Friday, November 25, 2011

বাজার আনন্দের "শেষ বামপন্থী"

খুচরো বিণপন ক্ষেত্রে বা দেশী রিটেলে বিদেশী বিনিয়োগের বিরোধিতা করেছে তৃণমূল-এই ব্যপারে বাজার আনন্দর সম্পাদকীয় বক্তব্যঃ

" কারণ, যাঁহাকে রাজ্য চালাইতে হয়, অর্থ সংস্থানের কথা ভাবিতে হয় তাঁহার পক্ষে বাস্তববাদী হওয়া ভিন্ন উপায় নাই। দুঃখের কথা, শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় চোখ বুজিয়া থাকিলেন। ‘পরিবর্তন’-এর হাওয়ায় ভর করিয়া তিনি পশ্চিমবঙ্গের মসনদে অধিষ্ঠিত হইয়াছেন। কিন্তু, তাহা নিতান্তই বাহ্যিক পরিবর্তন। মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন আসে নাই। একুশ শতকের বিশ্ব-অর্থনীতি কোন পথে হাঁটিতেছে, তাহা বুঝিতে তিনি ব্যর্থ। খুচরা বিক্রয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আসিলে আখেরে যে সাধারণ মানুষেরই লাভ, এই কথাটি তিনি বুঝিয়াও বুঝেন নাই।"

আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ লেখেন আমি জানি না। তাদের কাছে আমি শুধু কিছু তথ্য পেশ করতে চাইব
(১) ১৯৭৮ সালে আমেরিকান বাজারে , নিয়ন্ত্রনমূলক আইনের সংখ্যা ছিল ৮০,০০০/ বর্তমানে, সংখ্যাটি ২,৪০,০০০ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ বাজার সরকারকে টেকাতে, ধণতন্ত্রের তথা উদার অর্থনীতির পীঠস্থানে রেগুলেশনের সংখ্যা তিনগুন বাড়ানো হয়েছে তিন দশকে মধ্যে। এবং তার সবটায়, আরো স্বাস্থ্যপূর্ণ বাজারের জন্যে।

(২) যে রেগুলেশনগুলো বাড়ানো হয়েছে, তার মধ্যে সবথেকে বেশী যে আইনটি বারবার বলপ্রয়োগ করে চাপাতে হয়েছে-তার নাম এন্টিট্রাস্ট। অর্থাৎ দুটি প্রতিযোগী কোম্পানী কখনো একসাথে মিশে বা গোপনে দামের শলা করে বাজারে একাধিপত্য কায়েম রাখতে পারবে না। অর্থাৎ কোন কোম্পানী যাতে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তার জন্যে আমেরিকাতে সরকার সব থেকে বেশী আইন জারী রেখেছে।

(৩) এবার আসি আমেরিকাতে অর্গানাইজড রিটেলের প্রসঙ্গে। ওয়ালমার্টের জন্যে বহু স্থানীয় মুদিখানার দোকান উঠে গেছে। এমন কিছু দোকান যা ওয়ালমার্টের আগমনে উঠছে উঠছে করছে, তাদের সাথে আমি কথা বলে বুঝেছি ছোট ব্যবসায়ীদের কি যন্ত্রনা। ওশান সিটি যাওয়ার পথে রুট ৫০ এর ওপর ১৫০ বছরের পুরানো একটা দোকানে একবার বাটার আর স্থানীয় চকলেট কিনেছিলাম। সেইবারই মালিকিন আমাকে বলেছিল-এর পরের বার আর আমদের দেখতে পাবেন না-এখানে ওয়ালমার্ট এসে গেছে। কি অদ্ভুত। ২০১০ সালেই দেখেছি সেই দোকানে ঝাঁপ নেমে গেছে। এছাড়ার আরো অনেকের সাথে আমার কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে-নিজের চোখে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পিকেটীং দেখেছি ওয়ালমার্টের বিরুদ্ধে।

