Saturday, May 29, 2010

বাংলাদেশে ফেসবুক নিষিদ্ধ! এই ধরনের মূর্খামী আর কতদিন চলবে

বাংলাদেশ একটি ইসলামিক দেশ-এই কথাটা লিখতে মোটেও আমার ভাল লাগে না। কারন এই দেশের লোকেদের যদ্দুর দেখেছি-কেওই খুব উগ্র মুসলমান না। তবুও ইসলামিক রাজনীতির চালে এই দেশটি ধর্ম নিরেপেক্ষ থেকে ইসলামিক হয় এবং বাকী ইসলামিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এর ইসলামিকরন বা আরবীকরন চলতে থাকে। পুরোটাই অবশ্যই শাসক শ্রেনীর স্বার্থে। কারন ধর্ম এবং ধর্মীয় অনুভূতিগুলিকে বাঁচিয়ে রাখলে শোষণ কার্যের সুবিধা হয়। গরীব এবং বঞ্চিতদের শ্রেণীদ্বন্দজনিত ক্ষোভকে ধর্মের আফিং দিয়ে আটকে রাখা যায়। নইলে চোদ্দশ বছরে পুরানো কতগুলো বই আর ইতিহাসের এক বিতর্কিত চরিত্র মহম্মদকে নিয়ে এত নাটক হয় কি করে? আদতে কোরান আর মহম্মদকে দিয়ে দেশ চলে না। দেশ চালাতে সেই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিই লাগে। যে দেশ যত বেশী বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যাবহার করতে পেরেছে, তারা তত সফল। এটাত একালে একজন বাচ্চাও জানে।সেখানে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ যখন ফেসবুককে নিশিদ্ধ করে বুঝতে হবে, ইসলামিক রাষ্ট্রগুলির রাজনৈতিক ভিত খুব দুর্বল এবং মডারেট মুসলিম নামক হাঁসজারু মুসলিম শ্রেণীটি আসলে শোকেস-এই রাষ্ট্রগুলি পরিচালিত হয় গোডাউনের মালে।

ফেসবুককে আটকানো আর জোয়ারের জলকে আটকানোর চেষ্টা করা একই ব্যাপার। স্যোশাল নেটোয়ার্কিং একটা ইরিভার্সিবল মুভমেন্ট। জিমেইল, ইয়াহুও আস্তে আস্তে সোশ্যাল নেটোওয়ার্কিং এর দিকে যাচ্ছে। এবার কি তাহলে জিমেল, ইয়াহু মেইল বন্ধ হবে? যে ইসলাম বিরোধি পেজের জন্যে ফেসবুক নিশিদ্ধ হল, তার থেকে হাজারগুন বেশী ইসলাম বিরোধিতা চলে মুক্তমনা, সচলায়তন ব্লগ সাইটগুলোতে। বাংলাদেশের এই ব্লগ সাইটগুলো বাংলাভাষা সাহিত্য এবং জ্ঞান বিজ্ঞানে নতুন জোয়ার এনেছে। এবার কি এদের পালা? ইসলাম বিরোধিতার ধুয়োতুলে এই ধরনের নির্বোধ ছাগলামী কবে থামবে? এই সব রাষ্ট্রনেতাগণ কি বুঝতে পারছেন এই ধরনের বালখিল্য সিদ্ধান্তে গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ইমেজটা কি হচ্ছে? পাকিস্তানের না হয় ইমেজের দায় নেই। সবাই জানে ওই দেশটা গাধার ঘারে গেছে। কিন্ত বাংলাদেশের এই নতুন প্রগতিশীল সরকার যে তালিবানি সিদ্ধান্ত নিল-তাতে গোটা বিশ্বের কাছে এটাই প্রমাণিত হল বাংলাদেশ একটি মৌলবাদি রাষ্ট্র। এখন ত দেখছি মডারেট মুসলিম বলে আসলে সত্যিই কিছু নেই।

