Thursday, May 21, 2009

সিপিএমের ভবিষ্যত-আদৌ আছে কি?

হঠাৎ স্ট্যালিনের ওপর করা বিবিসির ডকুমেন্টারীটা মাথায় আসল। ১৯৩৬ সালের মধ্যে, বলশেভিক বিপ্লবের সাথী সমস্ত সঙ্গীদের ( সংখ্যার বিচারে ৯২%) মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন জ়োসেফ স্ট্যালিন। ইতিহাসে এই ঘটনা গ্রেটপার্জ নামে খ্যাত। স্তালিন বর্ণিত অপরাধ-এরা কমিনিউস্ট আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে, মস্কোতে ভোগবাদি নব্য বুর্জোয়া শ্রেনী তৈরী করছিলেন। ১৯১৭ সালে যারা বিপ্লবী ছিল, ১৯৩৬ সালে, ১৯ বছরের মধ্যে, তারাই নাকি নতুন বুরোক্রাটিক বুর্জোয়া ক্লাস তৈরী করেছে বলে স্ট্যালিন অভিযোগ করেছিলেন। যদিও, অন্য ইতিহাস বলে, এসবই পার্টিতে স্ট্যালিন বিরোধিদের খুন করার রাষ্ট্রীয় চক্রান্ত। সে যাক-সেই ইতিহাস আমাদের পশ্চিম বঙ্গে রিপিট করছে কি না-সেটা নিয়েই এই লেখা।

৩২ বছরে পার্টির নেতাদের চরিত্র কেমন বদলেছে? ১৯৭৭ সালে যারা পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন গ্রামের দিকে- তাদের সবাই স্কুল শিক্ষক। দেশভাগের ফলে ওপার বাংলা থেকে এসে উদবাস্তুর জীবনসংগ্রামে উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা। তত্ত্ব বলতে সম্বল মার্ক্সবাদ লেনিনবাদের দু চারিটি চটি বই-কিন্ত দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে জীবনের অভিজ্ঞতা অনেক বেশী। বাংলাদেশ থেকে এসে লড়াই করার সেই কঠিন অভিজ্ঞতা নিয়েই পশ্চিম বঙ্গে সিপিএমকে ইনারা দাঁড় করিয়েছিলেন। মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদ বোঝার চেষ্টা তারা করেন নি-জীবনের অভিজ্ঞতায় তাদের চিনিয়েছিল শ্রেনীতত্ত্ব। আর দেশভাগের জন্যে ছিল কংগ্রেসের ওপদ অদম্য রাগ সেই ১৯৪৭ সাল থেকে। এটাই ছিল তখন সিপিএমের নেতৃত্বের ভিত্তি। কয়েকশো টাকা শিক্ষকদের বেতন-তাও নিয়মিত দিত না কংগ্রেস সরকার।

সোভিয়েত ইউনিয়ান তখন তাদের চোখে স্বর্গরাজ্য। বাংলায় বিনা পয়সায়, খুব দামী কাগজের সোভিয়েত ইউনিয়ানের পত্রিকা গুলো আসত। গ্লসি পেপার। দারুন প্রিন্টিং। সুন্দর সুন্দর হাসপাতাল, স্কুল আর শিল্পের ছবি। পৃথিবীর বুকে স্বর্গের ডাক। নাম স্যোশালিজম।

১৯৮৫ সাল থেকেই বিপদটা আসছিল। আমার মামার বাড়ি কালনায়। কালনা থেকে হাওড়া যেতে দুদিকে দেখতাম দাঁড়িয়ে আছে ভাঙা কারশেড। শিয়ালদাহ থেকে কৃষ্ণ নগরে আসতেও দুদিকে শুধু বন্ধ জুটমিল। কলকাতা শহরতলি তখন শিল্প শ্বশান।

আসলে যারা সিপিএমের নেতৃত্ব তখন ছিলেন-তাদের কেওই ব্যাবসার সাথে যুক্ত ছিলেন না। ফলে অর্থনীতি এবং ব্যাবসা ব্যাপারটা এরা তখন একদম বুঝতেন না। মনে করতেন সরকারি উদ্যোগে সব হয়। ফলে সীমিত ক্ষমতার মধ্যে জীবিকা তৈরীর জন্যে পশ্চিম বঙ্গ সরকার জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ-অনেক ব্যাবসা শুরু করল-এবং সেগুলো চলার আগেই রুগ্ন হয়ে গেল। সরকার রেস্টুরেন্ট বা টুরিস্ট ব্যাবসা চালাতে গেলে যা হয় আর কি। না-ওই ভাবে পশ্চিমবঙ্গে জীবিকা সংস্থান করা গেল না।