(৪) অনেকের ধারনা অর্গানাইজড রিটেল-মানে এই সব ঝকঝকে মল বানিয়ে -কি দারুন কেনাকাটার অভিজ্ঞতা দেবে! খুব ভুল ধারনা খাওয়াচ্ছে বাজার আনন্দ আর বাংলা মিডিয়া। অর্গানাইজড রিটেলের ক্ষেত্রে উৎপাদক পুরো দিশে হারা হয়ে যাবে। ওয়ালমার্টের উৎপাতে শুধু ব্যবসা বন্ধ হয় নি-স্থানীয় যেসব দুধ, দই ইত্যাদির উৎপাদন ছিল-তারাও ঝাঁপ টেনেছে। কারন ওয়ালমার্ট ভেন্ডরকে যে পয়সা দেয়, তাতে শুধু বড় বড় উৎপাদকরাই পারে সাপ্লাই দিতে। স্থানীয় অর্থনীতি ভেঙে যাবে-যা আমেরিকার বহু শহরে হয়েছে। এমন একটা টাউন দেখেছিলাম ভার্জিনিয়াতে- মাইনিং টাউন অক্সিডেন্ট। খুব কম লোকের বাস। তাও আগে শহরে বেশ কিছু দোকান ছিল-আশে পাশে কিছু শাক সব্জির উৎপাদন হত এককালে। ওয়ালমার্ট আসার পর সব দোকান বন্ধ। শুধু একপায়ে ওয়ালমার্ট দাঁড়িয়ে!

(৫) ওয়ালমার্ট আমেরিকান বাজাএর কোয়ালিটিও সাংঘাতিক কমিয়ে দিয়েছে। ওয়ালমার্টের যেকোন জিনিস যেমন সস্তা -ঠিক ততটাই বাজে। সেদিন ওয়ালমার্ট থেকে একটার সস্তার স্ক্রু ড্রাইভার কিনলাম-স্ক্রু খোলার বদলে, ড্রাইভারের মুন্ডীগেল ঘুরে। এত বাজে কোয়ালিটি ভারতেও দেখি নি। ওরা ভেন্ডরদের পয়সা কমাতে কমাতে এমন জায়গায় এনেছে, আর কোন কোয়ালিটি সাপ্লায়ার নেই ওয়ালমার্টে।

এন্টিট্রাস্ট আইন যদি ক্রেতাদের কথা ভেবে করা হয়ে থাকে অর্গানাইজড রিটেল বন্ধেও আইন দরকার। ভারতে খাবারের দাম যে হারে বাড়ছে-সেখানে খাবারের সাপ্লাই চেইন উন্নত না করে, মল বানানো দৃষ্টিকটুই শুধু না-সম্পূর্ন ভুল দিকে একটা দেশকে চালনা করা। আর সেই ভুল পথে চালনা করতে বাজার আনন্দের চেয়ে পারদর্শী আর কে আছে?

Thursday, November 24, 2011

এ পি ডি আর এবং একটি গণতান্ত্রিক তামাশা

সম্প্রতি দিদির সাথে কূট কাচালে, তৃণমুলের অতীত সহচর এ পি ডি আর ( গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি
http://apdr.org.in/index.html) নামে একটি সংগঠনের ভূমিকা কিছুটা মিডিয়া লাইমলাইট টানছে। অতীতে সিপিএমের অভিযোগের সূত্র ধরে এবার তৃণমূলীরাও বলছে এটি মাওবাদিদের মুখোশ-একটি মাওবাদি সহানুভূতিশীল শাখা সংগঠন।

অতীতে এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছিল সিপিএম। তখন তৃণমূল, এর উল্টোগীত গেয়েছিল। এখন দায়ে পড়ে এপিডিয়ারের বিরোধিতা করছে। এমন ভাব যেন তৃণমূল এতদিন জানত না, এ পি ডি আর মাওবাদি বা মাওবাদি সহানুভূতিশীলদের মুখোশ মাত্র। সিপিএমের লাঠি আর বন্দুকের বিরুদ্ধে তখন তৃণমূলের দরকার ছিল সশস্ত্র সাপোর্ট-সেটা ভারতে একমাত্র মাওরাই দিতে পারত দিদিকে। দিয়েও ছে। এখন যখন আর প্রয়োজন নেই, সংঘাত সামনা সামনি।

