Saturday, February 28, 2009

বাংলাদেশের সেনা বিদ্রোহের নেপথ্যে



বাংলাদেশে গত তিন দিনে তাদের প্যারামিলিটারি বিডিআর বিদ্রোহে আমি প্রায় সব বাংলাদেশী , ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদে চোখ রাখছিলাম। এখনো অনেক কিছুই ধোঁয়াশা আমার কাছে। সুত্র মিলিয়ে দুই দুই এ চার হচ্ছে না । তাই সমস্ত সম্ভবনাকে খাতিয়ে দেখতে এটা লিখছি-পাঠক আমার ভুল সংশোধন করবেন। ভবিষ্যতের অনুসন্ধান হয়ত অন্যকিছু বলবে-তবুও কিছুটা নিজেকে বোঝানোর তাগিদেই এই লেখা-কি করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে-যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যথার্থ ভাবেই একটি জনপ্রিয় সরকারের হাতে-সেখানে প্যারামিলিটারী ফোর্স তাদের উর্ধতন মিলিটারীর বিরুদ্ধে এই ধরনের বিদ্রোহ করতে পারে।

প্রথম জনপ্রিয় তত্ত্বটি অবশ্যই প্রলেতারিয়েত শ্রেনী সংঘাত। বি ডী আরের নিজস্ব বক্তব্য তাই। তারা শোষিত এবং তাদের উর্ধত্বন মিলিটারী কতৃপক্ষ দ্বারা নির্যাতিত। তাদের খাদ্যসরবরাহের , ডাল-ভাত প্রোগ্রামের টাকা পর্যন্ত মেরে উড়িয়ে দিয়েছে মিলিটারী। তাদের অভিযোগের সুত্র ধরে, শুধু এটাই জানা যায়-এই ধরনের অভাব অভিযোগ থেকে উর্ধত্তন অফিসারদের গণহত্যা কোথাও হয় নি।আবার এটাও ঠিক পৃথিবীর সবদেশের মিলিটারীতেই সাধারন সৈনিকরা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, অফিসারদের ওপর আক্রমন চালান। আমার জানা প্রায় সব ভারতীয় এবং আমেরিকান সৈনিক মিলিটারী ক্যারিয়ারে এক বা একাধিবার কোর্ট মার্শাল হয়েছেন এই কারনে। মিলিটারীতে অফিসারের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিদ্রোহ করা-পৃথিবীর সর্বত্র অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। এমন কি ২০০৪ সাল থেকে নেওয়া তথ্য অনুযায়ী-সেখানে সন্ত্রাসবাদিদের হাতে নিহত ভারতীয় সৈন্যের সংখ্যা ২৫৪, সেখানে একই সময়ে সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যা করেছেন ৩৩৩ জন। আর অফিসারদের হত্যা করেছেন প্রায় একশো জন।

অফিসারদের বিরুদ্ধে পুঞ্জিভূত রাগ পৃথিবীর সবদেশের মিলিটারীতে সর্বদা বিদ্যমান। কারন মিলিটারী একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনী-যার অস্তিত্ব আসতে আসতে ফুরিয়ে আসছে। রাষ্ট্রের সংজ্ঞাতেই আছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে নাগরিকদের ভীতি দেখিয়ে আইন মান্য করানো- তাই সভ্যতার বিপরীত দিকে হেটেই মিলিটারীর বেঁচে থাকা (
এই প্রবন্ধটি দেখতে পারেন)। সেখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের যে শিক্ষাটা তারা পায়-তার সাথে মানবাধিকার বা সভ্যতার সম্পর্ক নেই। এর ওপর লয়ালিটির পরীক্ষা সাধারন সৈনিকদের সব সময় দিতে হয়। আর চেইন অব কম্যান্ডের লয়ালিটি রক্ষা করার স্বার্থে সব সময়, অধীনস্ত সেনারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সমস্ত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে, তাদের মানানো হয়। কারন, এইভাবে তাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে মেরে দিতে না পারলে চেইন অব কমান্ড তৈরী হয় না-সুতরাং মিলিটারীর স্বার্থেই সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, নীচু তলার সৈনিকদের বাধ্য করা হয় ওপর তলার থুতু চাটতে। সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠা একজন যুবককে যখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের এই প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হয়, তখনত প্রশ্ন ওঠে না ওদের কেন সভ্যতা বিরোধি রাগী যুবক হিসাবে তৈরী করা হচ্ছে? তখন ত আমরা নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থই দেখি।

এক্ষেত্রে যেসব অফিসাররা সেদিন সভাগৃহ থেকে পালাতে পেরেছিলেন তাদের ভাষ্য অনুযায়ী এটা পূর্বকল্পিত অনেক দিনের চক্রান্ত। ভারতীয় মিডিয়া এর মধ্যে ইসলামিক চক্রান্ত্ব খুঁজে পাচ্ছে। আমি অবশ্য সেরকম কিছু দেখতে পেলাম না। এটা কি করে সম্ভব যখন সভাগৃহে অনেক মিলিটারী কর্ত্তা আছেন, তখন মাত্র একজন লুঙ্গি পড়ে গেঞ্জী গায়ে মেশিনগান চালিয়ে বিদ্রোহ ঘোষনা করল? বাকিরা তার আগেই বেড়িয়ে গিয়েছিল। যদি পরিকল্পনা মাফিক বিদ্রোহের প্রশ্ন ওঠে এটা সম্ভবত খুব বাজে পরিকল্পনা। মানাই কষ্টকর। কারন সেক্ষেত্রে (১) তারা সভাস্থলকে বিদ্রোহের সুতিকা গৃহ হিসাবে ব্যাবহার করবে না-রাতের অন্ধকারে কোয়াটার টু কোয়াটার অতর্কিত আক্রমন করবে (২) আর যদি সভাগৃহকে বাছেও-তাহলে মাত্র একজন লুঙ্গী পরে মেশিন গান চালিয়ে বিদ্রোহের সূচনা করবে না। একটি দল পরিকল্পিত ভাবে সবাইকে ঘিরে ফেলবে। সেরকম কিছু হয় নি।

