Wednesday, June 9, 2010

তৃণমূলের সিপিএমকরন অব্যাহত

সিপিএম যেমন একটি ব্যাধির নাম- ঠিক তেমনই তৃণমূল হচ্ছে সেই রোগ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে বঙ্গবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সিপিএম কোন পার্টির নাম না- এটি অগণতান্ত্রিকতার একটি রোগ-যেখানে পার্টির সমালোচনা হচ্ছে হারাম। পার্টির সমালোচকরা হচ্ছে কুত্তা, প্রতারক, গণশত্রু, টাকা খাওয়া লোক! আর পার্টি বিরোধিরা হচ্ছে কাফির, যাদের মেরে ফেলা পার্টির সিলমোহর দেওয়া পূন্যকর্ম। জায়েজ। সরকার, আদালতের ওপরে পার্টি, হেঁসেলে পার্টি- স্কুল, কলেজ, হাঁসপাতাল সর্বত্র পার্টিতন্ত্র কায়েম করে মানুষকে পার্টির বশ্য করা ছিল সিপিএমের পার্টি লাইন।

তৃণমূল ও আসলেই কোন পার্টি না। কোন এজেন্ডা বা আদর্শ তাদের নেই। সিপিএম মানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতা যেভাবে কেড়ে নিয়েছিল, মানবতা ও সভ্যতাকে যেভাবে বৃদ্ধাষ্ঠুঙ্গ দেখিয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মানুষ মমতার নেতৃত্ব মেনেছে। কারন সিপিএমকে না সরাতে পারলে, পশ্চিম বঙ্গে ভাল কিছু হওয়া অসম্ভব।

কিন্ত গত বছরে লোকসভা ভোটে জেতার পর-তৃনমূলের তীরেও এখন অনেক বুদ্ধিজীবি ভেড়ুয়া জুটেছে। বস্তুত এরা সিপিএম কালচারই তৃণমূলে ঢোকাচ্ছেন। ইদানিং যে মমতার সমালোচনা করবে-সে সিপিএমের টাকা খাওয়া লোক-ইত্যাদিন প্রচার অব্যাহত।

সাংবাদিকতার মান আমাদের বঙ্গে এমনিতেই করুণ। আজ পাঁচু রায়ের একটা লেখা দেখে চমকে উঠলাম প্রতিদিনে।
সুমন চট্টোপাধ্যায়কে সেখানে বলা হচ্ছে সিপিএমের টাকা খাওয়া দালাল-যেহেতু উনি তৃণমুলের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ন নেতাদের সমালোচনা করেছেন! মমতার কিছু রাজনৈতিক লাইন মানতে পারেন নি! এই কালচার ত আমরা সিপিএমে দেখতে অভ্যস্ত-যেখানে পার্টির সমালোচনা মানেই সে হয়ে যায় দালাল! এবং সিপিএমের এই স্বৈরাচারী কালচার আমরা পছন্দ করি না বলেই, ওরা ইতিহাসের খাতায় নাম লিখিয়েছে। আমরা চাই আমাদের গণতন্ত্রের অধিকার। আমরা চাই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেখানে সমালোচনা করাকে সদর্থক এবং গঠনমূলক ভাবে দেখা হবে।

সমালোচনা এবং ভিন্নমত ছারা গণতন্ত্র মজবুত হয় না। সেই গণতন্ত্র তত শক্তিশালী যেখানে ভিন্নমতের কদর বেশী। সেই সমালোচনা পার্টির ভেতরে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ হয় না তা সিপিএমের ৩৩ বছরে একাধিবার প্রমাণিত। আমার পার্টির কোন লোক যদি চোর হয়, সেটা প্রকাশ্যে সমালোচনা করলে কি ক্ষতি? কি করে?

কে চোর জনগণ তা ভালোই জানে। তাই চোরকে ঢাকা মানে শাকদিয়ে পচা মাছ ঢাকা। তার থেকে, না ঢেকে স্বীকার করে নিলেই ত লাভ-জনগণ বুঝবে পার্টিতে ওই চোরটার ভবিষ্যত আর নেই। আর ভিন্নমত যদি হয় নীতিগত ভাবে-সেটা প্রকাশ্যে আনাইত ভাল। জনগন বুঝুক কিসের ভিত্তিতে পার্টির নীতিমালা চালু হচ্ছে। নীতি বা রাজনীতি-সবই যদি এই জনগনের জন্যে হয়, তাহলে সেই দ্বন্দের আলোচনা জনগনের সামনে হলে ক্ষতি কি আছে?