এপিডিআরের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করলে, এটা খুবই পরিস্কার তারা মাওবাদিদের শাখা সংগঠন এবং পশ্চিম বঙ্গে মাওবাদিদের রক্ষা করা তাদের প্রথম কাজ। গণতান্ত্রিক দাবিটা মুখোশ-কারন মাওবাদের মতন বা কমিনিউমের মতন বা লেনিন বাদিদের মতন চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক বা গণতন্ত্র বিরোধি মতবাদের বিরুদ্ধে তারা কোন দিন একটাও বিবৃতি দেয় নি। মাওদের বিরুদ্ধে তাদের কোন বিবৃতি নেই-কোন কোন নক্সাল আমাকে বলেছিল, এটা মিডিয়ার চাল। এপিডিয়া মাওদের বিরুদ্ধেও "নাকি" বিবৃতি দিয়েছে-মিডিয়া সেসব নাকি প্রচার করে না!!!

এটা হচ্ছে এপিডিয়ার সাইটের প্রেস রিলিজ-এখানে মাওদের বিরুদ্ধে কোন বিবৃতি পাবেন না



এর পরেও আছে। গত ছমাস তৃণমূলীদের অত্যাচারে অনেক সিপিএম কর্মী মারা গেছেন-অনেকেই ঘর ছাড়া। এপি ডিয়ার সেসব নিয়ে চিন্তিত না। তাদের চিন্তা কি করে মাওবাদিদের বাঁচানো যায় যৌথবাহিনীদের হাত থেকে। এখনত জলের মতন পরিস্কার সিপিএমের পতনের পর গ্রামবাসীরা আর মাওবাদিদের চাইছে না-তারাই ইনফর্মাএরের কাজ করে মাওদের ধরিয়ে দিচ্ছে। আগে সিপিএমের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে তারা মাওদের আশ্রয় দিত-এখন আর দিচ্ছে না। ঠিক এই জন্যেই ধরা পরে মারা গেলেন কিশানজী।
এপিডিয়ার যুদ্ধ "বিরতি" নিয়ে বেশী ব্যস্ত ছিল। কিসের যুদ্ধ? মাওবাদিরা কি সংবিধানিক শক্তি যে তাদের সাথে টেবিলে বসতে হবে? তারাত ঘোষিত গণতন্ত্র বিরোধি শক্তি-তাদেরকে কি করে রক্ষা করার কথা ভাবতে পারে সুজাত ভদ্রর দলবল?

সরকারের শক্তি কমিয়ে জনগনের হাতে শক্তি তুলে দিতে গেলে শুধু গণতন্ত্রের মাধ্যমে হবে না। ভোটের মাধ্যমেও হবে না। উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর জনগনের অধিকার আনতে হবে। তার জন্যে বন্দুকের নলের ডগায় বিপ্লবের দরকার নেই-কোয়াপরেটিভ আন্দোলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে কমিউনিটি লিডারশীপ আনা যেতে পারে। রাষ্ট্রের উৎপীড়ন কমানোর একটাই রাস্তা-সেটা হচ্ছে রাষ্ট্রের হাত থেকে উৎপাদন ব্যবস্থার কতৃত্ব কেড়ে, তা আস্তে আস্তে কমিউনিটিকে দেওয়া। কোয়াপরেটভ কে দেওয়া।
রাষ্ট্রের হাত থেকে ক্ষমতা কমানোর জন্যে কমিনিউস্ট গেরিলাদের সাহায্য করার চেয়ে বড় মূর্খামি আর কি হতে পারে? কারন কমিনিউস্টরাই সব থেকে বড় অত্যাচারি রাষ্ট্রে দমনমূলক রাষ্ট্রে বিশ্বাস করে। সুতরাং এপিডিয়ারের কাজকর্ম হচ্ছে মশা মারতে বাঘ ডেকে আনা। সুতরাং সবদিক দিয়েই প্রমাণিত এপিডি আর নামেই গণতান্ত্রিক রক্ষা সমিতি-এটি আসলে মাওবাদিদের আখড়া। এবং সেই ভাবেই এদের দেখা উচিত।