তাছাড়া যেভাবে মিলিটারী অফিসারদের জওয়ানরা খুন করেছে-তাতে ব্যাক্তিগত আক্রোশের ছাপ বড্ড বেশী। মানে মিলিটারী অফিসারদের বিরুদ্ধে তারা রাগে ফুঁসছিল এটা পরিস্কার। বিদ্রোহের লক্ষ্য মূল থাকলে-তারা রাষ্ট্রের সাথে দরাদরি করার জন্যে মিলিটারী অফিসারদের বন্দী করত-এই ভাবে চোখ খুবলে খুন করত না। সেনারা তাদের শত্রুর দেহকেও এই ভাবে বিকৃত করে হাত পা কেটে হত্যা করে না। এর থেকে তাদের পুঞ্জীভূত রাগের পরিমান প্রকাশ্য।

এছাড়াও গত তিনদিনে বিডিআর বিএস এফের কাছে অনেক চিরকুট পাঠিয়েছে। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী চিদাম্ববরম তা স্বীকারও করেছেন। সেইসব চিরকুটের অধিকাংশতেই লেখা ছিল, বিডিআর মিলিটারীর অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাই তারা ধরা না দিয়ে, ভারতের কাছে আশ্রয় চাইছে । যদি এটা ইসলানিস্ট গোষ্ঠির বিদ্রোহ হত, তারা ভারতের কাছে আশ্রয় এভাবে চাইত না।

বাংলাদেশের গুপ্তচররা এই খবর কেন আগে পেলেন না-সেটা নিয়ে অনেক জলঘোলা হচ্ছে। হতে পারে এরকম কিছু কংক্রীট চক্রান্ত ছিল না। অফিসারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ মিলিটারীতে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তাই হয়ত ব্যাপারটাকে তারা অতটা আমল দেওয়ার প্রয়োজন ভাবে নি। আবার এটাও হতে পারে হাসিনা সরকারা আসায় অনেক গুপ্তচরের যে অতিরিক্ত ইনকাম ছিল -ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদি জঙ্গীদের কাছ থেকে বা আই এস আই এর কাছ থেকে- তা এখন বন্ধ। ফলে বর্তমান সরকার গেলে-তাদের পকেটে দুপয়সা আসে আর কি।


মিলিটারীর অনেক অফিসারই বলছেন তারা বি ডী আরের স্মাগলিং থেকে উপার্জন বন্ধ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ বি ডি আরের গরীব সেনাদের সামান্য যেটুকু অতিরিক্ত ইনকাম ছিল-তাও বন্ধ! গোদের ওপর বিষফোঁড়া। কিন্ত শুধু এইটুকুর জন্যে কেও গণহত্যা করবে না।

পরিশেষে একটা গণতান্ত্রিক দেশে রাজধানীতে কেন ৩০% বর্ডার সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ান বা মিলিটারীরা থাকে-সেটাও বুঝলাম না। আমি ভারতে দেখি বি এস এফের ১০-১২ হাজার লোকের থাকার আবাসনগুলি শহর থেকে অনেক দুরেই থাকে। বাংলাদেশে বি ডি আরের সংখ্যা ৬৫,০০০। আর ঘটনার সময় ঢাকায় হেডকোয়ার্টারে ১৫০০০ বিডীআর পাকাপোক্ত ভাবে ছিলেন। এটা একধরনের অপচয়।

রাষ্ট্র যত দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে মিলিটারী নামক সভ্যতা বিরোধি রাষ্ট্রযন্ত্রটির অবসান ঘটে ততই মঙ্গল। ভারতের এই বছরের মিলিটারী বাজেট
২৩ বিলিয়ান ডলার-বাংলাদেশের প্রায় দেড় বিলিয়ান ডলার। যেদেশগুলির অর্ধেক লোক আধপেটা খেয়ে থাকে, নিরক্ষর-সেখানে ওই টাকা শিক্ষা এবং উন্নয়নে খরচ করতে পারলে-দারিদ্র নিশ্চিত ভাবেই কমানো যেত।

যারা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান ইত্যাদি দেশের অস্তিত্ব টেকানোর পক্ষে তাদের আবার লাল সেলাম!!! কারন দেশের অস্তিত্ব মানলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদিদের (মিলিটারী) পেছনে এই বাজে খরচ এবং তাদের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ রাষ্ট্রবিরোধি সন্ত্রাস মেনে নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে! আপনারা কি চান, আমি বাংলাদেশী, আমি ভারতীয় এইসব আবেগের মূল্য দরিদ্র জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্যের থেকেও বেশী?

Wednesday, February 25, 2009

রাহুল গান্ধী কি নেতৃত্বের যোগ্য?



বামবাঙালীকে রাহুল গান্ধী নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রত্যুত্তরে নাক সিঁটকানি অনিবার্য্য। সেই বামবাঙালী যারা মার্ক্সবাদকে মাছভাত বানিয়ে খাচ্ছেন-এখনো বোঝেন না, মার্ক্সীয় তত্ত্বের মূল সুত্র এবং দর্শনের ভিত্তিপ্রস্তরটা কি। যাইহোক-ভারতবর্ষে এবার ১০ কোটি নতুন ভোটার। রাহুল গান্ধীর তাড়া খেয়ে আদবানীজিকে এখন কলেজের জিমে গিয়ে আইরনিং করে ভিডিও তু্লে বোঝাতে হচ্ছে ১৮ আর ৮১ একই ব্যাপার। জিম করে শরীরটাকে একটু উলটে নিলেই হল!

কি আজব ব্যাপার বলুন ত! আমি সেই কোনকাল থেকে আফশোস শুনে আসছি গান্ধী ডাইন্যাস্টি অযৌত্বিক! নেহেরুর পান্ডিত্য নিয়ে কেও প্রশ্ন তোলে না- ইন্দিরা গান্ধী নিয়ে আগে উঠত-এখন মেনে নিয়েছে। তবে রাজীব গান্ধী থেকে রাহুল গান্ধী-নাম এলেই বাম বাঙালীর নাক সিঁটকানো অব্যাহত। রাজীব শাহনানু মামমা ইত্যাদি নিয়ে কতগুলি মারাত্মক ভুল করেছিলেন-তবে এটাও সত্য, তার হাত ধরেই ভারতে উদার অর্থনীতি এসেছে-যার ফলে তার আমলে জিডিপি, পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী বৃদ্ধি পায়। যাইহোক প্রশ্ন হচ্ছে গান্ধী ফ্যামিলির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব গণতন্ত্রে থাকতেই পারে। কিন্ত সেটা যুক্তি সঙ্গত? না মেছোভাতে বামপন্থী হবার অভিমান?

