Thursday, February 12, 2009

শিক্ষাখাতে ব্যার্থ হয়ে কলেজ ইউনিয়ান দখলে উল্লাস


প্রেসিডেন্সি কলেজে এস এফ আই এর বিজয়ে সিপিএমের উল্লাস আমাকে যৎপরোনাস্তি আশ্চর্য্য করেছে। মাত্র দু সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর সমীক্ষা বলছে পশ্চিমবঙ্গ পেছনের দিক দিয়ে দ্বিতীয়। সেটা নিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের কোন হোলদোল ত ছিলই না-বরং একটি মিটিং এ মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, এটা না কি তাদেরকে হেয় করার চক্রান্ত! সত্যি কি বিচিত্রই না এই দেশ! বাঙলা এখন শিক্ষায় পেছনের দিক থেকে দ্বিতীয়-সেটা নিয়ে পার্টিতে আলোচনা হল না। এমনকি তাদের পোষ্য ছাত্র সংগঠনটিও এই নিয়ে একটিবার ও রা করলো না-পাছে তাতে ছাত্রনেতাদের পার্টি ক্যারিয়ার ধ্বংশ হয়। আর এরা কোন কলেজের ক্যান্টিন সেক্রেটারী হতে পেরেছে-সেটা নিয়ে লাফালাফি করছে!

আমি আগেও লিখেছি। হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্টদের মতন কমিনিউস্টরাও যাবতীয় কিছু-এমনকি হেঁসেলের আরশোলার মধ্যেও চক্রান্ত খুঁজে পান। কারন এই আদর্শবাদগুলি আসলেই আলখাল্লা-ভেতরের রাজনীতিবিদটি সেই ক্ষমতালোভি মানুষ। ফলে যারা উঠতে বসতে আত্মসমালোচনার কথা বলেন, তারা এই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন সমীক্ষাটিকে চক্রান্ত বলে আমাদের ছেলেমেয়েদের আরো খাদের দিকে ঠেলে দিলেন! তার আগে এই শিক্ষা সূচকটি বোঝার চেস্টা করি। ছাত্রদের শিক্ষার মান থেকে, শিক্ষক,ছাত্র অনুপাত এবং শিক্ষায়তনের সুবিধা-এক কথা শিক্ষার সর্বাঙ্গীন সমীক্ষার দ্বারা এই শিক্ষাসূচক বা এডুকেশনাল ডেভেলেপমেন্ট ইন্ডেক্স তৈরী হয়েছে।





পশ্চিমবঙ্গের তলায় শুধু অরুণাচল প্রদেশ আর বিহার!