সরি ভুল বল্লাম।আছে। প্রকাশ্যে এই নীতি এবং রাজনীতির দ্বন্দ নিয়ে আলোচনা করলে পার্টির মধ্যে যারা ক্ষমতার মৌতাত নিয়ে বসে আছে , তাদের অসুবিধা। পার্টির মধ্যে, প্রকাশ্য সমালোচনা চালু থাকলে প্রকাশ কারাত লোকসভা ভোটের পরেই সিপিএম কর্মীদের তীব্র সমালোচনায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হতেন। কিন্ত এই ধরনের পার্টি শৃঙ্খলা নামে একটি রত্নকে পুজো করে কিছু লোকের ক্ষমতা রক্ষা করা হচ্ছে। ঠিক এই কালচারই তৃনমূলে ঢুকছে।

যে সব 'বুদ্ধিজীবি' বাঁদর এবং বাঁদরামোর কারনে জনগন সিপিএম ছেড়ে তৃনমূলের দিকে ঝুঁকছে, সেই বাঁদরদের উৎপাত এবার তৃনমুলে। রাজা বদলায়, রাজার আলখাল্লা বদলায় না-রাজদন্ড ও বদলায় না। রাজকবি ও না। জনগণ শুধুই বোকার মতন অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে নতুন রাজার অপেক্ষায় থাকে।

Wednesday, June 2, 2010

পুরসভা নির্বাচনঃ পাটিগণিত এবং উপলদ্ধি

ভোট পাটিগণিতের বাইরেও রাজনীতির আসল দান উপলদ্ধির জগতে। তৃনমূল সুইপ করল না সিপিএমের সাথে পজিশন সোয়াপ করল ( আক্ষরিক এবং ব্যাবহারিক অর্থে) -তার বাইরেও বেশ কিছু চিন্তা আমাদের থেকেই যায়।

প্রথম প্রশ্ন -বামফ্রন্টের কি নৈতিক অধিকার আছে সরকার চালানোর? আনন্দবাজার লিখেছে নেই। সত্যিই জনগন এই সিপিএম নামক অচলায়তনের ওপর সম্পূর্ন বিশ্বাস হারিয়েছে। কিন্ত তার মানে কি সিপিএমের পদত্যাগ রাজ্যে রাজনীতির জন্যে মঙ্গল? জনগণ দ্বারা ধিকৃত একটি সরকারের কি উচিত ফাটা প্যান্ট পরে ঘসতে ঘসতে রাস্তা পার হওয়া ভবিষ্যতের লিখন যখন স্পষ্ট?

আমি মনে করি না সিপিএমের পদত্যাগ করা উচিত। কারন সিপিএম বলে ত কোন মানুষ নেই-এটি একটি ব্যাধির নাম। লেনিন আবিষ্কৃত পার্টিতন্ত্র। যা মানুষ, সংবিধান এবং রাজ্যের ওপরে পার্টিকে বসাতে চেয়েছে-সমস্ত মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে নিজেদের স্বার্থের জন্যে। রাজনীতির এই জঘন্যতম মেরুকরন এবং তার থেকে আহুত রাজনৈতিক হিংসা ভারত কেন পৃথিবীর অন্যকোথাও বিরল। এর জন্যে ১০০% দায়ী সিপিএম। লোকে যখন পুলিশের ওপর ভরসা পায় নি, নিজেরাই অস্ত্র হাতে বিরোধিতা করেছে। ইন্ধন জুগিয়েছে তৃণমূল-এবং সেটাই তাদের বর্তমানের ক্ষমতার উৎস। বর্তমানে তাদের মেরুকরণের ভাষা সিপিএমের থেকে কিছু মাত্র কম না। দু পার্টির ই কিছু পোষা বুদ্ধিজীবি এলশেসিয়ান আছে-প্রভুর জন্যে কেবল টিভিগুলোতে তাদের প্রচুর ঘেও ঘেও শোনা যায়।

বিবেকের কথাগুলো, জনগণের কথাগুলো, পরিবেশের কথা, আদিবাসিদের কথা বলার জন্যে আজ পশ্চিম বঙ্গে কেও নেই। কংগ্রেস এই সুযোগটা নিতে পারত-কিন্ত নেতা কোথায়? ভোটবান্ডিল গোনার বেশী বিদ্যা বা রাজনৈতিক দক্ষতা তাদের নেই।

তাহলে কে পৌঁছে দেবে নন্দীবাবুর কথা যিনি কৃষ্ণনগরে বিদ্যুতের অভাবে ছোট্ট প্লাস্টিক কারখানা তুলে দিচ্ছেন? কে খোঁজ রাখবে রোঘুদোকানির যার ব্যাবসা হাঁসফাঁস করছে চারিদিকে মলের উত্থানে? এত বড় পৌঢ় নির্বাচনে কাওকে কি বলতে শুনলাম কোলকাতায় জলের স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে-ভয়ঙ্কর জলকষ্টের সামনে পড়বে কোলকাতা, আমাদের সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে? বায়ু দুষনের জন্যে কোলকাতায় ৪% লোকের নানান ক্যান্সার হচ্ছে-আরো হবে-দূষনমুক্ত কোলকাতার জন্যে কোন পার্টির , কোন বুদ্ধিজীবির আন্দোলন দেখতে পেলেন এই পুরনির্বাচনে?