সেই সুত্র ধরেই রাহুল গান্ধীকে দেখা যেতে পারে। রাহুলের ব্যাগ আছে- ব্যাগেজ নেই। কংগ্রেসের সাধারন সম্পাদক হিসাবে রোগটাকেও ধরেছেন। পার্টির মধ্যে গণতন্ত্রের অভাব আছে। ওপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপানো হয়। নেতা চাপানো হয়। পুরানো নেতারা কংগ্রেসী আলখাল্লা চাপিয়ে নতুনদের উঠতে দিচ্ছে না। নতুন মুখ নেই। রোগটা সবার জানা। ডাক্তারীটাও রাহুল ভালোই করছেন। বৃদ্ধদের পাত্তা না দিয়ে সরাসরি তরুন নেতাদের কাছে যাচ্ছেন। কাগযে বিজ্ঞাপন দিয়ে, জনসংযোগ বাড়িয়ে তরুনদের কংগ্রেসে যোগ দিতে ডাকছেন।

গান্ধীমুখী কালচার যে কংগ্রেসের বিরাট ড্রব্যাক সেটা স্বীকার করতেই হয়। ভোটের আগে জেতার জন্যে যদি রাহুল গান্ধীর বক্তৃতার ওপর নির্ভর করতে হয়-সেটা দুর্ভাগ্যের। সেটা রাহুল নিজেই বলেছেন। কিন্তু কংগ্রেসীরাও এত নীচে নেমে গেছে, নিজেরা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ঘুমানো ছাড়া কিছুই করে না-ফলে গান্ধী পরিবারের সৌজন্যই ভরসা। এগুলো নিসন্দেহে দেঊলিয়াপনার লক্ষন। এটাও লক্ষ্যনীয় রাহুল গান্ধী এসব সবই স্বীকার করে নিচ্ছেন। কিন্তু তাতে কংগ্রেস বদলাচ্ছে কি? রাজস্থানে জেতার পেছনে কোন সন্দেহ নেই গেলহটের কৃতিত্বই সব থেকে বেশী ছিল- অথচ দেখলাম কংগ্রেসীরা সবাই মিলে রাহুলজী জিন্দাবাদ বলছে। দিল্লীতেও কংগ্রেসের বিজয়ে শীলা দিক্ষিতের ভূমিকা মূখ্য ছিল-অথচ দেখলাম আমজনতা মিলে রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ শব্দে পাখিসব কলরব শুরু করেছে। এগুলো সবই সমর্থকদের দোষ। এর জন্যে রাহুলকে দোষ দেওয়া অবশ্যই অন্যায়। রাহুলই একমাত্র রাজনীতিবিদ যে অন্তত জাত বা ধর্মের প্রশ্নে পরিস্কার ভাবে বলতে পেরেছে সেসব অতীতের জিনিসে আঁকড়ে ধরে থাকলে চলবে না-ভবিষ্যতে সবাইকে মানুষ ভেবেই কাজ করতে হবে। অতীত নয়-ভবিষ্যত-এই রাহুলের চিন্তাধারা নিসন্দেহে আশাব্যাঞ্জক।

আসলে বামবাঙালী নিজেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পন্ডিত মনে করে। এটা ভুলে গিয়ে, সমাজের ইতিহাসের মার্ক্সিস্ট রিডাকশনিজম বা দ্বান্দিক বস্ত্রুবাদ টাইপের খিচুরীর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সমাজ এবং রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এটাই সত্য-প্রতিটা সমস্যার আলাদা বাস্তববাদি সমাধান চাই। কোন আদর্শবাদ দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না। প্রতিটা সমস্যাই এক বা একাধিক দ্বন্দ-যার সমাধান প্রতিটি পরস্পর বিরোধি গ্রুপের কথা শুনে-উইন-উইন কনট্রাক্টের মাধ্যমে করতে হবে। সেটাই প্রকৃত গণতন্ত্র। শুধু ব্যাবসায়ীদের কথা শুনলে সাধারন মানুষের অশেষ দুর্ভোগ-আবার ব্যাবসায়ীদের চোর-ডাকাত বলে তাড়িয়ে দিলেও, সাধারন মানুষের দুর্দশা বাড়বে বই কমবে না। সুতরাং বাজার এবং ব্যাবসায়ীরা যাতে সমাজ এবং মানুষের স্বার্থ রক্ষাকরে ব্যাবসা করতে পারেন, রাষ্ট্রকে সেই মধ্যমপথেই চলতে হবে। এটা ভুলে গেলে চলবে না, ভারতে এখন ৫০% এর বেশী লোক এই বেসরকারী বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। গান্ধী পরিবারে সাফল্য এই যে, উনারা এখনো পর্যন্ত মোটামুটি মধ্যম পথেই দেশটাকে রাখতে পেরেছেন-গণতন্ত্রও সেই জন্যেই টিকে আছে। এটা ঠিক রাইজিং ইন্ডিয়ার স্বাদ একটা বড় অংশের কাছে পৌঁছল না-আবার না না করে-গ্রামেও মোবাইল ফোন বা আই টির ব্যাবহার বেশ ভালোই চলছে এখন। রাহুল গান্ধী গ্রামে গ্রামে প্রযুক্তিকে পৌছে দেবার যে চেস্টা করছেন তা স্বাগত। তবে দুর্নীতির জন্যে এই সমস্ত প্রকল্পের টাকা যে জনগণের হাতে পৌছাচ্ছে না-সেই সমস্যার সমাধানও প্রযুক্তি দিয়েই করতে হবে। কিন্ত এই যে করতে হবে-এটা নির্ভর করছে-আমরা বাস্তববাদি চোখে সমস্যাটাকে বোঝার চেস্টা করছি কি না। তার সমস্ত সমাধানগুলিকে নিয়ে আমরা ভাবছি কি না। সমাধান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তি নির্ভর বা এদের মিশ্রন হতে পারে-কিন্তু একটা সমস্যাকে নিরেপেক্ষ ভাবে বোঝা
এবং তার সেরা সমাধান বার করার জন্যে অবশ্যই সেরা পথটিকে বাছতে হবে। এখন মাওবাদি সমস্যার সমাধানের জন্যে আমরা যদি শুধু
রাজনৈতিক বা শুধু অর্থনৈতিক চেষ্টা করি-এ সমস্যার সমাধান আমরা করতে পারবো না। এখনো পর্যন্ত যা দেখছি রাহুল গান্ধী বাস্তব্বাদি ভাবে সেরা পথটিকে বাছার চেষ্টা করছেন-কারন তার ব্যাগেজ নেই।

আর যার ব্যাগেজ নেই-সেই প্রকৃত জীবনপথিক।

Sunday, February 22, 2009

অস্কারে ইতিহাস তৈরী করে জিতল স্ল্যাম ডগ!!!!!!