কারখানা বন্ধ। কর্পরেট অফিস কোলকাতা থেকে উঠে মুম্বাই চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে লোকেরা এসেই চলেছে এবং সিপিএমের দাক্ষিন্য তারা রেশন কার্ড করে এ দেশের নাগরিক ও হয়ে যাচ্ছে। নব্বইএর দশকে গোটা পশ্চিম বঙ্গ আটকে গেল। ১৯৭৭ সালে পশ্চিম বঙ্গ শিল্পে চতুর্থ-১৯৮৬ সালে মাত্র ন বছর সিপিএম শাসনে নেমে গেল শেষের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে। নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকতে মোড়ে মোড়ে সিপিএমের বাহিনী ( তখনো হার্মাদ বাহিনী হয় নি) মাইকে করে কেন্দ্রের বঞ্চনা গাইত। ভূমি সংস্কারের ফলে গ্রামে তখনো সিপিএম প্রবল জনপ্রিয়-কিন্ত কংগ্রেস মরে যায় নি। বরং ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরার মৃত্যুর সময় কংগ্রেস ১৬ টি আসন পেলেও, সংখ্যার বিচারে সিপিএমের থেকে বেশী ভোট পেয়েছিল। ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধীর মৃত্যু বাংলার বিরোধি রাজনীতিকে ১৫ বছর পিছিয়ে দেয়। রাজীব গান্ধীর মৃত্যু না হলে, ১৯৯৫-৯৭ সালেই সিপিএমের শেষ ঘণ্টা বেজে যেত।

কিন্তু রাজীবের মৃত্যুর পর বাংলার বিরোধি রাজনীতির দুর্দিন ঘনিয়ে আসে। সোনিয়া গান্ধী না হাল ধরা পর্যন্ত, কিছু নেতাদের বালখিল্যতায় কংগ্রেস ধ্বংশ হতে থাকে। পশ্চিম বঙ্গের কিছু কংগ্রেস নেতা সিপিএমের সাথে আঁতাত করে। কংগ্রেসে সিপিএমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাবে না দেখে মমতা ব্যানার্জী তৃণমুল গঠন করেন। এই সময় এই নতুন দলটির বিজেপির খুব প্রয়োজন ছিল। তারা মমতাকে বিপুল অর্থ যোগায় প্রাথমিক ভাবে তৃণমূলকে দাঁড় করানোর জন্যে। বিজেপির সাথে তৃণমূল চলে যাওয়ায়, সিপিমের আরো সুবিধা হয়-কারন এতে সংখ্যালঘু ভোট সিপিএমে নিশ্চিত হয়।

১৯৯৫ সাল থেকে রাজ্য রাজনীতিতে জমি দখলের জন্য তীব্র হিংসার সূচনা হয়। এটা এক মাত্র নিও-ম্যালথেসিয়ান তত্ত্ব দিয়েই বোঝা যাবে। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পশ্চিম বঙ্গের জনসংখ্যা বেড়েছে ৭৮% ( যার প্রায় সবটাই গ্রামে এবং সংখ্যালঘুদের মধ্যে)-কিন্ত পতিত জমি থেকে কৃষিজমি বেড়েছে মোটে ৬%। অর্থাৎ আগে যেখানে গ্রামে জনপ্রতি 0.34 একরে জীবিকা নির্বাহ করতে হত, ১৯৯৫ সাল সেটা নেমে এল 0.21 একরে। গ্রামের মানুষের চাহিদা বাড়ল-কিন্ত উপায় কমল। ফলে ভূমিহীন ডেইলি লেবারে সংখ্যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিম বঙ্গে বাড়ল সব থেকে বেশী।

শিল্প নেই-অথচ গ্রামে ভূমিহীন কৃষকদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে ৯০এর দশকে। ফলে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যেখানে কৃষি মজুরীর পরিমান ১৯৮০ সালের রোজ ১০ টাকা হিসাব থেকে ২০০৭ সালে ৯০-১২০টাকা হল, আমাদের রাজ্যে হয়েছে ৫০-৭০ টাকা। গুজরাটে যেখানে কৃষি শ্রমিকরা বছরে ৯০ দিন কাজ পায়, আমাদের রাজ্যে পেল মোটে ২০-৩০ দিন।