Saturday, November 12, 2011

মমতাতন্ত্রর প্রথম ছমাস


চৌত্রিশ বছরের একটি ধ্বংসপ্রায় অট্টালিকাকে মেরামত করে বসবাসযোগ্য করার জন্যে কি ছমাস যথেষ্ট?

অনেকেই বলবেন "না"।

সিপিএম পশ্চিম বঙ্গে যে অচলায়তনের জন্ম দিয়েছিল, তা সচল করতে হয়ত ছমাস যথেষ্ট নয়। কিন্ত দিনের প্রথম সূর্য্যের রঙে যেমন বাকী দিনটির আকাশ কিছুটা অনুমান করা যায়, মমতাতন্ত্র কোন দিকে গড়াবে-তার একটা আভাস আমরা পাচ্ছি। এবং সেই সিগন্যালগুলি খুব অভিপ্রেত বা আশাব্যঞ্জক না। মমতাকে নিয়ে বাংলা মিডিয়ার হ্যাংলামো অব্যাহত-গণশক্তির নাকি কান্নাও ক্রমাগত-কিন্ত মমতা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা মিডিয়াতে আশ্চর্য্যজনক ভাবে অনুপস্থিত। দেউলিয়া বাংলা মিডিয়ার কাছে অবশ্য প্রত্যাশার কলসটিও নেহাৎই ছিদ্রপূর্ণ।

প্রথমেই লিখি রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে। কোষাগার শুন্য। কেন্দ্রের কাছে মমতা বেইল আউট প্যাকেজ চাইছেন। কিন্ত সাংবিধানিক বাধা আছে। কেন্দ্র রাজ্যের উন্নয়নের জন্যে টাকা দিতে পারে-কিন্ত রাজ্য সরকারের বেতন মেটানোর জন্যে নিয়ম বহির্ভুত অতিরিক্ত টাকা দিতে পারে না। ফলে অসীম দাশগুপ্ত যেভাবে পশ্চিম বঙ্গকে ডুবিয়েছে বাজার থেকে উচ্চসুদের ঋণ নিয়ে-অমিত মিত্রও সেই পথেই হাঁটতে বাধ্য হলেন। সিপিএমের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে মমতার তর্জন গর্জনই সার-রাজ্যর ওপর আরো ধার চাপিয়ে বেতন মেটানোর কবর কাটার খেলা অব্যহত। কলেজ কর্মচারীদের বেতন এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বকেয়া মেটাতে পারছে না রাজ্য সরকার। এই সংকট থেকে বেড়োনোর জন্যে রাজ্যের উপায় বাড়ানোর দরকার। প্রণব এবং মনমোহন একথা বারবার সিপিএমকে বলেছেন-মমতাকেও বলছেন। কেওই শুনছে না। কারন সেটা করতে গেলে কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত-যেমন বর্ধিত কর, বিদ্যুতের বর্ধিত মাশুল , বিদ্যুত চুরি বন্ধ করা, রাস্তার ওপর টোল ট্যাক্স বসানো, অনাবাদি জমিগুলিকে শিল্পের জন্যে উচ্চদামে লিজ দেওয়া ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মমতা জনগণের ওপর বর্ধিত বোঝা চাপাতে চান না। ভাল কথা। সেটা একটা রাজনৈতিক লাইন হতেই পারে। কিন্ত আয় না বাড়ালে, অন্য উপায় খরচ কমানো। কিন্ত সে পথ চালু করলে ( যেটা না চাইলেও উনাকে করতেই হবে) রাজ্য সরকারের সব শুন্যপদে নিয়োগ বন্ধ, নতুন শিক্ষক নেওয়া বন্ধ করতে হবে। যেটি আরো বাজে সিদ্ধান্ত-এবং সেইভাবে শেষ রক্ষা হবেও না-কারন সরকারি খরচ কমানোর জায়গা আর বিশেষ কিছু নেই।

