Wednesday, February 25, 2009

রাহুল গান্ধী কি নেতৃত্বের যোগ্য?



বামবাঙালীকে রাহুল গান্ধী নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রত্যুত্তরে নাক সিঁটকানি অনিবার্য্য। সেই বামবাঙালী যারা মার্ক্সবাদকে মাছভাত বানিয়ে খাচ্ছেন-এখনো বোঝেন না, মার্ক্সীয় তত্ত্বের মূল সুত্র এবং দর্শনের ভিত্তিপ্রস্তরটা কি। যাইহোক-ভারতবর্ষে এবার ১০ কোটি নতুন ভোটার। রাহুল গান্ধীর তাড়া খেয়ে আদবানীজিকে এখন কলেজের জিমে গিয়ে আইরনিং করে ভিডিও তু্লে বোঝাতে হচ্ছে ১৮ আর ৮১ একই ব্যাপার। জিম করে শরীরটাকে একটু উলটে নিলেই হল!

কি আজব ব্যাপার বলুন ত! আমি সেই কোনকাল থেকে আফশোস শুনে আসছি গান্ধী ডাইন্যাস্টি অযৌত্বিক! নেহেরুর পান্ডিত্য নিয়ে কেও প্রশ্ন তোলে না- ইন্দিরা গান্ধী নিয়ে আগে উঠত-এখন মেনে নিয়েছে। তবে রাজীব গান্ধী থেকে রাহুল গান্ধী-নাম এলেই বাম বাঙালীর নাক সিঁটকানো অব্যাহত। রাজীব শাহনানু মামমা ইত্যাদি নিয়ে কতগুলি মারাত্মক ভুল করেছিলেন-তবে এটাও সত্য, তার হাত ধরেই ভারতে উদার অর্থনীতি এসেছে-যার ফলে তার আমলে জিডিপি, পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী বৃদ্ধি পায়। যাইহোক প্রশ্ন হচ্ছে গান্ধী ফ্যামিলির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব গণতন্ত্রে থাকতেই পারে। কিন্ত সেটা যুক্তি সঙ্গত? না মেছোভাতে বামপন্থী হবার অভিমান?

সেই সুত্র ধরেই রাহুল গান্ধীকে দেখা যেতে পারে। রাহুলের ব্যাগ আছে- ব্যাগেজ নেই। কংগ্রেসের সাধারন সম্পাদক হিসাবে রোগটাকেও ধরেছেন। পার্টির মধ্যে গণতন্ত্রের অভাব আছে। ওপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপানো হয়। নেতা চাপানো হয়। পুরানো নেতারা কংগ্রেসী আলখাল্লা চাপিয়ে নতুনদের উঠতে দিচ্ছে না। নতুন মুখ নেই। রোগটা সবার জানা। ডাক্তারীটাও রাহুল ভালোই করছেন। বৃদ্ধদের পাত্তা না দিয়ে সরাসরি তরুন নেতাদের কাছে যাচ্ছেন। কাগযে বিজ্ঞাপন দিয়ে, জনসংযোগ বাড়িয়ে তরুনদের কংগ্রেসে যোগ দিতে ডাকছেন।

গান্ধীমুখী কালচার যে কংগ্রেসের বিরাট ড্রব্যাক সেটা স্বীকার করতেই হয়। ভোটের আগে জেতার জন্যে যদি রাহুল গান্ধীর বক্তৃতার ওপর নির্ভর করতে হয়-সেটা দুর্ভাগ্যের। সেটা রাহুল নিজেই বলেছেন। কিন্তু কংগ্রেসীরাও এত নীচে নেমে গেছে, নিজেরা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ঘুমানো ছাড়া কিছুই করে না-ফলে গান্ধী পরিবারের সৌজন্যই ভরসা। এগুলো নিসন্দেহে দেঊলিয়াপনার লক্ষন। এটাও লক্ষ্যনীয় রাহুল গান্ধী এসব সবই স্বীকার করে নিচ্ছেন। কিন্তু তাতে কংগ্রেস বদলাচ্ছে কি? রাজস্থানে জেতার পেছনে কোন সন্দেহ নেই গেলহটের কৃতিত্বই সব থেকে বেশী ছিল- অথচ দেখলাম কংগ্রেসীরা সবাই মিলে রাহুলজী জিন্দাবাদ বলছে। দিল্লীতেও কংগ্রেসের বিজয়ে শীলা দিক্ষিতের ভূমিকা মূখ্য ছিল-অথচ দেখলাম আমজনতা মিলে রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ শব্দে পাখিসব কলরব শুরু করেছে। এগুলো সবই সমর্থকদের দোষ। এর জন্যে রাহুলকে দোষ দেওয়া অবশ্যই অন্যায়। রাহুলই একমাত্র রাজনীতিবিদ যে অন্তত জাত বা ধর্মের প্রশ্নে পরিস্কার ভাবে বলতে পেরেছে সেসব অতীতের জিনিসে আঁকড়ে ধরে থাকলে চলবে না-ভবিষ্যতে সবাইকে মানুষ ভেবেই কাজ করতে হবে। অতীত নয়-ভবিষ্যত-এই রাহুলের চিন্তাধারা নিসন্দেহে আশাব্যাঞ্জক।