এই আর্থ সামাজিক পরিপেক্ষিতেই আমাদের কেশপুর, নন্দীগ্রাম -সিঙ্গুর বুঝতে হবে। সিঙ্গুরে যাদের জমি ছিল-তাদের প্রচুর লাভ হয়েছে-কিন্ত সিপিএমের শিল্পায়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল ভূমিহীন, শিক্ষাহীন এই প্রান্তিক লেবাররা।

সিপিএমের নেতৃত্বের এর মধ্যে গুণগত পরিবর্ত্তন হয়েছে। যারা কম্প্রোমাইজ করতে পারেন নি-বেড়িয়ে গেছেন। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই সিপিএম নেতাদের ভাল বাড়ি হতে লাগল। সরকারি চাকরি একমাত্র তাদের ফ্যামিলির লোকদের জন্যেই বরাদ্দ। বুদ্ধদেব বাবু শিল্প বন্ধু ইমেজ নেওয়ার পর, মধ্যবিত্ত্ব শ্রেনীর সমর্থন ও সিপিএম পেল। কিন্ত পার্টির নেতৃত্ব ভুলে গেল বছরে কুড়িদিন কাজ পাওয়া লোকেদের কথা-

কেন ভুলে গেল? কারন যারা পার্টিতে টিকে ছিল বা সদ্য ঢুকেছিল তাদের শ্রেণী চরিত্র বিশ্লেষন করা দরকার-সবার ধান্দা দুটো কামিয়ে নেওয়া। উদাহরন দিচ্ছি। ১৯৯৬ সালে এস এফ আই এর স্টেট কমিটির এক নেতা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন-পার্টির হোলটাইমার ও ছিলেন। '৯৮ সালে দেখা হল। এর মধ্যে তিনি যে মেয়েটিকে তিনি ভালবাসতেন তাকে প্রাথমিক স্কুলে ঠিক ঢুকিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পুরীতে তার হনিমুন করার টাকাটাও এক স্থানীয় মারোয়ারী দিয়েছে-কারন মিউনিসিপালিটির স্থানীয় কাউন্সিলার তখন তিনি। ছেলেটি কি খুব অসৎ ছিল? আমার একবারও মনে হয় নি-ওর জাস্ট মনে হয়েছে লোকে দিচ্ছে, নিতে ক্ষতি কি? অথচ আমি দেখেছি এই ছেলেটিই এক সময় মাসে মাত্র ৮০০ টাকা হোলটাইমার মাইনে সম্বল করে পাঁশকুড়া পার্টি অফিসে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকত। আস্তে আস্তে প্রতিটা পার্টি অফিসের নির্বাচনে স্থানীয় ব্যাবসায়ী এবং কনট্রাক্টরদের ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। মেদিনীপুরে জোনাল এবং লোকাল নির্বাচনে পুলিশ লাগত-কারন খুনোখুনি হত। কিসের জন্যে লোক্যাল কমিটির নির্বাচনে খুনোখুনি? শুধুই ক্ষমতা? না। আসলে জিতলে জেলাতে যে শিল্প বা ব্যাবসা করতে আসবে, তার কাছ থেকে কিছু কামিয়ে নেওয়ার ধান্দা। ফলে ১৯৯৮ সালেই পার্টি দরিদ্র জনসাধারন থেকে বিচ্ছিন্ন-তাদের নতুন ভোটার বেস ফুলে ফেঁপে ওঠা নেতাদের ফ্যামিলি এবং বাঙালী মধ্যবিত্ত।

সিপিমের বিরুদ্ধে মানুষের রাগ কিন্ত ভোটে প্রতিফলিত হয় নি। কারন বিজেপির সাথে থাকায় সংখ্যালঘু ভোট মমতা পাচ্ছিলেন না। গ্রামে কংগ্রেসের সংগঠন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়-সেখানে চলে পার্টির নিরবিচ্ছিন্ন ডিক্টেটর শিপ। একটু অন্যসূরে গাইলেই বাড়ি পোড়ানো, মেয়েদের ধর্ষন সিপিএমের ক্যাডাররা চালিয়েছে। পশ্চিম বঙ্গে পুলিশ প্রশাসন সব কিছুই পার্টির দখলে-ফলে পার্টির স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কেও ছিল না।

কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে এই অধঃপতনকে নেতারা শীর্ষ স্থানীয় নেতারা প্রশ্রয় দিলেন কেন? একদম হাতে নাতে ধরা পড়লে কিছু লোককে তাড়ানো হয়েছে-কিন্ত তাতে কি? সেত ভাসমান হিমশৈলের ওপরটাও না।

কেন নেতারা এই অধপতন আটকালেন না? আরে তারা নিজেরাই ত চূড়ান্ত অধঃপতিত তখন। প্রতিটা নেতা নিজের ছেলে, বৌমাদের চাকরি-ব্যাবসা ইত্যাদিতেই সময় দিতেন বেশী। পশ্চিম বঙ্গ ডুবছিল সব দিক দিয়ে-তাতেও তাদের মাথায় চিন্তা গজায় নি। কারন সংখ্যালঘু ভোটের নিশ্চয়তা ছিল। ২০০১ সাল থেকে দলে দলে গ্রামের বেকার ছেলেরা অন্যরাজ্যে পাড়ি জমায়। এর ফলে পশ্চিম বঙ্গের গ্রামীন অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হয়-ঠিক তেমনি, গ্রামের লোকেরা প্রথমবারের মতন শোনে অন্যান্য রাজ্য পশ্চিম বঙ্গ থেকে কত এগিয়ে। পশ্চিম বঙ্গ অন্যান্য রাজ্য থেকে এগিয়ে-এই ধাপ্পাবাজি ধরে ফেলে গ্রামের লোকেরা এই সব বহিরাগত যুবকদের অভিজ্ঞতা থেকে। আমাদের রাজ্যে রাজমিস্ত্রীর রোজ ১২০টাকা-কেরালাতে ৪০০টাকা, মহারাষ্ট্রে ৩২০টাকা। এইসব তথ্য গ্রামে ঠিকই পৌছায়। ফলে ধাপ্পাবাজি চাপা থাকে না।

এর পরে ১৬-১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং সহ্য করে যখন পাড়ার নেতারা মাইকে ফুঁকদেন, এই রাজ্য বিদ্যুতে দ্বিতীয়-তখন কাটা ঘায়ে নুনে ছিটে পড়ে জনসাধারনের। ক্ষুদ্র শিল্পের মালিকদের করুন অবস্থা এই রাজ্যে। আমার জেঠামশাই গ্রামে তেল-চাল-গমকল চালান। তাদের ইনকাম উত্তোরোত্তর কমেছে। তারপরে লোডশেডিং এর জন্যে ব্যাবসায় বিশাল ক্ষতি হয়। যাদের জমি আছে-ডিজেল পুড়িয়ে জল দিতে হচ্ছে-কারন বিদ্যুত নেই। জল-সারে এত খরচ হলে, লেবারদের টাকা দেবে কোত্থেকে? ফলে কৃষির সাথে যুক্ত এক বিশাল জনসংখ্যা এই রাজ্যে ভয়ংকর ক্ষতির সম্মুখীন। তাদের কথা ভাবার মতন পার্টিতে কেও নেই। থাকলে আমরা দেখতাম সরকার কৃষিতে জল এবং বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের জন্যে কি পদক্ষেপ নিচ্ছে। কি করে থাকবে? নেতাদের ত একটাই ধান্দা-তার নিজের বা ছেলের ব্যাবসা বা চাকরী।

নন্দীগ্রাম বা সিঙ্গুর নিয়ে অনেক শহুরে বাবু লাফাচ্ছে। আমি নিজে নদীয়া মুর্শিদাবাদে অনেক চাষিদের প্রশ্ন করেছি-তারা কি ভাবছেন। না-তারা নন্দীগ্রাম নিয়ে ভাবেন নি। ন্যানো নিয়েও নয়। আমেরিকা-ভারত নিউক্লিয়ার চুক্তি নিয়েও না। কংগ্রেসের হাওয়া ফাওয়া কিস্যু ছিল না।

তারা বিরাট বিপর্যয়ের সম্মুখীন বিদ্যুত এবং জলের অভাবে। অনেকে জমিতে আম কাঁঠাল বাগান করে দিচ্ছেন। কারন চাষ করে লাভের সম্ভাবনা নেই। তার থেকে লোকসান না খেয়ে, যা দুপয়সা আসে। কিন্ত তাদের ইনকাম সাংঘাতিক ভাবে কমে গেছে। রোগ হলে চিকিৎসা করার পয়সা নেই। আর তাদের বাড়ির পাশেই নেতাদের তিনতালা বাড়ী উঠেছে।