মোদ্দা কথা মমতার অর্থনৈতিক লাইন সিপিএমের থেকে আলাদা কিছু না। সেই বল্গাহীন পপুলিজম যা একটা রাজ্যকে সর্বনাশ ছারা আর কিছু দিতে পারে না।

এবার আসা যাক রাজ্যে স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে। মমতার পরিদর্শনে বা সাসপেনশনে কাজ কি কিছু হয়েছে? শিশুমৃত্যুর হার এবং চিকিৎসায় অবহেলা অব্যাহত। আমি ছমাস আগেই লিখেছিলাম নাটক করে, এসব কিস্যু হবে না। সুস্থ্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এ ধরনের কেন্দ্রীয় কাঠামোতে হবে না। দরকার ক্ষমতা এবং দ্বায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরন। দরকার পেশাদার হসপিটাল ম্যানেজমেন্টের লোক এবং তাদের হাতে ক্ষমতা । মমতা কি করলেন? একটা ভাঙা বাড়িতে এলেন। ছাদে ফুঁটো আছে দেখে বললেন-এই এখানে প্লাস্টার মার। ভাঙা বাড়ি প্লাস্টার মেরে সারানো যায় না। দরকার পুড়ানো জরাজীর্ন বাড়িটিকে ভেঙে, নতুন করে বাড়ি বানানো। পশ্চিম বঙ্গের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমন ধ্বংস প্রাপ্ত, সিপিএম পার্টির উচ্চ স্থানীয় নেতা ত দূরের কথা, পার্টির ক্যাডাররা পর্যন্ত কিছু হলে নার্সিং হোমে ছুটত। তাদের দ্বিচারিতার শাস্তি জনগণ দিয়েছে-এবং আরো কড়া কিছু শাস্তি তারা পঞ্চায়েত নির্বাচন বা আগামী লোকসভা নির্বাচনেও পাবে। কিন্ত সিপিএমের বিরুদ্ধে এই নেগেটিভ আবহ বেশীদিন চলবে না। এর মধ্যেই মমতাকে স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে হবে।

মোদ্দা কথা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। নাটক বন্ধ করে, মমতার উচিত অবিলম্বে হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টের লোক এনে, হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ন বদলে দেওয়া।
এবার আসি শিক্ষা প্রসঙ্গে। প্রেসিডেন্সি, শিক্ষার উৎকর্ষতা এসব নিয়ে ফালতু সময় নষ্ট করছে রাজ্য সরকার। শিক্ষার উদ্দেশ্য ভবিষ্যতের জন্যে আরো উৎপাদনশীল কর্মক্ষম নাগরিক তৈরী-যারা হবে উৎপাদন ব্যবস্থার জন্যে আরো বেশী উপযুক্ত। এর জন্যে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার মান আরো বাড়ানো দরকার। স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার, কমিউনিকেটিভ ইংলিশ , একাঊন্টিং , টাইপিং, মার্কেটিং , ম্যানেজমেন্টের প্রাথমিক শিক্ষাগুলি দেওয়া দরকার। এগুলি আমেরিকাতে দেখছি ভীষন ভাবে আসছে স্কুলের শিক্ষায়। কারন সবাই পন্ডিত হবে না-সবাই বড় প্রযুক্তিবিদ বা ডাক্তার বা বিজ্ঞানী হবে না। কিন্ত এই উন্নত যন্ত্র সভ্যতায় পশ্চিম বঙ্গের ছেলে মেয়েদের যদি জায়গা করে নিতে হয়, তাদের এই লাইফ-সেভিং স্কিলগুলি বাড়াতেই হবে।
এসব নিয়ে কোন আলোচনা বা চিন্তা ভাবনা চোখে পড়ে না-শুধু প্রেসিডেন্সির মলমূত্র পরিস্কার করার এক্যাডেমিক আলোচনা করে এই রাজ্যের অধিকাংশ ছেলে মেয়েদের কিছু হবে না। মোদ্দা কথা শিক্ষা নিয়ে মমতাতন্ত্রের কোন নতুন চিন্তাধারা দেখতে পাচ্ছি না। সস্তার স্টান্টবাজি চলছে। একটা অমর্ত্য সেন তৈরী করার থেকে এই রাজ্যের অনেক বেশী দরকার দশ লক্ষ "স্কিলড শ্রমিক"।