আসলে বামবাঙালী নিজেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পন্ডিত মনে করে। এটা ভুলে গিয়ে, সমাজের ইতিহাসের মার্ক্সিস্ট রিডাকশনিজম বা দ্বান্দিক বস্ত্রুবাদ টাইপের খিচুরীর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সমাজ এবং রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এটাই সত্য-প্রতিটা সমস্যার আলাদা বাস্তববাদি সমাধান চাই। কোন আদর্শবাদ দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না। প্রতিটা সমস্যাই এক বা একাধিক দ্বন্দ-যার সমাধান প্রতিটি পরস্পর বিরোধি গ্রুপের কথা শুনে-উইন-উইন কনট্রাক্টের মাধ্যমে করতে হবে। সেটাই প্রকৃত গণতন্ত্র। শুধু ব্যাবসায়ীদের কথা শুনলে সাধারন মানুষের অশেষ দুর্ভোগ-আবার ব্যাবসায়ীদের চোর-ডাকাত বলে তাড়িয়ে দিলেও, সাধারন মানুষের দুর্দশা বাড়বে বই কমবে না। সুতরাং বাজার এবং ব্যাবসায়ীরা যাতে সমাজ এবং মানুষের স্বার্থ রক্ষাকরে ব্যাবসা করতে পারেন, রাষ্ট্রকে সেই মধ্যমপথেই চলতে হবে। এটা ভুলে গেলে চলবে না, ভারতে এখন ৫০% এর বেশী লোক এই বেসরকারী বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। গান্ধী পরিবারে সাফল্য এই যে, উনারা এখনো পর্যন্ত মোটামুটি মধ্যম পথেই দেশটাকে রাখতে পেরেছেন-গণতন্ত্রও সেই জন্যেই টিকে আছে। এটা ঠিক রাইজিং ইন্ডিয়ার স্বাদ একটা বড় অংশের কাছে পৌঁছল না-আবার না না করে-গ্রামেও মোবাইল ফোন বা আই টির ব্যাবহার বেশ ভালোই চলছে এখন। রাহুল গান্ধী গ্রামে গ্রামে প্রযুক্তিকে পৌছে দেবার যে চেস্টা করছেন তা স্বাগত। তবে দুর্নীতির জন্যে এই সমস্ত প্রকল্পের টাকা যে জনগণের হাতে পৌছাচ্ছে না-সেই সমস্যার সমাধানও প্রযুক্তি দিয়েই করতে হবে। কিন্ত এই যে করতে হবে-এটা নির্ভর করছে-আমরা বাস্তববাদি চোখে সমস্যাটাকে বোঝার চেস্টা করছি কি না। তার সমস্ত সমাধানগুলিকে নিয়ে আমরা ভাবছি কি না। সমাধান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তি নির্ভর বা এদের মিশ্রন হতে পারে-কিন্তু একটা সমস্যাকে নিরেপেক্ষ ভাবে বোঝা
এবং তার সেরা সমাধান বার করার জন্যে অবশ্যই সেরা পথটিকে বাছতে হবে। এখন মাওবাদি সমস্যার সমাধানের জন্যে আমরা যদি শুধু
রাজনৈতিক বা শুধু অর্থনৈতিক চেষ্টা করি-এ সমস্যার সমাধান আমরা করতে পারবো না। এখনো পর্যন্ত যা দেখছি রাহুল গান্ধী বাস্তব্বাদি ভাবে সেরা পথটিকে বাছার চেষ্টা করছেন-কারন তার ব্যাগেজ নেই।

আর যার ব্যাগেজ নেই-সেই প্রকৃত জীবনপথিক।

1 comment:

  1. বাম বাঙ্গালীর সমালোচনা করে আপনি মমতার মত চটি জুতো পরে নিজেকে আলাদা ভাবার যে প্রবণতা সেই বিশেষত্বের প্রবেশ করে নিজের অজান্তে আপনার আমিত্ব ই বেশি প্রকাশ হল না কি???এটাই সাধারণের থেকে একটা আলাদা ব্যক্তিত্বের অন্য একটি রূপ-
    শুভঙ্কর সরকার

    ReplyDelete