অর্থাৎ পার্টির সামনে এখন সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে রাজ্যে উৎপাদনের সমস্যা। পশ্চিম বঙ্গে এখন সবাই সেকুলার। মুসলিম ভোট আর ওভাবে পাওয়া যাবে না। তাদের প্রায় সবাই ভূমিহীন শ্রমিক। উৎপাদন কি ভাবে বাড়াতে হয়-সেটা লেনিনবাদে লেখা নেই! ফলে এই মুহুর্তে তারা যদি রাজ্যে বিদ্যুত জল, রাস্তা, কৃষকদের জন্যে ক্ষুদ্র ঋণ ইত্যাদি নিয়ে না ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাহলে ২০১১ সালের ভোটে ৩০টা সিট ও উনারা পাবেন না। উচিত ও না।

প্রশ্ন হচ্ছে সিপিএমের কোন নেতা এই কাজ করবে? প্রকাশ কারাত থেকে নীচু স্থানীয় সব নেতাই নিজের ধান্দা নিয়ে ব্যাস্ত!

Tuesday, May 19, 2009

মিঃ কারাত, সিপিএমকে আর কত ডোবাবেন?

ইউ পি এ ট্যালি এখন ৩১৪!
কি বিপদ, ভোটের আগে কংগ্রেসকে গালি দিয়ে, এখন কংগ্রেসের পা চাটছে, তৃতীয় ফ্রন্টের সব হনুয়ালাপ্রধান মন্ত্রীরা। মন্ত্রী না হৌক সান্ত্রী হলেও শান্তি।এসবই মুসলমান ভোটের জন্যে। কংগ্রেসের সাথে না গেলে মুসলিম ভোট পাবে না সেই জন্যে। বিজেপিকে সবাই ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। এটাই সুযোগ ছিল বামপন্থীদের কাছে নিজেদের বাড়ানোর জন্যে। উলটে তারা ছোট হয়ে গেল! প্রকাশ কারাতের মতন মাথাহীন স্কন্ধ পার্টির ওপরে থাকলে যা হয়।

অর্থাৎ এই নির্বাচনে সব আঞ্চলিকনেতারা বুঝলেন মুসলমান ভোট ছাড়া উপায় নেই। তাই কংগ্রেসের সাথে না থাকলেও উপায় নেই। ফলে কংগ্রেসের আর সোনিয়ার দশপুরুষ উদ্ধার করার পর এখন ১০ জনপথে তাদের লাইন।

এটাই হতে পারত সিপিএমের সেই সুযোগ। কংগ্রেসের বিরোধি হিসাবে নিজেদের সব রাজ্যে প্রতিষ্ঠা করা। সেগুড়ে বালি, প্রকাশ কারাত তার থেকে মায়াবতি বা জয়ার সাথে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড পছন্দ করেন বেশী। মায়া, জ়য়া আবার পাকা খিলাড়ি! তারাও শক্তিমান পার্টনার ছাড়া বিছানায় যাওয়া পছন্দ করেন না। ফলে প্রাত্তন প্রেমিক প্রকাশকে ফেলে, উনারা এখন দশজন পথের জানালায় একটু উঁকি মারছে, যদি কংগ্রেসের ক্ষমতার বিছানায় আর কোন প্রেমিকা লাগে! জনগনের ভারতীয় পেটে কি আর এই সব প্লেবয় দের সহ্য হয়! ফলে পরকীয়া করতে গিয়ে একুল ওকুল দুক্লল ভাসায়ে সেক্রেটারী জেনারেল এখন পার্টির পরকালের অপেক্ষায়।প্রকাশ কারাতকে যেহেতু সিপিএম সরালো না। বামপন্থি মনোভাবা সম্পন্ন সবার উচিত, সিপি এমকে বাদ দিয়ে নিজেদের জোট করে, আগামী নির্বাচনে লড়া। বিজেপি প্রায় অপ্রাসঙ্গিক । এটাই ত সুযোগ, কংগ্রেসের বাম বিকল্প দাঁড় করানো।

Sunday, May 17, 2009

রাজ্যে সিপিএম সরকারকে কি এখনই তাড়ানো উচিত?