সবাই আমরা বনাম তোমরা নিয়ে ব্যাস্ত। এই "ক্লাবিং" টা বিবর্তন জনিত কারনে, মানুষের মজ্জাগত। নানান বিবর্তনীয় সমাজবিজ্ঞানের গবেষনায় তা প্রমাণিতও বটে-কিন্ত তৃণমূল বনাম সিপিএমের তীব্রমেরুকরণ কি আমরা চাইছি? না আমরা চাইছি আমাদের সমস্যাগুলোর দিকে পার্টিগুলো নজর দিক? সেই নেতা দুই পার্টিতে একজনও কি আছে?

ঠিক সেই কারনেই তৃণমুলের হাতে একছত্র ক্ষমতা থাকা উচিত না। ক্ষমতাই আবাহমানকাল থেকে নষ্টামির উৎস-সিপিএমও তার ব্যাতিক্রম না। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা এবং তা ধরে রাখার চেষ্টাই পার্টিটাকে শেষ করেছে। হ্যাঁ কংগ্রেস এবং তৃণমূল একসাথে কাজ করলে সিপিএমের সিট অনেক কমত-কিন্ত গণতন্ত্রের জন্যে তা ভাল নাও হতে পারে।

মানুষের হাতে অধিক ক্ষমতা ভয়ংকর-বাঙালীর হাতে তা আরো ভয়ংকর। বামফ্রন্টের ৩৩ বছরের রাজত্বকাল, তারই সীলমোহর। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না।

Tuesday, June 1, 2010

এই কোলকাতায় মুসলমান আর হিন্দু কোলকাতা কি আলাদা?

কোলকাতার দু পয়সার বামপন্থী "ধর্মনিরেপেক্ষ" বুদ্ধিজীবিরা এখন কোথায় যারা কোলকাতার লিব্যারাল কালচার নিয়ে গর্ব করেন?

এই কোলকাতায় মুসলমান আর হিন্দু কোলকাতা কি আলাদা? নইলে কি ভাবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের ওপর বোরখা পড়ার ফতেয়া দেওয়া হয় এবং সেই ফতেয়া না মানার জন্যে বাংলার শিক্ষিকা শিরিন মিদ্যাকে অন্য ক্যাম্পাসে যেতে হয়? এবং এই রাজ্যে একটি নাকি বামপন্থী সরকার চলছে যারা এই ধরনের আরো ইসলামিক "বিশ্ববিদ্যালয়" এবং ৩০০ টি মাদ্রাসা খুলছে। এবং আমাদের সংখ্যালঘু মন্ত্রী আবুস সাত্তার এই ব্যাপারে মন্তব্য করতে চান নি-কারন করলে বামপন্থী অথবা ইসলাম-একটি কূলত খোয়াতেই হত। ভোটের আগে আর কে রাজনৈতিক রিস্ক নিতে চাই। বামপন্থা বা ইসলাম-সবারই ভোটব্যাঙ্ক আছে!

মৌলবাদের কোন ধর্ম হয় না। ইসলামিক মৌলবাদকে প্রশয় দিলে হিন্দু মৌলবাদ ও ফোঁস ফোঁস করবে। কারন হিন্দুত্ব বলে কোন আইডেন্টি হয় না-ইসলাম বিরোধিতার মধ্যে দিয়েই বিজেপি হিন্দুত্বের আইডেন্টি তৈরী করে যা এই দেশের জন্যে সর্বনাশা। আর এই সর্বনাশের মূল উৎস ? ইসলামিক মৌলবাদকে তথাকথিত প্রতিটি ধর্ম নিরেপেক্ষ পার্টির সস্নেহে দুধ কলা দিয়ে পালন।

মুসলমানদের তোষন করার জন্যে এর রাজ্যে ধর্ম নিরেপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলে ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা খোলার জন্য হুটোপুটি চলছে। আমি বড়াবর এর প্রতিবাদ করেছি-কারন হিন্দু মুসলিমকে আলাদা আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠালে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বাড়বে- কমবে না। মুসলিম এলাকাগুলিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবশ্যই দরকার-কিন্ত সেখানে কি দরকার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে মেয়েদের বোরখা পড়ে আসার ফতেয়া দেওয়া হয়? খবর পড়ে মনে হচ্ছে, সেখানে সরকারি ট্যাক্সের টাকায় ইসলামিক মৌলবাদের চাষাবাষ ছাড়া আর বিশেষ কিছু হয় না।

খোদ কোলকাতায় ফতেয়া দেওয়া হচ্ছে-আর কি অদ্ভুত নীরবতা আমাদের "বামপন্থী বুদ্ধিজীবিদের"-যাদের জীবনের একটাই উদ্দেশ্য-হয় মমতা নইলে সিপিএমে উচ্ছিষ্ট প্রসাদভোগ।

মনে রাখতে হবে ধর্মীয় মৌলবাদের একটিই পরিচয়-সেটা হল মহিলাদের পর্দার পেছনে পাঠানো। মৌলবাদের ধর্ম নারীর অধিকার খর্ব করা-তার রং গেরুয়া না সবুজ সেটা দেখে লাভ নেই। মহিলাদের অধিকার খর্ব করার ব্যাপারে দুই ধর্মই সিদ্ধহস্ত।
কিন্ত একটা বাড়তে দিলে, আরেকটা বাড়বেই।