Monday, March 11, 2013

পশ্চিম বঙ্গে বিনিয়োগ? পেট খারাপ না মাথা খারাপ?

শিল্পচিত্র
বছররূপায়িত প্রকল্পলগ্নি*
২০০৮২১৭৪৪৩৪.৫০
২০০৯২৬২৮৪৯৩.৪৩
২০১০৩২২১৫০৫২.২৩
২০১১২৮২৪৬৫.৪৬
২০১২১২৩১২.২৪
*কোটি টাকায় • সূত্র: রাজ্যের আর্থিক সমীক্ষা ২০১২-’১৩

 একে বলে ঝুলি থেকে বেড়ল বেড়াল। যা জানতাম, তা আজ সংখ্যাতাত্বিক রূপ পেল।

    এক ব্যাবসায়ীর কথা বলি। তৃণমূলি। এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ।  বাঁকুড়াতে একটি নার্সিংহোম করবেন বলে তিন একর জমি কিনেছিলেন।  সিপিএম আমলেই।  তার ধারনা ছিল, ওখানে নার্সিং হোম করলে, সিপিএম টিকতে দেবে না। তৃণমূল এল। ভদ্রলোকটি ড্যাং ড্যাং করে, তার মন্ত্রী বন্ধুটিকে ডেকে শিল্যান্যাস করলেন।  ভাল কথা।   ঈঁট পড়তেই ঝামেলা শুরু। তৃণমুলের ৫ টি ফ্যাকশন এসে হাজির। টাকা দাও। সব মিলিয়ে ২২ লাখ টাকা চেয়েবসল পাঁচ পার্টি।

   ভদ্রলোক বল্লেন ইয়ার্কি? আমি শালা তৃণমূলী, আর আমার কাছেই  তোলা আদায়?  চল্লেন মন্ত্রী বন্ধুর কাছে।  তিন দিন বাদে তিনি দেখা দিলেন।  এক সপ্তাহ বাদে তিনি সংশ্লিষ্ট সব নেতাদের ডেকে পাঠালেন। শেষ মেশ ৭ লাখে রফা। তৃণমূলী ভদ্রলোক হতবাক। কোথায় সিপিএম আমলে ১ লাখ টাকায় একদম ব্লক থেকে জেলা স্তর ম্যানেজ হত, আর এখানে নিজের পার্টিই  বলে সাত লাখ?  ভদ্রলোক বুঝলেন অবস্থা আয়ত্তের বাইরে। বিধি বাম। সিপিএম ফিরে না আসা পর্যন্ত আবার অপেক্ষা করতে হবে। কারন সাত লাখ খরচ করেও যে কিছু হবে না, সেটা তখন তিনি বিলক্ষন বুঝেছেন। বুঝেছেন মন্ত্রীর ও কোন কন্ট্রোল নেই গ্রাসরুট লেভেলে।  কার ভরসায় বিনিয়োগ করবেন?

  এটা পশ্চিম বঙ্গের সার্বিক চিত্র।  কোন বিনিয়োগকারী  ভরসা পাচ্ছেন না। কারন কে তৃণমূল সেটাই কেও জানে না। কালকে যে কেও দরজাতে উপস্থিত হয়ে বলবে আমি ওমুকের লোক, ব্যাবসা করছ, টাকা দাও। আর কিছু হলে ব্যাবসায়ীরা যাবেই বা কার কাছে? মন্ত্রীদের নিজেদের চেয়ারএর ঠিক নেই। আজ আছে, কাল নেই।  তার ফল আজ হচ্ছে এই। ২০১০ সালের ১৫,০০০ কোটী টাকার শিল্প বিনিয়োগ-২০১২ তে ৩১২ তে এসে ঠেকেছে। ২০১৩ তে ওটা শুন্য হলেও অবাক হব না।

 এর থেকে মমতার উদ্ধার পাওয়ার একটাই উপায়। মোদি এবং হুগোশাভেজ থেকে শিক্ষা নেওয়া। এরা ডান এবং বাম হলেও এদের সাফল্যের পেছনে একটাই স্ট্রাটেজি ছিল।  এরা মন্ত্রীসভাকে একদম ডাইলুট করে, পেশাদার দিয়ে নিজেদের কোটেরি গড়তেন, যারা রাজনীতিবিদ না। কাজের জন্য শাভেজ এবং মোদি উভয় নেতাই এই পেশাদারদের দিয়ে করান বা করাতেন। শাভেজের দলে ছিল ৭ জন ডাক্তার এবং ১৩ জন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার। এরা পার্টিকে কাজে লাগান জনসংযোগ হিসাবে। এর বেশি পার্টিকে একদম এডমিনিস্ট্রেশনে ঢোকান নি এরা।
 
 মমতা যত দ্রুত, তার পার্টির লোকেদেরকে এডমিনিস্ট্রেশনের  দ্বায়িত্ব থেকে রিলিভ দিয়ে একটি পেশাদার কর্মঠ দল গঠন করতে পারবেন, তত সুবিধা পাবেন। পার্টিকে, পার্টির স্থানে না ফেরালে, এই সম্ভবত তার শেষ মুখ্যমন্ত্রিত্ব।  তাকে খুব দ্রুত অভিজ্ঞ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সফল আই এ এস, শিল্পপতিদের নিয়ে একটি দল গড়ে, তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে, যাতে তারা পার্টির লোকাল মস্তানদের একদম নিয়ন্ত্রনে এনে, একটি সুষ্ঠ প্রশাসন গড়তে পারেন। মমতা এমনটা করেন নি তা না-কিন্ত ক্ষমতা দেন নি তাদের কে। ফলে ববি হাকিম, মদন মিত্র, মুকুল রায়-এরা জাঁকিয়ে বসেছে। এরা কি-তা কি উনি জানেন না?