এ র রহমান পেলেন দুটি--

সব আশঙ্কার অবসান ঘটিয়ে স্ল্যামডগ মিলিয়ানার পেল ৯ টি অস্কার।
সেরা সিনেমার পুররস্কারও!

হিদ লিজার বেস্ট সাপোর্টিং অভিনেতার পুরস্কার জিতে নিলেন এই মাত্র।

ওস্কার নাইট শুরূ হয়ে গেছে।

পেনোলোপা ক্রুজ প্রথম সাপোর্টিং অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতলেন। ভিকি ক্রিস্টিয়ানা বার্সিলোনা সিনেমাতে তার অনবদ্য অভিনয়ের জন্যে।

এদিকে স্ল্যাম ডগ মিলিয়ানার নিয়ে আবেগ তুঙ্গে। অনিল কাপুর, ইরফানরা রেড কার্পেটে পৌছে গেছেন। আমরাও ঘন্টায় ঘন্টায় এই ব্লগ আপডেট করব।

নমিনেশন লিস্টঃ

Best picture
"The Curious Case of Benjamin Button"
"Frost/Nixon"
"Milk"
"The Reader"
"Slumdog Millionaire"

Director
Danny Boyle, "Slumdog Millionaire"
Stephen Daldry, "The Reader"
David Fincher, "The Curious Case of Benjamin Button"
Ron Howard, "Frost/Nixon"
Gus Van Sant, "Milk"

Actor
Richard Jenkins, "The Visitor"
Frank Langella, "Frost/Nixon"
Sean Penn, "Milk"
Brad Pitt, "The Curious Case of Benjamin Button"
Mickey Rourke, "The Wrestler"

Actress
Anne Hathaway, "Rachel Getting Married"
Angelina Jolie, "Changeling"
Melissa Leo, "Frozen River"
Meryl Streep, "Doubt"
Kate Winslet, "The Reader"

Supporting actor
Josh Brolin, "Milk"
Robert Downey Jr., "Tropic Thunder"
Philip Seymour Hoffman, "Doubt"
Heath Ledger, "The Dark Knight"
Michael Shannon, "Revolutionary Road"

Supporting actress
Amy Adams, "Doubt"
WINNER: Penelope Cruz, "Vicky Cristina Barcelona"
Viola Davis, "Doubt"
Taraji P. Henson, "The Curious Case of Benjamin Button"
Marisa Tomei, "The Wrestler"

Animated feature
"Bolt"
"Kung Fu Panda"
WINNER: "WALL-E"

Adapted screenplay
"The Curious Case of Benjamin Button," screenplay by Eric Roth, screen story by Eric Roth and Robin Swicord
"Doubt," written by John Patrick Shanley
"Frost/Nixon," screenplay by Peter Morgan
"The Reader," screenplay by David Hare
WINNER: "Slumdog Millionaire," screenplay by Simon Beaufoy

Original screenplay
"Frozen River," written by Courtney Hunt
"Happy-Go-Lucky," written by Mike Leigh
"In Bruges," written by Martin McDonagh
WINNER: "Milk," written by Dustin Lance Black
"WALL-E," screenplay by Andrew Stanton, Jim Reardon; original story by Andrew Stanton, Pete Docter

Art direction
"Changeling," James J. Murakami; set decoration: Gary Fettis
WINNER: "The Curious Case of Benjamin Button," Donald Graham Burt; set decoration: Victor J. Zolfo
"The Dark Knight," Nathan Crowley; set decoration: Peter Lando
"The Duchess," Michael Carlin; set decoration: Rebecca Alleway
"Revolutionary Road," Kristi Zea; set decoration: Debra Schutt

Cinematography
"Changeling," Tom Stern
"The Curious Case of Benjamin Button," Claudio Miranda
"The Dark Knight," Wally Pfister
"The Reader," Chris Menges and Roger Deakins
WINNER: "Slumdog Millionaire," Anthony Dod Mantle

Costume design
"Australia," Catherine Martin
"The Curious Case of Benjamin Button," Jacqueline West
WINNER: "The Duchess," Michael O'Connor
"Milk," Danny Glicker
"Revolutionary Road," Albert Wolsky

Documentary feature
"The Betrayal (Nerakhoon)"
"Encounters at the End of the World"
"The Garden"
"Man on Wire"
"Trouble the Water"

Documentary short
"The Conscience of Nhem En"
"The Final Inch"
"Smile Pinki"
"The Witness -- From the Balcony of Room 306"

Film editing
"The Curious Case of Benjamin Button," Kirk Baxter and Angus Wall
"The Dark Knight," Lee Smith
"Frost/Nixon," Mike Hill and Dan Hanley
"Milk," Elliot Graham
"Slumdog Millionaire," Chris Dickens

Foreign language film
"The Baader Meinhof Complex," Germany
"The Class," France
"Departures," Japan
"Revanche," Austria
"Waltz with Bashir," Israel

Makeup
WINNER:
"The Curious Case of Benjamin Button," Greg Cannom
"The Dark Knight," John Caglione Jr. and Conor O'Sullivan
"Hellboy II: The Golden Army," Mike Elizalde and Thom Floutz

Original score
"The Curious Case of Benjamin Button," Alexandre Desplat
"Defiance," James Newton Howard
"Milk," Danny Elfman
"Slumdog Millionaire," A.R. Rahman
"WALL-E," Thomas Newman

Original song
"Down to Earth" from "WALL-E," music by Peter Gabriel and Thomas Newman, lyrics by Peter Gabriel
"Jai Ho" from "Slumdog Millionaire," music by A.R. Rahman, lyrics by Gulzar
"O Saya" from "Slumdog Millionaire," music and lyrics by A.R. Rahman and Maya Arulpragasam

Animated short
WINNER: "La Maison en Petits Cubes"
"Lavatory -- Lovestory"
"Oktapodi"
"Presto"
"This Way Up"

Live-action short
"Auf der Strecke (On the Line)"
"Manon on the Asphalt"
"New Boy"
"The Pig"
WINNER: "Spielzeugland"