ফেসবুক আটকানোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি না হলেও, ইমেজের ক্ষতি হবে সাংঘাতিক। বাংলাদেশ যে মড়ারেট নয় একটা মোল্লা রাষ্ট্র সেটাই গোটা বিশ্ব জানবে। বাস্তবেও কিছু ক্ষতি অবশ্যই আছে। ফেসবুক বাংলাসাহিত্যের সব থেকে বেশী ফার্টাইল গ্রাউন্ড হয়ে উঠেছিল। আমার নিজের ফেসবুক ফ্রেইন্ড প্রফাইলে আছে ৫০০ র বেশী বাংলাদেশী। তারা কিছু লিখলে, সব সময় আমাকে ট্যাগ করেন। বস্তুত ফেসবুকের মাধ্যমে দুই বাংলার সাহিত্য আদানপ্রদান বেশ জমে উঠেছিল। দুই বাংলা এক হয়ে উঠছিল। কারন ভারতীয় বাঙালীদের আরেকটি জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট অর্কুটে বাংলাদেশী খুব বেশী নেই। ফেসবুকই ছিল একমাত্র জায়গা যেখানে দুই দেশের বাঙালীরা মিলিত্ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন। আমরা এবার রবীন্দ্রজয়ন্তী করলাম ফেসবুকের মাধ্যমে-সেখানেও ২৩০০ জন গেস্টের মধ্যে প্রায় ৭০০ জন ছিল বাংলাদেশ থেকে। কুষ্টিয়া সহ বাংলাদেশের নানান প্রান্ত থেকে আমি ইমেল পেয়েছি। ফেসবুক দুই বাংলার মধ্যে গড়ে ওঠা কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে ফেলছিল। আমাদের সাহিত্য, গান এবং নাটকের গ্রুপেও প্রায় ৩০% বাংলাদেশী যা্রা নানান বাংলাদেশী ইপত্রিকা, গান এবং নাটকের সাথে ভারতীয় বাঙালীদের পরিচয় করাচ্ছিলেন যারা এত দিন বাংলাদেশ এবং তার সাহিত্য নিয়ে কিছুই জানতেন না।এদের ভারতীয় বাঙালী বলাই ঠিক হবে, কারন আমি ডেমোগ্রাফি নিয়ে দেখেছি দিল্লী, মুম্বাই থেকে প্রায় কোলকাতার সমান বাঙালী এই গ্রুপ গুলোতে আছে। আমি আশান্বিত ছিলাম, এই ভাবে আস্তে আস্তে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ বাংলা সংস্কৃতি ভারতীয় বাঙালীদের কাছে পৌঁছে যাবে। ইসলাম নামে এক অচলায়তন যা বাঙালী জাতিকে বিভক্ত করেছিল, তা আবার বাঙালীর ঐক্যের পথে কাঁটা হয়ে রইল।

আমার সত্যিই ক্ষোভ জানানোর ভাষা নেই। এই ধরনের অরিণত বালক বালিকাকূল যদি কোন দেশের রাষ্ট্রনায়ক হন, সেই দেশকে সত্যই আল্লা ছাড়া কেও বাঁচাতে পারবে না।

Thursday, May 27, 2010

মাওবাদি জঞ্জাল কবে পরিষ্কার হইবে?

আবার হইল।

এবার মাওবাদিরা বিষ্ফোরন ঘটালো হাওড়া-কুড়লা এক্সপ্রেসে। শতাধিক নিহত হওয়ার আশঙ্কা।

আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, এটা গৃহযুদ্ধ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমদের মানতে হবে আমরাই এই যুদ্ধের জনক। আদিবাসিদের প্রতি বঞ্চনা, তাদের হাতের রাইফেলের নল হয়ে বেড়চ্ছে-এই কথাগুলি যতটা সত্য, ততটাই সত্য
আদিবাসিদের ভুল পথে পরিচালনা করা হচ্ছে। কমিনিউস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ান এবং চীনে আদিবাসীদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা ইতিহাসে তুলনাহীন। সুতরাং এই বঞ্চনার উত্তর ছিল উন্নততর গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে-কমিনিউজমের মতন হঠকারি মানুষ খুনের তত্ত্বে না।

কিন্ত অবস্থা এখন যা দাঁড়িয়েছে, কড়া হাতে মাওবাদি এবং সিভিল সমাজে লুকিয়ে থাকা তাদের সমর্থকদের খুঁজে খুঁজে বাড় করতেই হবে। তার মানে অবশ্যই এই নয় যে, যে সব ভ্রান্ত তরুণ তরুনীরা কমিনিউস্ট স্বর্গের রূপকথায় ভুলে মাওবাদিদের সমর্থক হয়েছে তাদের জেলে পুড়তে হবে। মোটেও তা না-কিন্ত তাদের চিহ্নিত করা দরকার সাপ্লাই লাইন কেটে দেওয়ার জন্যে। গোটা দেশে মাওবাদিদের বিরুদ্ধে জনগণের বিক্ষোভকে কাজে লাগাতে না পারলে এই গৃহযুদ্ধ ইস্রায়েল থেকে সিকিউরিটি ইকুইপমেন্ট দিয়ে জেতা যাবে না। ভারতীয় জনগণের মনে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সঙ্গত কারনেই ক্ষোভ আছে-এবং সেটাই মাওবাদিদের সেরা অস্ত্র। সুতরাং আদিবাসি এলাকাগুলোতে, খনিমালিকদের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার ফেরানোর লড়াইটাই আসল গৃহযুদ্ধ।

কমিনিউজমের ইতিহাসে চারিদিকে শুধু রক্ত। কারন এই আদর্শবাদ বিশ্বাস করে মানুষের থেকে সমাজ এবং পার্টি বড়! তাই মানুষ তাদের এক্সপেরিমেন্টের গিনিপিগ। মাওবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এ কমিনিউজম নামক দৈত্যটার সাথে মানুষের সম্যক পরিচয় করাতে হবে-নইলে মাওবাদ, লেনিনবাদ ইত্যাদি মানুষ খুনকরা মতবাদগুলির পাঁকে পড়ে আরো বেশী সংখ্যক তরুন মাওবাদি হবে। তাত্বিক সাপ্লাইলাইন না কাটলে, মাওবাদ ধ্বংশ হবে না।