এবার শিল্পের প্রসঙ্গে আসি। পার্থ চ্যাটার্জি পশ্চিম বঙ্গে শিল্প স্থাপনের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক এবং অমায়িক একজন ব্যক্তিত্ব। কোলকাতায় আমার শিল্পপতি বন্ধুদের কাছ থেকে যা শুনেছি -সেটা নিঃসন্দেহে আশার কথা যে পার্থবাবু সবার সাথে পশ্চিম বঙ্গের শিল্পের উন্নতির জন্যে সাহায্য চেয়েছেন। অনেকেই আগে পশ্চিম বঙ্গে বিনিয়োগ করতে চাইত না-এখন চাইছে। এটা খুব ভাল লক্ষণ চোখে পড়ছে। কিন্ত সমস্যা অন্যত্র।

কিছুদিন আগে নিউ ইয়ার্কে শ্যাম পিত্রোদার সাথে পশ্চিম বঙ্গের হাল হকিকত নিয়ে সামান্য আলাপের সুযোগ হয়েছিল। উনিত এখন মমতার মূল পরামর্শ দাতা। শ্যাম পশ্চিম বঙ্গের বর্তমান হাল নিয়ে খুবই চিন্তিত কারন এই রাজ্যটি মহারাষ্ট্র বা গুজরাতের থেকে ২০ বছর পিছিয়ে আছে শিল্পকাঠামোতে। আগামী পাঁচ বছর চলে যাবে শুধু শিল্প কাঠামোর উন্নতি করতে। সমস্যা হচ্ছে রাজ্য সরকার সেটা করবে কি করে? জমি অধিগ্রহণ এই সরকার করতে চাইছে না। কাঠামো না পেলে বড় শিল্প আসবে কি করে? শুধু আন্তরিকতার কারনে ত শিল্পপতিরা আসবে না।

এবার দেখা যাক আইন শৃঙ্খলার অবস্থা। এক্ষেত্রেও রাজ্য আছে আগের মতনই। আগে ছিল সিপিএমের গুন্ডামো-এখন তৃণমূলীদের গুন্ডামো এবং ঔদ্ধত্য অব্যহত। অবশ্য এই ব্যাপারে আমি মমতাকে দোষ দিতে চাইছি না। পশ্চিম বঙ্গের রাজনৈতিক সংর্ষের মূল কারন, মাথা পিছু জীবিকা নির্বাহের স্বল্প সংস্থান। বেকারত্ব এবং দারিদ্রর কারনে সীমিত সম্পদের ওপর অনেক লোকের চাপ-- এখানে যা প্রায়শ দুই দলের মারামারি, খুনোখুনির রূপ নিচ্ছে। এই রাজ্যে জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম না হলে, এটা চলতেই থাকবে।

আমি আশাবাদি। মমতার সদিচ্ছা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। কিন্ত তিনি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন না করলে, আদৌ কিছু করতে পারবেন কি না- সেই নিয়ে আমি সন্দিহান।