Sound editing
"The Dark Knight," Richard King
"Iron Man," Frank Eulner and Christopher Boyes
"Slumdog Millionaire," Glenn Freemantle and Tom Sayers
"WALL-E," Ben Burtt and Matthew Wood
"Wanted," Wylie Stateman

Sound mixing
"The Curious Case of Benjamin Button," David Parker, Michael Semanick, Ren Klyce and Mark Weingarten
"The Dark Knight," Lora Hirschberg, Gary Rizzo and Ed Novick
"Slumdog Millionaire," Ian Tapp, Richard Pryke and Resul Pookutty
"WALL-E," Tom Myers, Michael Semanick and Ben Burtt
"Wanted," Chris Jenkins, Frank A. Montaño and Petr Forejt

Visual effects
"The Curious Case of Benjamin Button," Eric Barba, Steve Preeg, Burt Dalton and Craig Barron
"The Dark Knight," Nick Davis, Chris Corbould, Tim Webber and Paul Franklin
"Iron Man," John Nelson, Ben Snow, Dan Sudick and Shane Mahan

পিডিএসের ওয়েব সাইট চালু হল


২১শে ফেব্রুয়ারী-পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসে সৈইফুদ্দিন চৌধুরী পিডিএসের ওয়েব সাইট চালু করলেন। এখানে ক্লিক করে সাইটটি দেখুন।

উনি বলেন পিডিএসকে বাঙালী এবং প্রবাসী বাঙালীরা নানান ভাবে সাহায্য করতে পারে। উক্ত সাইটের ফোরামে যোগ দিয়ে তারা গঠন মূলক সাজেশন দিতে পারেন। অর্থ সাহায্য দিতে পারেন। পার্টির নেতাদের সাথে কথা বলতে পারেন। দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি গণতন্ত্র প্রেমী মানুষকে পিডিএসের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে উনি অনুরোধ করেছেন।

Tuesday, February 17, 2009

স্বাগতম রঘুনাথপুর


ন্যানো বিদায়ের বিষাদবাদ্যের পর রঘুনাথপুরে শ্যামস্টীলের ৩০০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্ধোধন রাজ্যবাসীর মনে নিশ্চয় একটু আশা দিচ্ছে। পাশাপাশি এটাও বিচার করা দরকার-পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, খরগপুরে কোন প্রকল্প হলে জমি নিয়ে বিরোধিতা হচ্ছে না-এই সমস্যা তৈরী হচ্ছে কোলকাতার আশেপাশের শহরতলিতে-যেখানে জমির উর্বরতা, ভাগীদার এবং জনসংখ্যার চাপ অনেক বেশী।

সিঙ্গুরে যারা ৪০০ একর জমি দিলেন না-পশ্চিম বঙ্গের ভবিষ্যত ক্ষতি করে-তাদের পেছনে মাত্র দুটো যুক্তিবাদি কারন অনুমান করা যায়-
(১) আন্দোলন করে দরদাম বাড়াতে চাইছিল জমির দাবীদাররা
(২) টাটার কোন বিরোধি পার্টি, সম্ভবত এই আন্দোলনকে টাকা জুগিয়েছে

মমতার অবশ্য এসব দায়ভার কোনটাই ছিল না। যেভাবেই হোক এর মধ্যে থেকে ভোট ব্যাঙ্ক গছানো ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্যে তিনি সফল হয়েছেন-উপনির্বাচন দেখে বলা মুশকিল। নন্দীগ্রামে সিপিএমের নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগলে দিয়েছে জনগন। সিঙ্গুরে কি হবে সেটা এখন বোঝা যাচ্ছে না। কারন অনেক বেকার ভাইএর সর্বনাশ দিদি সেখানে করেছেন। আবার সিপিএমের বলপূর্বক জমি দখলের অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনেকেই ক্রদ্ধও। সুতরাং কোনদিকে ভোট ঘুরবে বলা মুশকিল। মনে রাখতে হবে, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে পুরুলিয়া থেকে বিরোধি পক্ষ হাওয়া হয়ে গেছে-কারন বিচ্ছিন্নতাবাদি এবং শিল্পবিরোধি দিদিকে তারা মোটেও পছন্দ করে নি।

এইসব বিচার করে, বামফ্রন্টের শিল্প নীতিতে কোলকাতা সহ শহরতলীকে রাখাই উচিত না-তা সেই এলাকা শিল্পপতিদের যতই পছন্দের হৌক না কেন। একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন-বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গের গ্রামগুলি থেকে বহু সংখ্যায় পুরুষেরা অন্যরাজ্যে কাজ করছে। সেই সব রাজ্যের সমৃদ্ধির খবর মানুষের কাছে কিন্তু পৌঁছচ্ছে। আমাদের রাজ্যে চালে গমে সেরা বলে পাইকারী ঢপ দিয়ে, গ্রামের লোকেদের ভুলিয়ে রাখা আর যাবে না। লোকে প্রশ্ন তুলবেই, আমাদের রাজ্য সেরা হলে আমাদের এরাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে কেন যেতে হয় কাজের সন্ধানে? গ্রামের লোকেদের টুপি পড়িয়ে আর রাখা যাবে না-কারন তাদের একটা বড় অংশই এখন অন্যরাজ্যের -বিশেষত পশ্চিম ভারতের সমৃদ্ধি সচক্ষে দেখেছেন।

সুতরাং বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া-ইত্যাদি যেসব জেলাগুলি শিল্পে পিছিয়ে-সেখানেই শিল্প স্থাপনের সদিচ্ছা দেখাক সরকার। এই জেলাগুলিতে তৃণমুলের উপদ্রব খুব বেশী নেই। আর টাটার বিপক্ষর মতন শাঁশালো পার্টি এখানে আন্দোলনে টাকা জোগাবে -সেই সুযোগও কম। মমতা যে ধ্বংশের রাজনীতিতে নেমেছেন-তাতে তিনি ঘরে ফসল তুলবেন-এত বোকা মনে হয় না রাজ্যের লোক। পঞ্চায়েতের সাফল্য অনেকটাই সিপিএমের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের স্বৈরাচারের জন্যে। সেটার সাথে শিল্প-জমির রাজনীতিকে জড়ানো ভুল। যে রাজ্যের ৫৪% মানুষ সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িয়ে-মাত্র ২৭% কৃষির সাথে জড়িত এখন -সেখানে শিল্পের পক্ষে ৫০% এর বেশী মানুষ থাকবেন। এই হিসাবটা মমতা ব্যানার্জি না করলে ভুল করবেন। তার শক্তি মোটে চারটে জেলায়-দুই মেদিনীপুর আর দুই চব্বিশ পরগণায়। হুগলী, নদীয়াতেও তৃণমূল বেশ দুর্বল। বাকী জেলাগুলিতে সিপিএম বিরোধি ভোট আছে-তার কিছু কিছু তৃণমূলে যাবে।