সূত্রঃ
এরকম নই যে আমরা শিক্ষার এই বেহাল হাল নিয়ে কিছুই জানি না। বামফ্রন্ট সরকারের শিক্ষানীতিতে স্কুলের শিক্ষকদের পেস্কেল ছাড়া আর কিছুই স্থান পায় নি। ছাত্ররা সব থেকে অবহেলিত। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি অবশ্যই শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ছাত্রদের তা উপকারে না এলে, পুরো টাকাটাই জলে। এই চুড়ান্ত ব্যার্থতার অনুসন্ধানে আজ প্রশ্ন উঠবেইঃ
(১) শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধিতে এই সরকারের ভূমিকা কি? স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টীউশন এবং প্রাইভেট স্কুলের রমরমা আটকানো গেল না কেন? প্রাইভেট টিউশনের বিরুদ্ধে যখন ব্যাবস্থা নেওয়া শুরু হল-তখন শিক্ষা ব্যাবস্থার আর কিছুই বাকী নেই। এর কারনটাও আমরা জানি। শিক্ষক সংগঠনগুলির সাথে বেতন নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে-শিক্ষাকে বাঁচাবার জন্যে কি করা যায়-সেই চেতনাটা বা ইচ্ছাটাই ছিল না।
(২) মাস্টার ডিগ্রী, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারীর ছাত্রদের মাত্র ৪% সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়া। এই সংখ্যাটা আগে ৫০% এর বেশী ছিল। মিউনিসিপালিটির সরকারি স্কুলে ছাত্র নেই। দিন আনে দিন খাই এমন পিতা মাতাও সাধ্যের বাইরে গিয়ে ছেলে-মেয়েকে "বেসরকারী ইংরেজী স্কুলে" পাঠাচ্ছেন। তাহলে কি সরকার ধরেই নিয়েছে-শিক্ষার কোন দায়ভার তারা নেবে না? আমেরিকাতে পর্যন্ত বেসরকারী স্কুল একদমই চলে না। সব ভাল স্কুলই সরকারী। শিক্ষার বেসরকারীকরন-প্রাইভেট স্কুল-প্রাইভেট টিউশনএগুলো চলতে দিলে, রাজ্যের শিক্ষার বারোটা বেজে যাবে ( যদি কিছু বাকি থাকে)। শিক্ষার বেসরকারীকরনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই এই "জনগণের সরকার" নিল না। বরং উৎসাহিত করেছে সরকারি শিক্ষাকে উচ্ছন্নে পাঠিয়ে। সরকারি শিক্ষাকে ধ্বংস করে যার বেসরকারী শিক্ষায় মদত দেয়-তারা যদি প্রতিক্রিয়াশীল না হয়-জানতে ইচ্ছা করে, প্রতিক্রিয়াশীলতার সংজ্ঞাটা কি? শামুক থেকে আরশোলাকে প্রতিক্রিয়াশীল বললেই-ধাপ্পাবাজি চাপা থাকে?
(৩) সরকারি স্কুলগুলি পরিদর্শনের অভাবে উচ্ছন্নে গেছে। অথচ আগের সোভিয়েত ইউনিয়ানে বা বর্তমানের চীনে, যেখানে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সবথেকে বেশী সফল হয়েছে-সেখানে স্কুলগুলির সাফল্যের পেছনে ছিল, কঠিন পরিদর্শন ব্যাবস্থা। সরকারি পরীক্ষায় স্কুলের রেজাল্ট বাজে হলে-আগের সোভিয়েত ইউনিয়নে হেডমাস্টারের চাকরি যেত। স্কুলের সিলেবাস প্রতিবছর বদলানো হত-যাতে শিক্ষকরা গাছাড়া মনোভাবে না থাকেন। আমাদের এখানে স্কুলের কোয়ালিটি কণ্ট্রোলের জন্যে আগে যা ইন্সপেকশন ছিল-সেটুকুও উঠে গেল। ইন্সপেক্টর আর কি করবেন? তিনি এবং তার যাকে টাইট দেওয়ার কথা সেই শিক্ষককুল-সবাই বেতন বৃদ্ধির জন্যে পার্টির পদলেহনে জীবন সার্থক করছেন। ছাত্রদের কথা তারা ভাববেন কেন? এই সরকারও ভোটব্যাঙ্ক ছাড়া কিছুই ভাবে না-ছাত্রদের ত ভোট নেই-আর তাদের শিক্ষাটাও এমন দেওয়া হচ্ছে-নিজেরা যে বঞ্চিত-যেটুকু ভাবার মতন মৌলিক চিন্তা করার ক্ষমতাও কোন ছাত্রর নেই!
(৪) স্কুল কমিটিগুলো-যা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হওয়া উচিত-সেখানেও পার্টি ঢুকেছে। তাহলে আর বাকি রইলো কি? কমিটির প্রধান, পঞ্চায়েতের প্রধান আর স্কুলের প্রধান যখন একই পার্টির-কে কার কাছ থেকে দায়বদ্ধতা চাইবে? সবাই ত পরস্পরের স্বার্থে নিয়োজিত। এখানেও সেই একই প্রশ্ন উঠবে-তাহলে ছাত্রদের স্বার্থ দেখবে কে? স্কুল কমিটি শেষ ভরসা। গ্রামের লোকেরা চাই- তাদের স্কুল সেরা হৌক। আমেরিকাতেও স্কুল ডিস্ট্রিক্টে শিক্ষার মান নিয়ে, স্থানীয় লোকেরা গর্ব করে, চিন্তা করে। এই ধারা গ্রামবাংলায় ছিল বহুদিন। স্কুল কমিটিতে পার্টি ঢুকিয়ে-এই শেষ ভরসাস্থলটুকুকেও শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, আমরা যেটা দেখছি-সেটা হচ্ছে শিক্ষা ব্যাবস্থার প্রতিটা গুরুত্বপূর্ন অঙ্গনে-সিলেবাস, শিক্ষকের দায়বদ্ধতা, ইন্সপেক্টরের দায়বদ্ধতা, স্কুল কমিটির স্বাধীন পরিচালন ক্ষমতা-সর্বত্র পার্টির অদৃশ কালো হাত-ভোট যতটা চেয়েছে-ছাত্রদের শিক্ষার হাল কি হবে-তাই নিয়ে বিন্দুমাত্রও ভাবে নি।
আর শুধু সিপিএমকেই গালাগাল দিই কেন। শিক্ষা ব্যাবস্থার এত বড় বিপর্যয় নিয়ে তৃণমুল বা কংগ্রেসই বা কোন আন্দোলন করল? মমতা ওঁত পেতে আছেন সিপিএম কবে কোন মহিলার শাড়ী ছিঁড়বে-আর সেই ছেঁড়া ফাঁকদিয়ে গলে- তিনি রাইটার্স দখল করবেন। শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে দিল শাসক দল-তাই নিয়ে বিরোধি নেতাদের কোন আন্দোলন নেই! তারা আছেন নিজেদের ঘর গোছানোর তালে। সাধে ছাই ফেলতে ভাঙা কুলোর মতন সিপিএম ভোট কুড়ায়?
তারফল এই-আমরা আজ শেষের দিক থেকে দ্বিতীয়-বিহারের আগে! তাতে কি? আসুন-আমাদের পার্টির পোষ্যছাত্ররা প্রেসিডেন্সি কলেজের ক্যান্টিন সম্পাদকের পদে জিতেছে-তাই আহ্লাদে আটখানা হয়ে নাট্যমঞ্চে রাজার আলখাল্লাখানা আবার দেখাই! বাজারে ফাটা প্যান্টতো আর দেখানো যাচ্ছে না-তাই রঙ্গমঞ্চই শ্রেয়।









No comments:

Post a Comment