পশ্চিম বঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারকে এখনই ফেলে দিতে চাইছেন অত্যুতসাহী তৃণমুলের সমর্থকরা এই চাওয়ার মধ্যে নৈতিক অন্যায় কিছু নেই সিপিএম ভারতীয় সংবিধান মানে না পশ্চিম বঙ্গে পার্টির সংবিধান চলে তাদের মহান নেতা লেনিন এবং স্ট্যালিন রেড ফাসিজমে বিশ্বাস করতেন-এবং মানুষ খুন করা এই দলের কাছে হারাম না-বিপ্লবী কর্মযজ্ঞ লেনিন ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে ভোটে হারার পর পার্লামেন্ট ভেঙে দেন বিরোধিদের খুন করা শুরু করে যা রাশিয়ার ইতিহাসে লাল সন্ত্রাস নামে কুখত্যাত গণতন্ত্রের সেই ধ্বংশ যজ্ঞকেই কমিনিউস্টরা মহান নভেম্বর বিপ্লব নাম দিয়ে প্রতি বছর পালন করেন সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি তীব্র ঘৃণা-আবার সেই পার্লেমেন্টারী পদ্ধতির ঘি খেয়ে ফুলে ফেঁপে ওঠা নেতাগনের বিরোধি খুন করার লেনিনিস্ট রাজনীতি ইতিহাসের নিয়মেই আস্তাকুঁড়ে যেত আজ ১৬ই মে, ২০০৯ সালে সেই পক্রিয়াতেই সিল মোহর পড়ল এখন ভোট হলে তৃণমুল জোট ২১০টি আসন পাবে একথা নিশ্চিত এবং ভারতীয় গণতন্ত্রে অবিশ্বাসী সিপিএমকে উৎখাত করার মধ্যে কোন নীতিহীনতাও খুঁজে পাওয়া যাবে না আমেরিকাতে কোন পার্টিকে ভোটে লড়তে দেওয়া হয় না যারা আমেরিকান সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ নয় হ্যাঁ প্রকাশ কারাতের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভারতীয় সংবিধানকে রক্ষা করার শপথ ও নেন-আবার তাদের নিজের দলের স্পীকারকেও তাড়ান যার একমাত্র অপরাধ তিনি ভারতীয় সংবিধানকে পার্টির ওপরে স্থান দেন পশ্চিম বঙ্গের পুলিশ ভারতীয় সংবিধান নয়-পার্টির নেতাদের কথা অনুযায়ী কাজ করে এমত অবস্থাতে পশ্চিম বঙ্গ থেকে সিপিএম সরকারকে উচ্ছেদ করা, খুবই আইন সঙ্গত এবং নৈতিক কাজ

কিন্তু তবুও আমি বলব ২০১১ সালেই নির্বাচন হৌক বিরোধিরা এখনো ৪-৫টিজেলাতে সাংগঠনিক দিক দিয়ে দুর্বল এই সময়টাতে মমতার দল দিল্লীতে মন্ত্রীত্ব নিয়ে পশ্চিম বঙ্গের জন্যে কিছু করে-জনগণকে প্রমান দিক, তারা নতুন বাংলা গড়বে ওইসব জেলা গুলিতে সংগঠন তৈরী করুক এখন ভোট হলে বিরোধিরা ২১০ মতন সিট পাবে-২০১১ সালে ভোট হলে আমার ধারনা লেফট ফ্রন্ট ৫০টাও পাবে না যদি এরমধ্যে মমতা ভাল কাজ দেখাতে পারেন