একটা জিনিস মমতা ব্যানার্জির মনে রাখা উচিত। তার পাশে যারা জুটেছে-তারা সিপিএমে ক্লান্ত-সিপিএমের শেষ দেখতে মরিয়া এই রাজ্যে। রাজ্যের মানুষকে এই অবস্থায় ঠেলার জন্যে সিপিএমই দায়ী। সেটাও মানছি। কিন্ত তৃণমূল ক্ষমতায় এলেই, মানুষের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে সেটাও দেখছি না। বরং সিপিএম তৃণমূল সংঘর্ষে বিরাট বিপর্যয়ও হতে পারে। সিপিএমের এই ৩২ বছরে আমরা কি দেখেছি? যে লঙ্কায় যায়-সেই হয় রাবণ। ক্ষমতার সেই সমীকরন বদলাবে? বরং তৃনমূলে যেহেতু গণতন্ত্র নেই-ফলাফল আরো ভয়াবহ হতে পারে। সিপিএমে তাও লোক্যাল কমিটিতে ফয়সালা হয়-মমতা এলেত সবাইকে নিত্যদিন কালীঘাটের সামনে বসে থাকতে হবে।

তৃণমূলের যারা রাজনীতি করছেন-তারা এই দিকটা ভাবুন। পার্টির মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন, উন্নয়নের জন্যে ইস্তাহার-এসব কিছুর উর্ধে যদি সিপিএম বিরোধি ঘৃণাকেই তারা মূল পাথেয় করেন-তাহলে সেই ঘৃণা তাদের পার্টিকে একদিন ধ্বংশ করবে। আপনারা অন্ধ বিরোধিতা ছেড়ে-উন্নয়নের রাজনীতি করুন। সস্তায় বাজিমাত কখনো সখনো হয় বটে-কিন্ত সেই বাজি একদিন বাজিগরকেই উচ্ছন্নে পাঠায়।

Monday, February 16, 2009

আরেকবার ভারসাম্যে পরিচয় দিলেন প্রণব মুখার্জী

গত পাঁচ বছরে মনমোহন-প্রণব-চিদাম্বরম টিম, খুব সম্ভবত স্বাধীনতোত্তর ভারতের সেরা সরকার উপহার দিয়েছেন। রাজনীতিতে পরম সাফল্য বলেত কিছু হয় না-আমাদের নানান বাস্তবতা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই বুঝতে হবে সাফল্যের লাভ খতিয়ান। সেই জন্যে, প্রথমেই আমরা ২০০-২০০৪ সালের এন ডি এ সরকারের সাথে বর্তমান ইউপিএ সরকারের পার্থক্যর পরিসংখ্যানটা চোখ বুলিয়ে নিই।

http://www.hindustantimes.com/news/
specials/popup/state_of_economy.htm

মোটামুটি ব্যাপারটাকে এই ভাবে দেখা যায়ঃ ইউ পি এ সরকারের বাজেট এন ডি এর ৫ বছরে তুলনায় যে হারে বেড়েছে

(১) কৃষিক্ষেত্রে x2.5
(২) গ্রামে চাকরি সৃষ্টিতে x3
(৩) বিদ্যুত x2.0
(৪) রেলওয়ে x2.5
(৫) রাস্তা, সরক এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার x 2.5
(৬) শিক্ষা x 4.0
(৭) স্বাস্থ্য x2.0
(৮) গৃহ নির্মান x 2.0
(৯) শেয়ার মার্কেটের বৃদ্ধি x5.0

এখন মুদ্রাস্ফিতি এবং জিডিপির বৃদ্ধিকে ধরলে দ্বিগুন বৃদ্ধি স্বাভাবিক বেস বা ধারক সুচক। অর্থাৎ বর্তমান ইউ পি এ সরকার সব ক্ষেত্রেই পূর্বের অগ্রগতিকে ধরে রেখেছে ত বটেই-গ্রামীন কর্ম সংস্থান এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট অনেক বেশী বাড়িয়েছে। খুব পরিষ্কার ভাবেই মনমোহন সিং সরকার, বিজেপির থেকে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন এবং সমাজতান্ত্রিক সরকার উপহার দিয়েছেন। আবার শেয়ার মার্কেটের বৃদ্ধিও হয়েছে পাঁচগুন। সুতরাং ব্যাবসায়ী ও শিল্পগোষ্ঠিকেও নিরাশ করে নি এই সরকার-বরং শেয়ার মার্কেটের এত উত্থান ভূতপূর্ব আর কোন সরকারের আমলেই হয় নি।

এর মানে এই নয় টাকা ফেললেই সব কাজ হয়ে গেল। গ্রামে রোজগার যোজনাগুলিতে পশ্চিম বঙ্গের মতন রাজ্যে ১০০ দিনের মধ্যে ২০ দিনও লোকে কাজ পায় নি। এর পরেও সরকারি খরচের স্বচ্ছতা বাড়াতেও ব্যার্থ হয়েছেন মনমোহন। ই-গর্ভনেন্স মুখভরা বুলি রয়ে গেছে-গুদামে চালপচা বা সরকারী কর্মচারিদের নানান যোজনার টাকা
মেরে দেওয়া তারা আটকাতে পারেন নি। মনে রাখতে হবে-এই চুরি আটকাতে না পারলে-১০০ টাকা আর ১ টাকা খরচ করায় কোন পার্থক্য থাকে না। শিক্ষাখাতে খরচ বৃদ্ধি স্বাগতম। কিন্তু শিক্ষা অধিকার বিল আটকে দিয়ে বেসরকারি বিমা বিল কেন অগ্রাধিকার পাচ্ছে? শিক্ষার অধিকার বিল বিশ্বের বৃহত্তম নিরক্ষর দেশের জন্যে সবথেকে বেশী জরুরী-সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে বিমা শিল্পের বেসরকারীকরনে জন সাধারনের কি লাভ? আমাদের ৩০% গরীব লোকেদের বিমা কেনার ই ক্ষমতা নেই! নিদেন পক্ষে কৃষকদের আত্মহত্যা ঠেকাতে সরকারি বিমার ব্যাবস্থা করা যেত না? প্রধানমন্ত্রী নিজেও দরিদ্র ঘরের মেধাবী সন্তান-নিদেন পক্ষে গরীব মেধাবি জন্যে সরকারী ব্যাঙ্কগুলো কোন স্কীম তৈরী করতে পারলো না? উনি ১৬ টি আই আই টি দিলেন-গবেষকদের ফেলোশিপ, মাইনে বাড়িয়েছেন। খুব ভাল কাজ। এদের কথাত এতদিন কেও ভাবত না। কিন্তু গরীবদের কাছে যাতে প্রকল্পহুলির টাকা পৌঁছায়-সেটাও ত নিশ্চিত করতে হবে।

