সিপিএম যেমন একটি ব্যাধির নাম- ঠিক তেমনই তৃণমূল হচ্ছে সেই রোগ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে বঙ্গবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সিপিএম কোন পার্টির নাম না- এটি অগণতান্ত্রিকতার একটি রোগ-যেখানে পার্টির সমালোচনা হচ্ছে হারাম। পার্টির সমালোচকরা হচ্ছে কুত্তা, প্রতারক, গণশত্রু, টাকা খাওয়া লোক! আর পার্টি বিরোধিরা হচ্ছে কাফির, যাদের মেরে ফেলা পার্টির সিলমোহর দেওয়া পূন্যকর্ম। জায়েজ। সরকার, আদালতের ওপরে পার্টি, হেঁসেলে পার্টি- স্কুল, কলেজ, হাঁসপাতাল সর্বত্র পার্টিতন্ত্র কায়েম করে মানুষকে পার্টির বশ্য করা ছিল সিপিএমের পার্টি লাইন।
তৃণমূল ও আসলেই কোন পার্টি না। কোন এজেন্ডা বা আদর্শ তাদের নেই। সিপিএম মানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতা যেভাবে কেড়ে নিয়েছিল, মানবতা ও সভ্যতাকে যেভাবে বৃদ্ধাষ্ঠুঙ্গ দেখিয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মানুষ মমতার নেতৃত্ব মেনেছে। কারন সিপিএমকে না সরাতে পারলে, পশ্চিম বঙ্গে ভাল কিছু হওয়া অসম্ভব।
কিন্ত গত বছরে লোকসভা ভোটে জেতার পর-তৃনমূলের তীরেও এখন অনেক বুদ্ধিজীবি ভেড়ুয়া জুটেছে। বস্তুত এরা সিপিএম কালচারই তৃণমূলে ঢোকাচ্ছেন। ইদানিং যে মমতার সমালোচনা করবে-সে সিপিএমের টাকা খাওয়া লোক-ইত্যাদিন প্রচার অব্যাহত।
সাংবাদিকতার মান আমাদের বঙ্গে এমনিতেই করুণ। আজ পাঁচু রায়ের একটা লেখা দেখে চমকে উঠলাম প্রতিদিনে।
সুমন চট্টোপাধ্যায়কে সেখানে বলা হচ্ছে সিপিএমের টাকা খাওয়া দালাল-যেহেতু উনি তৃণমুলের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ন নেতাদের সমালোচনা করেছেন! মমতার কিছু রাজনৈতিক লাইন মানতে পারেন নি! এই কালচার ত আমরা সিপিএমে দেখতে অভ্যস্ত-যেখানে পার্টির সমালোচনা মানেই সে হয়ে যায় দালাল! এবং সিপিএমের এই স্বৈরাচারী কালচার আমরা পছন্দ করি না বলেই, ওরা ইতিহাসের খাতায় নাম লিখিয়েছে। আমরা চাই আমাদের গণতন্ত্রের অধিকার। আমরা চাই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেখানে সমালোচনা করাকে সদর্থক এবং গঠনমূলক ভাবে দেখা হবে।
সমালোচনা এবং ভিন্নমত ছারা গণতন্ত্র মজবুত হয় না। সেই গণতন্ত্র তত শক্তিশালী যেখানে ভিন্নমতের কদর বেশী। সেই সমালোচনা পার্টির ভেতরে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ হয় না তা সিপিএমের ৩৩ বছরে একাধিবার প্রমাণিত। আমার পার্টির কোন লোক যদি চোর হয়, সেটা প্রকাশ্যে সমালোচনা করলে কি ক্ষতি? কি করে?
কে চোর জনগণ তা ভালোই জানে। তাই চোরকে ঢাকা মানে শাকদিয়ে পচা মাছ ঢাকা। তার থেকে, না ঢেকে স্বীকার করে নিলেই ত লাভ-জনগণ বুঝবে পার্টিতে ওই চোরটার ভবিষ্যত আর নেই। আর ভিন্নমত যদি হয় নীতিগত ভাবে-সেটা প্রকাশ্যে আনাইত ভাল। জনগন বুঝুক কিসের ভিত্তিতে পার্টির নীতিমালা চালু হচ্ছে। নীতি বা রাজনীতি-সবই যদি এই জনগনের জন্যে হয়, তাহলে সেই দ্বন্দের আলোচনা জনগনের সামনে হলে ক্ষতি কি আছে?
সরি ভুল বল্লাম।আছে। প্রকাশ্যে এই নীতি এবং রাজনীতির দ্বন্দ নিয়ে আলোচনা করলে পার্টির মধ্যে যারা ক্ষমতার মৌতাত নিয়ে বসে আছে , তাদের অসুবিধা। পার্টির মধ্যে, প্রকাশ্য সমালোচনা চালু থাকলে প্রকাশ কারাত লোকসভা ভোটের পরেই সিপিএম কর্মীদের তীব্র সমালোচনায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হতেন। কিন্ত এই ধরনের পার্টি শৃঙ্খলা নামে একটি রত্নকে পুজো করে কিছু লোকের ক্ষমতা রক্ষা করা হচ্ছে। ঠিক এই কালচারই তৃনমূলে ঢুকছে।
যে সব 'বুদ্ধিজীবি' বাঁদর এবং বাঁদরামোর কারনে জনগন সিপিএম ছেড়ে তৃনমূলের দিকে ঝুঁকছে, সেই বাঁদরদের উৎপাত এবার তৃনমুলে। রাজা বদলায়, রাজার আলখাল্লা বদলায় না-রাজদন্ড ও বদলায় না। রাজকবি ও না। জনগণ শুধুই বোকার মতন অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে নতুন রাজার অপেক্ষায় থাকে।
Wednesday, June 9, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment