Tuesday, February 17, 2009

স্বাগতম রঘুনাথপুর


ন্যানো বিদায়ের বিষাদবাদ্যের পর রঘুনাথপুরে শ্যামস্টীলের ৩০০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্ধোধন রাজ্যবাসীর মনে নিশ্চয় একটু আশা দিচ্ছে। পাশাপাশি এটাও বিচার করা দরকার-পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, খরগপুরে কোন প্রকল্প হলে জমি নিয়ে বিরোধিতা হচ্ছে না-এই সমস্যা তৈরী হচ্ছে কোলকাতার আশেপাশের শহরতলিতে-যেখানে জমির উর্বরতা, ভাগীদার এবং জনসংখ্যার চাপ অনেক বেশী।

সিঙ্গুরে যারা ৪০০ একর জমি দিলেন না-পশ্চিম বঙ্গের ভবিষ্যত ক্ষতি করে-তাদের পেছনে মাত্র দুটো যুক্তিবাদি কারন অনুমান করা যায়-
(১) আন্দোলন করে দরদাম বাড়াতে চাইছিল জমির দাবীদাররা
(২) টাটার কোন বিরোধি পার্টি, সম্ভবত এই আন্দোলনকে টাকা জুগিয়েছে

মমতার অবশ্য এসব দায়ভার কোনটাই ছিল না। যেভাবেই হোক এর মধ্যে থেকে ভোট ব্যাঙ্ক গছানো ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্যে তিনি সফল হয়েছেন-উপনির্বাচন দেখে বলা মুশকিল। নন্দীগ্রামে সিপিএমের নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগলে দিয়েছে জনগন। সিঙ্গুরে কি হবে সেটা এখন বোঝা যাচ্ছে না। কারন অনেক বেকার ভাইএর সর্বনাশ দিদি সেখানে করেছেন। আবার সিপিএমের বলপূর্বক জমি দখলের অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনেকেই ক্রদ্ধও। সুতরাং কোনদিকে ভোট ঘুরবে বলা মুশকিল। মনে রাখতে হবে, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে পুরুলিয়া থেকে বিরোধি পক্ষ হাওয়া হয়ে গেছে-কারন বিচ্ছিন্নতাবাদি এবং শিল্পবিরোধি দিদিকে তারা মোটেও পছন্দ করে নি।

এইসব বিচার করে, বামফ্রন্টের শিল্প নীতিতে কোলকাতা সহ শহরতলীকে রাখাই উচিত না-তা সেই এলাকা শিল্পপতিদের যতই পছন্দের হৌক না কেন। একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন-বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গের গ্রামগুলি থেকে বহু সংখ্যায় পুরুষেরা অন্যরাজ্যে কাজ করছে। সেই সব রাজ্যের সমৃদ্ধির খবর মানুষের কাছে কিন্তু পৌঁছচ্ছে। আমাদের রাজ্যে চালে গমে সেরা বলে পাইকারী ঢপ দিয়ে, গ্রামের লোকেদের ভুলিয়ে রাখা আর যাবে না। লোকে প্রশ্ন তুলবেই, আমাদের রাজ্য সেরা হলে আমাদের এরাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে কেন যেতে হয় কাজের সন্ধানে? গ্রামের লোকেদের টুপি পড়িয়ে আর রাখা যাবে না-কারন তাদের একটা বড় অংশই এখন অন্যরাজ্যের -বিশেষত পশ্চিম ভারতের সমৃদ্ধি সচক্ষে দেখেছেন।

সুতরাং বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া-ইত্যাদি যেসব জেলাগুলি শিল্পে পিছিয়ে-সেখানেই শিল্প স্থাপনের সদিচ্ছা দেখাক সরকার। এই জেলাগুলিতে তৃণমুলের উপদ্রব খুব বেশী নেই। আর টাটার বিপক্ষর মতন শাঁশালো পার্টি এখানে আন্দোলনে টাকা জোগাবে -সেই সুযোগও কম। মমতা যে ধ্বংশের রাজনীতিতে নেমেছেন-তাতে তিনি ঘরে ফসল তুলবেন-এত বোকা মনে হয় না রাজ্যের লোক। পঞ্চায়েতের সাফল্য অনেকটাই সিপিএমের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের স্বৈরাচারের জন্যে। সেটার সাথে শিল্প-জমির রাজনীতিকে জড়ানো ভুল। যে রাজ্যের ৫৪% মানুষ সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িয়ে-মাত্র ২৭% কৃষির সাথে জড়িত এখন -সেখানে শিল্পের পক্ষে ৫০% এর বেশী মানুষ থাকবেন। এই হিসাবটা মমতা ব্যানার্জি না করলে ভুল করবেন। তার শক্তি মোটে চারটে জেলায়-দুই মেদিনীপুর আর দুই চব্বিশ পরগণায়। হুগলী, নদীয়াতেও তৃণমূল বেশ দুর্বল। বাকী জেলাগুলিতে সিপিএম বিরোধি ভোট আছে-তার কিছু কিছু তৃণমূলে যাবে।

একটা জিনিস মমতা ব্যানার্জির মনে রাখা উচিত। তার পাশে যারা জুটেছে-তারা সিপিএমে ক্লান্ত-সিপিএমের শেষ দেখতে মরিয়া এই রাজ্যে। রাজ্যের মানুষকে এই অবস্থায় ঠেলার জন্যে সিপিএমই দায়ী। সেটাও মানছি। কিন্ত তৃণমূল ক্ষমতায় এলেই, মানুষের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে সেটাও দেখছি না। বরং সিপিএম তৃণমূল সংঘর্ষে বিরাট বিপর্যয়ও হতে পারে। সিপিএমের এই ৩২ বছরে আমরা কি দেখেছি? যে লঙ্কায় যায়-সেই হয় রাবণ। ক্ষমতার সেই সমীকরন বদলাবে? বরং তৃনমূলে যেহেতু গণতন্ত্র নেই-ফলাফল আরো ভয়াবহ হতে পারে। সিপিএমে তাও লোক্যাল কমিটিতে ফয়সালা হয়-মমতা এলেত সবাইকে নিত্যদিন কালীঘাটের সামনে বসে থাকতে হবে।

তৃণমূলের যারা রাজনীতি করছেন-তারা এই দিকটা ভাবুন। পার্টির মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন, উন্নয়নের জন্যে ইস্তাহার-এসব কিছুর উর্ধে যদি সিপিএম বিরোধি ঘৃণাকেই তারা মূল পাথেয় করেন-তাহলে সেই ঘৃণা তাদের পার্টিকে একদিন ধ্বংশ করবে। আপনারা অন্ধ বিরোধিতা ছেড়ে-উন্নয়নের রাজনীতি করুন। সস্তায় বাজিমাত কখনো সখনো হয় বটে-কিন্ত সেই বাজি একদিন বাজিগরকেই উচ্ছন্নে পাঠায়।

No comments:

Post a Comment