পরিশেষে বলি-মিলিটারি খাতের ১১৬,০০০ কোটি টাকার বরাদ্দ বড্ড বেশী। ভারত দেশটাতে মিলিটারী অপরিহার্য্য-কিন্ত এতটাকা-২৭ বিলিয়ান ডলার কেন দরকার মাথায় ঢোকে না। আজকাল ত লোকবলের চেয়ে স্ট্রেটেজিক অস্ত্রবলের কদর বেশী। স্ট্রটেজিক ওয়েপনাইজশনের জন্যে ডি আর ডি ওর বরাদ্দ বাড়ানো উচিত-সেটা ত দেখলাম না। তাহলে ত এই টাকাটা যাবে বিদেশী অস্ত্র ব্যাবসায়ী আর দালালদের পকেটে। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব যতদিন না ঘুচছে-ততদিন এই খাতের টাকা মিলিটারি গবেষনাতে যাক। তাতে অন্তত আই আই টি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলোতে ফান্ডিং এর জ়োয়ার আসবে- গবেষনার মান বাড়বে-গবেষকদের সংখ্যা বাড়বে। যা দেশের জন্যে এসেট্ও বটে। মিলিটারী ছাড়া যখন উপায় নেই-তখন টাকাটা মিলিটারী গবেষনা খাতেই খরচ হৌক।
একটা অর্জুন ট্যাঙ্ক ডি আর ডী ও থেকে বেড়তে ২৫ বছর লাগছে-এসব দিকে নজর দিক সরকার।

Thursday, February 12, 2009

শিক্ষাখাতে ব্যার্থ হয়ে কলেজ ইউনিয়ান দখলে উল্লাস


প্রেসিডেন্সি কলেজে এস এফ আই এর বিজয়ে সিপিএমের উল্লাস আমাকে যৎপরোনাস্তি আশ্চর্য্য করেছে। মাত্র দু সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর সমীক্ষা বলছে পশ্চিমবঙ্গ পেছনের দিক দিয়ে দ্বিতীয়। সেটা নিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের কোন হোলদোল ত ছিলই না-বরং একটি মিটিং এ মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, এটা না কি তাদেরকে হেয় করার চক্রান্ত! সত্যি কি বিচিত্রই না এই দেশ! বাঙলা এখন শিক্ষায় পেছনের দিক থেকে দ্বিতীয়-সেটা নিয়ে পার্টিতে আলোচনা হল না। এমনকি তাদের পোষ্য ছাত্র সংগঠনটিও এই নিয়ে একটিবার ও রা করলো না-পাছে তাতে ছাত্রনেতাদের পার্টি ক্যারিয়ার ধ্বংশ হয়। আর এরা কোন কলেজের ক্যান্টিন সেক্রেটারী হতে পেরেছে-সেটা নিয়ে লাফালাফি করছে!

আমি আগেও লিখেছি। হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্টদের মতন কমিনিউস্টরাও যাবতীয় কিছু-এমনকি হেঁসেলের আরশোলার মধ্যেও চক্রান্ত খুঁজে পান। কারন এই আদর্শবাদগুলি আসলেই আলখাল্লা-ভেতরের রাজনীতিবিদটি সেই ক্ষমতালোভি মানুষ। ফলে যারা উঠতে বসতে আত্মসমালোচনার কথা বলেন, তারা এই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন সমীক্ষাটিকে চক্রান্ত বলে আমাদের ছেলেমেয়েদের আরো খাদের দিকে ঠেলে দিলেন! তার আগে এই শিক্ষা সূচকটি বোঝার চেস্টা করি। ছাত্রদের শিক্ষার মান থেকে, শিক্ষক,ছাত্র অনুপাত এবং শিক্ষায়তনের সুবিধা-এক কথা শিক্ষার সর্বাঙ্গীন সমীক্ষার দ্বারা এই শিক্ষাসূচক বা এডুকেশনাল ডেভেলেপমেন্ট ইন্ডেক্স তৈরী হয়েছে।





পশ্চিমবঙ্গের তলায় শুধু অরুণাচল প্রদেশ আর বিহার!

সূত্রঃ
এরকম নই যে আমরা শিক্ষার এই বেহাল হাল নিয়ে কিছুই জানি না। বামফ্রন্ট সরকারের শিক্ষানীতিতে স্কুলের শিক্ষকদের পেস্কেল ছাড়া আর কিছুই স্থান পায় নি। ছাত্ররা সব থেকে অবহেলিত। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি অবশ্যই শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ছাত্রদের তা উপকারে না এলে, পুরো টাকাটাই জলে। এই চুড়ান্ত ব্যার্থতার অনুসন্ধানে আজ প্রশ্ন উঠবেইঃ
(১) শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধিতে এই সরকারের ভূমিকা কি? স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টীউশন এবং প্রাইভেট স্কুলের রমরমা আটকানো গেল না কেন? প্রাইভেট টিউশনের বিরুদ্ধে যখন ব্যাবস্থা নেওয়া শুরু হল-তখন শিক্ষা ব্যাবস্থার আর কিছুই বাকী নেই। এর কারনটাও আমরা জানি। শিক্ষক সংগঠনগুলির সাথে বেতন নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে-শিক্ষাকে বাঁচাবার জন্যে কি করা যায়-সেই চেতনাটা বা ইচ্ছাটাই ছিল না।
(২) মাস্টার ডিগ্রী, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারীর ছাত্রদের মাত্র ৪% সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়া। এই সংখ্যাটা আগে ৫০% এর বেশী ছিল। মিউনিসিপালিটির সরকারি স্কুলে ছাত্র নেই। দিন আনে দিন খাই এমন পিতা মাতাও সাধ্যের বাইরে গিয়ে ছেলে-মেয়েকে "বেসরকারী ইংরেজী স্কুলে" পাঠাচ্ছেন। তাহলে কি সরকার ধরেই নিয়েছে-শিক্ষার কোন দায়ভার তারা নেবে না? আমেরিকাতে পর্যন্ত বেসরকারী স্কুল একদমই চলে না। সব ভাল স্কুলই সরকারী। শিক্ষার বেসরকারীকরন-প্রাইভেট স্কুল-প্রাইভেট টিউশনএগুলো চলতে দিলে, রাজ্যের শিক্ষার বারোটা বেজে যাবে ( যদি কিছু বাকি থাকে)। শিক্ষার বেসরকারীকরনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই এই "জনগণের সরকার" নিল না। বরং উৎসাহিত করেছে সরকারি শিক্ষাকে উচ্ছন্নে পাঠিয়ে। সরকারি শিক্ষাকে ধ্বংস করে যার বেসরকারী শিক্ষায় মদত দেয়-তারা যদি প্রতিক্রিয়াশীল না হয়-জানতে ইচ্ছা করে, প্রতিক্রিয়াশীলতার সংজ্ঞাটা কি? শামুক থেকে আরশোলাকে প্রতিক্রিয়াশীল বললেই-ধাপ্পাবাজি চাপা থাকে?
(৩) সরকারি স্কুলগুলি পরিদর্শনের অভাবে উচ্ছন্নে গেছে। অথচ আগের সোভিয়েত ইউনিয়ানে বা বর্তমানের চীনে, যেখানে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সবথেকে বেশী সফল হয়েছে-সেখানে স্কুলগুলির সাফল্যের পেছনে ছিল, কঠিন পরিদর্শন ব্যাবস্থা। সরকারি পরীক্ষায় স্কুলের রেজাল্ট বাজে হলে-আগের সোভিয়েত ইউনিয়নে হেডমাস্টারের চাকরি যেত। স্কুলের সিলেবাস প্রতিবছর বদলানো হত-যাতে শিক্ষকরা গাছাড়া মনোভাবে না থাকেন। আমাদের এখানে স্কুলের কোয়ালিটি কণ্ট্রোলের জন্যে আগে যা ইন্সপেকশন ছিল-সেটুকুও উঠে গেল। ইন্সপেক্টর আর কি করবেন? তিনি এবং তার যাকে টাইট দেওয়ার কথা সেই শিক্ষককুল-সবাই বেতন বৃদ্ধির জন্যে পার্টির পদলেহনে জীবন সার্থক করছেন। ছাত্রদের কথা তারা ভাববেন কেন? এই সরকারও ভোটব্যাঙ্ক ছাড়া কিছুই ভাবে না-ছাত্রদের ত ভোট নেই-আর তাদের শিক্ষাটাও এমন দেওয়া হচ্ছে-নিজেরা যে বঞ্চিত-যেটুকু ভাবার মতন মৌলিক চিন্তা করার ক্ষমতাও কোন ছাত্রর নেই!
(৪) স্কুল কমিটিগুলো-যা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হওয়া উচিত-সেখানেও পার্টি ঢুকেছে। তাহলে আর বাকি রইলো কি? কমিটির প্রধান, পঞ্চায়েতের প্রধান আর স্কুলের প্রধান যখন একই পার্টির-কে কার কাছ থেকে দায়বদ্ধতা চাইবে? সবাই ত পরস্পরের স্বার্থে নিয়োজিত। এখানেও সেই একই প্রশ্ন উঠবে-তাহলে ছাত্রদের স্বার্থ দেখবে কে? স্কুল কমিটি শেষ ভরসা। গ্রামের লোকেরা চাই- তাদের স্কুল সেরা হৌক। আমেরিকাতেও স্কুল ডিস্ট্রিক্টে শিক্ষার মান নিয়ে, স্থানীয় লোকেরা গর্ব করে, চিন্তা করে। এই ধারা গ্রামবাংলায় ছিল বহুদিন। স্কুল কমিটিতে পার্টি ঢুকিয়ে-এই শেষ ভরসাস্থলটুকুকেও শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, আমরা যেটা দেখছি-সেটা হচ্ছে শিক্ষা ব্যাবস্থার প্রতিটা গুরুত্বপূর্ন অঙ্গনে-সিলেবাস, শিক্ষকের দায়বদ্ধতা, ইন্সপেক্টরের দায়বদ্ধতা, স্কুল কমিটির স্বাধীন পরিচালন ক্ষমতা-সর্বত্র পার্টির অদৃশ কালো হাত-ভোট যতটা চেয়েছে-ছাত্রদের শিক্ষার হাল কি হবে-তাই নিয়ে বিন্দুমাত্রও ভাবে নি।
আর শুধু সিপিএমকেই গালাগাল দিই কেন। শিক্ষা ব্যাবস্থার এত বড় বিপর্যয় নিয়ে তৃণমুল বা কংগ্রেসই বা কোন আন্দোলন করল? মমতা ওঁত পেতে আছেন সিপিএম কবে কোন মহিলার শাড়ী ছিঁড়বে-আর সেই ছেঁড়া ফাঁকদিয়ে গলে- তিনি রাইটার্স দখল করবেন। শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে দিল শাসক দল-তাই নিয়ে বিরোধি নেতাদের কোন আন্দোলন নেই! তারা আছেন নিজেদের ঘর গোছানোর তালে। সাধে ছাই ফেলতে ভাঙা কুলোর মতন সিপিএম ভোট কুড়ায়?
তারফল এই-আমরা আজ শেষের দিক থেকে দ্বিতীয়-বিহারের আগে! তাতে কি? আসুন-আমাদের পার্টির পোষ্যছাত্ররা প্রেসিডেন্সি কলেজের ক্যান্টিন সম্পাদকের পদে জিতেছে-তাই আহ্লাদে আটখানা হয়ে নাট্যমঞ্চে রাজার আলখাল্লাখানা আবার দেখাই! বাজারে ফাটা প্যান্টতো আর দেখানো যাচ্ছে না-তাই রঙ্গমঞ্চই শ্রেয়।