Wednesday, June 2, 2010

পুরসভা নির্বাচনঃ পাটিগণিত এবং উপলদ্ধি

ভোট পাটিগণিতের বাইরেও রাজনীতির আসল দান উপলদ্ধির জগতে। তৃনমূল সুইপ করল না সিপিএমের সাথে পজিশন সোয়াপ করল ( আক্ষরিক এবং ব্যাবহারিক অর্থে) -তার বাইরেও বেশ কিছু চিন্তা আমাদের থেকেই যায়।

প্রথম প্রশ্ন -বামফ্রন্টের কি নৈতিক অধিকার আছে সরকার চালানোর? আনন্দবাজার লিখেছে নেই। সত্যিই জনগন এই সিপিএম নামক অচলায়তনের ওপর সম্পূর্ন বিশ্বাস হারিয়েছে। কিন্ত তার মানে কি সিপিএমের পদত্যাগ রাজ্যে রাজনীতির জন্যে মঙ্গল? জনগণ দ্বারা ধিকৃত একটি সরকারের কি উচিত ফাটা প্যান্ট পরে ঘসতে ঘসতে রাস্তা পার হওয়া ভবিষ্যতের লিখন যখন স্পষ্ট?

আমি মনে করি না সিপিএমের পদত্যাগ করা উচিত। কারন সিপিএম বলে ত কোন মানুষ নেই-এটি একটি ব্যাধির নাম। লেনিন আবিষ্কৃত পার্টিতন্ত্র। যা মানুষ, সংবিধান এবং রাজ্যের ওপরে পার্টিকে বসাতে চেয়েছে-সমস্ত মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে নিজেদের স্বার্থের জন্যে। রাজনীতির এই জঘন্যতম মেরুকরন এবং তার থেকে আহুত রাজনৈতিক হিংসা ভারত কেন পৃথিবীর অন্যকোথাও বিরল। এর জন্যে ১০০% দায়ী সিপিএম। লোকে যখন পুলিশের ওপর ভরসা পায় নি, নিজেরাই অস্ত্র হাতে বিরোধিতা করেছে। ইন্ধন জুগিয়েছে তৃণমূল-এবং সেটাই তাদের বর্তমানের ক্ষমতার উৎস। বর্তমানে তাদের মেরুকরণের ভাষা সিপিএমের থেকে কিছু মাত্র কম না। দু পার্টির ই কিছু পোষা বুদ্ধিজীবি এলশেসিয়ান আছে-প্রভুর জন্যে কেবল টিভিগুলোতে তাদের প্রচুর ঘেও ঘেও শোনা যায়।

বিবেকের কথাগুলো, জনগণের কথাগুলো, পরিবেশের কথা, আদিবাসিদের কথা বলার জন্যে আজ পশ্চিম বঙ্গে কেও নেই। কংগ্রেস এই সুযোগটা নিতে পারত-কিন্ত নেতা কোথায়? ভোটবান্ডিল গোনার বেশী বিদ্যা বা রাজনৈতিক দক্ষতা তাদের নেই।

তাহলে কে পৌঁছে দেবে নন্দীবাবুর কথা যিনি কৃষ্ণনগরে বিদ্যুতের অভাবে ছোট্ট প্লাস্টিক কারখানা তুলে দিচ্ছেন? কে খোঁজ রাখবে রোঘুদোকানির যার ব্যাবসা হাঁসফাঁস করছে চারিদিকে মলের উত্থানে? এত বড় পৌঢ় নির্বাচনে কাওকে কি বলতে শুনলাম কোলকাতায় জলের স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে-ভয়ঙ্কর জলকষ্টের সামনে পড়বে কোলকাতা, আমাদের সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে? বায়ু দুষনের জন্যে কোলকাতায় ৪% লোকের নানান ক্যান্সার হচ্ছে-আরো হবে-দূষনমুক্ত কোলকাতার জন্যে কোন পার্টির , কোন বুদ্ধিজীবির আন্দোলন দেখতে পেলেন এই পুরনির্বাচনে?

সবাই আমরা বনাম তোমরা নিয়ে ব্যাস্ত। এই "ক্লাবিং" টা বিবর্তন জনিত কারনে, মানুষের মজ্জাগত। নানান বিবর্তনীয় সমাজবিজ্ঞানের গবেষনায় তা প্রমাণিতও বটে-কিন্ত তৃণমূল বনাম সিপিএমের তীব্রমেরুকরণ কি আমরা চাইছি? না আমরা চাইছি আমাদের সমস্যাগুলোর দিকে পার্টিগুলো নজর দিক? সেই নেতা দুই পার্টিতে একজনও কি আছে?

ঠিক সেই কারনেই তৃণমুলের হাতে একছত্র ক্ষমতা থাকা উচিত না। ক্ষমতাই আবাহমানকাল থেকে নষ্টামির উৎস-সিপিএমও তার ব্যাতিক্রম না। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা এবং তা ধরে রাখার চেষ্টাই পার্টিটাকে শেষ করেছে। হ্যাঁ কংগ্রেস এবং তৃণমূল একসাথে কাজ করলে সিপিএমের সিট অনেক কমত-কিন্ত গণতন্ত্রের জন্যে তা ভাল নাও হতে পারে।

মানুষের হাতে অধিক ক্ষমতা ভয়ংকর-বাঙালীর হাতে তা আরো ভয়ংকর। বামফ্রন্টের ৩৩ বছরের রাজত্বকাল, তারই সীলমোহর। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না।

No comments:

Post a Comment