একটি গণতান্ত্রিক খুনী রাজনৈতিক দলকে মুছে দিতে, অগনতান্ত্রিক পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া উচিত নাগনতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সিপিএমের দ্বিচারিতা, অগণতান্ত্রিক নীতিকে শুইয়ে দিতে হবে-যা রাজ্যের জনগণ দিয়েছেন আমি এই ব্যাপারে মহত্মা গান্ধীর কথা সবাইকে স্বরণ করাবো হিংসাত্মক বিজয়, আরো বেশী হিংসাকে ডেকে আনে সিপিএমের লোকেদের প্রতি হিংসা পরায়ন আচরন থেকে কংগ্রেসের ভাইরা বিরত থাকুন মনে রাখবেন কংগ্রেসের ভিত্তি গান্ধীবাদ-যার মুল কথাই হল সিস্টেমের প্রতি ঘৃণা-মানুষের প্রতি না হ্যাঁ কমিনিউজমকে ঘৃণা করুন-যে আদর্শ গোটা পৃথিবীতে চূড়ান্ত সর্বনাশ ছাড়া কিছুই আনে নি-সোনার বাংলাকে শ্বসান বাংলা বানিয়েছে-গোটা পশ্চিম বাংলাকে পার্টির হাতে জেলের কারাগার বানিয়েছে কিন্তু কমিনিউস্টদের ঘৃণা করবেন না-কারন তারাও আমাদের মতন মানুষ-গান্ধীর ভাষায় পথ হারানো মানুষ যারা মনুষ্যত্ব ভুলে মানুষকে অত্যাচার করাকে নিজেদের রাজনৈতিক পথ হিসাবে বেছে নিয়েছে তাদের যাতে আধ্যাত্মিক উন্নতি হয়-সেটাই আমাদের জন্যে, সমাজের জন্য কাম্য পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অত্যাচারী শাসক কুল বারবার এসেছে-জনগণ তাদের আস্তাকুঁড়ে ফেলেও দিয়েছে এ রাজ্যেও দেবে সেই দিনের সুপষ্ট সুবাস আমরা সবাই ১৬ই মে পেয়েছি তাই ধৈর্য্য ধরুন-সিপিএম সরকারকে ফেলে ওদের শহীদ হতে দেবেন না ওরা শহীদ হওয়ার ও যোগ্য না জনগনের হাতে ওদের শাস্তি পেতে দিন সেই শাস্তিদন্ড নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না

Saturday, May 16, 2009

নির্বাচনী রেডীও আলোচনা

আমাদের রেডিও আলোচনা চলছে

[১] কেন রাজ্যভিত্তিক ইস্যু চলছে?
http://ishare.rediff.com/music/bengali/election1/618566
[২] সিপিএমের হারার কারন?
http://ishare.rediff.com/music/bengali/cpm-keno-harche/618585

[৩] তৃণমুল কেন জিতছে?
http://ishare.rediff.com/music/bengali/mamataknojitchen/618590

[৪] প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপদাকে প্রশ্ন করছেন সোমনাথ, বাঘ

http://ishare.rediff.com/music/bengali/pcc-president-pradipda-speaking/618593

Tuesday, May 12, 2009

সেলিমের লোকজন বিজেপির এজেন্টের কাজ করছে ভোট কাটার আশায়

ভোট বড় বিষম বস্তু প্রমাণ করলেন সিপিএমের নেতৃত্ব। কোলকাতা উত্তরে জেতার জন্যে সেলিমের একমাত্র ভরসা বিজেপির তথাগত যদি সুদীপের ভোট কাটতে পাড়েন। কিন্ত বিজেপির এবার ত কিছুই নাই-না হাওয়া, না সংখ্যা, না সমর্থক। অগত্যা মহম্মদ সেলিম তার বাড়তি ছেলেদের নির্দেশ দিয়চছেন বিজেপির এজেন্ট হয়ে বসতে-যাতে লোকে কিছুটা ভোট বিজেপিকে দেয়।

সকালে আমাদের সংবাদদাতা শ্যামনগর বিধান সভা কেন্দ্রের ৪৫ এবং ৪৫ এ বুথ থেকে জানাচ্ছেন এখানে বাইরে থেকে ক্যাডার এনে তাদের বিজেপির এজেন্ট করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন একজন পরিচিত লোকাল ক্যাডার কুমার রায়। তিনি অবশ্য মানছেন না মহম্মদ সেলিম তাকে এই কাজ দিয়েছে-তার বক্তব্য বিজেপি তাকে টাকা দিয়েছে বুথে বসার জন্যে। কিন্ত আমাদের সাংবাদিকরা শ্যামনগরের অন্যান্য বুথেও সিপিএমের ক্যাডারদের বিজেপির হয়ে কাজ করতে দেখেছেন।

একেই বলে ভোট সর্বস্ব রাজনীতি। যার জন্যে মহম্মদ সেলিমকে হনুমান বাবার চরণামৃত খাওয়া থেকে বিজেপিকে এজেন্ট সাপ্লাই-বিজাতীয় সবকাজকেই 'সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব' সাধনের উদ্দেশ্যে করতে হয়। বিমান বাবু শুধু মুখেই বলেন-তাদের সেলিম বা তড়িৎ তরফদারের ফটো লে আউট রাস্তায় কমে না। বাড়তেই থাকে।