম্মত পথ।

Saturday, June 6, 2009

জ্যান্ত মানুষকে মৃত রটিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে গণশক্তি

কাল গণশক্তিতে একটি সংবাদে প্রকাশ তাদের কর্মী গোবিন্দ সামন্তকে খুন করেছে তৃণমুল। এটি ছিল তাদের হেডলাইন নিউজ। এখানে দেখুনঃ
http://bangla.ganashakti.co.in/shownews.php?w=1403&h=531&year=2009&month=6&date=6&page=1&dpn=204610

আজ সকালে আজকাল ( এবং আনন্দবাজারেও দেখলাম), না উনি মার খেতে হাসপাতালে ভর্ত্তি আছেন মাত্র।http://www.aajkaal.net/report.php?hidd_report_id=113900আমি এক সিপিএম সমর্থককে, যে আমাদের তৃণমূলের দালাল বলে গালাগাল দেয়, সামন্ত ফ্যামিলির টেলিফোন নাম্বার দিতে বলেছিলাম। তৃণমূল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কেও বলুক, এটাই চাইছিলাম। কেন সে পারেনি সেটা এবার বুঝলাম।এত মারাত্মক ব্যাপার!!! শুনলাম সিপিএমের দালা ২৪ ঘণ্টা চ্যানেল ও একই ভুল করে শুধরেছে।

আমাদের ভিন্নবাসরকে বামপন্থীরা ছিন্নকাঁসর বলেন। তারা গণশক্তির এই জ্যান্ত মানুষ মারা কে কি বলবেন? এদের ত দেখছি লজ্জা শরমও নেই। একটা জ্যান্ত লোককে এই ভাবে মেরে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা---আমি ধিক্কার জানাই --সিপিএম কোন তলানিতে এসে ঠেকেছে গনশক্তির অবস্থাই তা প্রমান করছে।

এর থেকে কি প্রমান হয়? সিপিএমের উর্ধত্তন নেতৃত্ত্ব রাজনৈতিক হিংসা ছড়াতে বদ্ধকল্প। তারা চান পশ্চিম বঙ্গে রক্তের হোলি খেলা হৌক-কারন ২০১১ সালে তারা ৫০টি আসনও পাবেন না, তা তারা বুঝেছেন। তাই লেনিনের রেড টেটরের কায়দায় বিরোধিদের খুন করার খেলায় নেমেছেন। এই ধরনের মিথ্যে সংবাদ রটনোর আর কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। জ্যান্ত লোককে নিহত বলে রটিয়ে আরো তৃণমূলের কর্মীকে খুন করার ভিসা দিচ্ছে সিপিএমের কেব্দ্রীয় নেতৃত্ব।

Wednesday, June 3, 2009

পশ্চিম বঙ্গে এখন গৃহযুদ্ধ চলছে


খানাকুলে তৃণমুলনেতা যুধিষ্টির বাবু খুন হলেন। সিপিএম তাকে ছবছর গৃহছাড়া করে রেখেছিল। কিন্ত দমাতে পারেনি নরপিশাচ সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার লড়াই। ফলে অন্যান্য তৃণমুল নেতাদের ন্যায় তিনিও শহীদ হলেন। দেড়শো সিপিএম হার্মাদ বাহিনী তার বাড়ি ঘিরে কুপিয়ে রেখে গেল।

একই দিনে খবর পশ্চিম বঙ্গের প্রতিটা কলেজে এস এফ আই এর সাথে দুই ছাত্রপরিষদের সংঘর্ষ।

মুঠোর রাশ যে আলগা হয়ে আসছে-এটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে সিপিএম নেতা এবং ক্যাডারদের। পঞ্চায়েতের চাল-গম আর এতদিনের মৌরসীপট্টার দিন শেষ হয়ে আসছে, এটা সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী ক্রমশ বুঝছে। ফলে, লাল সন্ত্রাস এখন গোটা পশ্চিম বঙ্গেই ছড়িয়ে পরবে। এবং তার কাউন্টার রেসপন্স হিসাবে সবুজ সন্ত্রাস ও আমরা দেখব। তখন আবার সিপিএম খোকা, আমাদের মারছে বলে মায়াকান্না জুড়বে।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই হিংসা? ভারতের অন্যরাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা অনেক কম। এসব কিছুরই মূলে মাথা পিছু জমি কম হয়ে আসা-কিন্ত রাজনৈতিক দলগুলি জমির ওপর বর্ধিত চাপ কমামোর জন্যে কিছুই করে নি। দায় অবশ্যই সিপিএমের। গ্রামে উৎপাদন বাড়ানো বা কুটির শিল্পের প্রসারে তাদের ভুমিকা টা ঠিক কি? ১৯৯৮ সালের পর থেকে পশ্চিম বঙ্গে কৃষির উৎপাদন প্রায় থেমে গেছে। কৃষিভিত্তিক শিল্প কোথাও গড়ে ওঠে নি। অথচ বাঁচার জন্যে এখন দ্বিগুন টাকা লাগে। আবার জনসংখ্যাও বেড়েছে। তাহলে লোকগুলো যাবে কোথায়? খাবে কি? এদিকে নেতারা নিজেদের মাইনে , ছেলে বৌদের চাকরি ঠিকই ম্যানেজ করেছেন।

হয়ত প্রতিটি কমিনিউস্ট শাসনে শেষ হয়ে এলে এমন এনার্কি-বা অরাজকতার দরকার হয়। লেনিন বলতেন রক্ত ছাড়া বিপ্লব হয় না-হয়ত একই কারনে এটাও সত্য শহীদদের বলিদান ছাড়া এই রাজ্য লাল সন্ত্রাসের হাত থেকে মুক্ত হবে না। সিপিএম নেতারা শুনছেন কি না জানি না-তবে এই রকম চললে, তৃণমুল ক্ষমতায় এলে হয় আপনাদের সবার সামনে কান ধরে তৃণমুলে যোগ দিতে হবে-নইলে বিহার বাংলাদেশে পালাতে হবে।

৩২ বছর মানুষের ওপর সিপিএম যা অত্যাচার চালিয়েছে, তারপরেও সিপিএম নেতারা যদি গনধোলাই না খেতে চাই-তাদের বাঁচার একটাই পথ। গণতন্ত্রকে প্রতিটা পদে শ্রদ্ধা করা। গণতন্ত্রের ভিত্তিটা ভেঙ্গে দিলে, এর পরে সিপিএম বলে কোন পার্টি থাকবে না। গণধোলাই এ নিশ্চিহ্ন হবে। এবং সাধারন মানুষ তাতে দুঃখ করার বদলে খুশীই হবে।