Wednesday, November 9, 2011

বিমান বসু ও নাবালক বাঙালী


বিমান বোসের একটি অর্ধসমাপ্ত শাড়ি সংক্রান্ত উপমা হইতে এই ঘোটলার শুরু।

প্রথমেই বলিয়া রাখি, লেখক হিসাবে আমি ব্যক্তি বিমান বোস এবং তাহার রাজনৈতিক লাইনের ঘোর বিরোধি লোক বলিয়াই বেশী পরিচিত।

কিন্ত বিমান বাবুর অর্ধসমাপ্ত শাড়ি সংক্রান্ত মন্তব্যে বাঙালী রাজনীতিবিদগণ, সুশীলজীবিগণ এবং নারীবাদিরা যে পরিমানে ক্ষুন্ন ও বিক্ষুব্ধ হইয়াছেন, তাহাতে আবার প্রমাণিত হইল, বাঙালী রাজনীতি এখনো সাবালক নহে। যৌনতা লইয়া, নেতা ও প্রজাদের দ্বিচারিতা ভারতখন্ডে চলিতেছে চলিবে। যৌনতা লইয়া দ্বিচারিতার মূল বাঙালী জীবনে এত দৃঢ়, বিমান বসুর অর্ধসমাপ্ত শাড়ি সংক্রান্ত বক্তব্য মিডিয়ার সার্চ লাইটের ন্যায় পাক খাইতে থাকে।

কি বলিয়াছেন বিমান বসু?
তৃণমূল এবং কংগ্রেস শাড়ির নীচে থাকিবে না ওপরে থাকিবে, তাহা তিনি জানেন না।

কংগ্রেস এবং তৃণমূলের রাজনৈতিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করিতে-ইহা হইতে উত্তম সাহিত্যিক উপমা আমি ভাবিতে পারিতেছি না। বিমান বসু যাহা বলিতে চাহিতেছেন তাহা এই- কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে যে কলহ বিবাদ আছে, তাহা তারা প্রকাশ্যে আনিবেন না ঢাকিয়া রাখিবেন-তাহা তিনি জানেন না। ইহা বুঝাইতে শাড়িতে নারীদেহ ঢাকা সর্বোত্তম সাহিত্যিক উপমা বলিয়াই বিবেচিত হইবে। বাঙালীর তাহার সাহিত্যরস না বুঝিয়া, অবুঝের ন্যায় বিমান বসুর ওপর যেভাবে রে রে করিয়া উঠিয়াছে, নারীবাদিরা যেভাবে ইহাতে নারীত্বের অপমান দেখিতেছেন, তাহাতে ভয় হইতেছে, বঙ্গভূমি হইতে সাহিত্যের পাঠ এবার না উঠাইতে হয়।

গতকাল ফক্স নিউজ চ্যানেলে দেখিলাম এক প্রখ্যাত আমেরিকান সেনেটর, এম এন বি সি নামক এক ডেমোক্রাটিক টিভি চ্যানেলের ওবামা প্রীতি বোঝাইতে, বলিলেন ওক্ত চ্যানেলটি ওবামার জন্যে পা ফাঁক করিয়া বসিয়া থাকে। কোন আমেরিকান মিডিয়া ইহাকে কুৎসিত বলিল না। কোন নারীবাদি ইহাকে নারীত্বের অপমান বলিয়া দাবি করে নাই-বিশেষত বক্তব্যটি একজন নারীই রাখিয়াছিলেন। কারন এটি ভাষার একটি বিশেষ ব্যবহার। বিমান বোস যা করিয়াছেন, তাহা ইহা অপেক্ষা অনেক সভ্য বক্তব্য। ইহাতে রসবোধ ছিল ষোল আনা। বাঙালী মিডিয়া সেই রস আস্বাদন না করিয়া যেভাবে বিমান বোসের "পেছন মারিতে" উদ্যত হইয়াছে, তাহাতে বঙ্গস্থানে বাকস্বাধীনতার কোরবানীতে চিন্তিয় রহিলাম।