Tuesday, October 20, 2009

মাওবাদ এবং ভারতের ভবিষ্যত

সাঁকরাইল থানায় যেদুজন পুলিশ মারা গেলেন মাওবাদিদের হামলায় এবং যে ও সি আজ বা কাল কোতল হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন-তাদের মৃত্যুর জন্যে দায়ী কে?

রাষ্ট্র? সিপিম? মাওবাদি?

নানান ফোরামে ঘুরলে দেখা যাবে সিপিএম মাওবাদিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে-নক্সালরা সিপিম আর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে-দক্ষিন পন্থীরা আবার মাওবাদি এবং সিপিএম উভয়কেই দুষছেন বৃত্তাকারে স্তূপীকৃত হচ্ছে দোষারোপ কিন্ত বাস্তবটা কি?

এককচিত্র বা খন্ডচিত্র শুধুই গোলক ধাঁধা মাওবাদিরা দড়জায় কড়া নাড়ছে এব্যাপারে সন্দেহ নেই এসব আলোচনাতে যা ভুলে যাওয়া হচ্ছে

(১) ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র ক্লিষ্ট জঙ্গল রাজ্যেগুলিতে মাওবাদিদের ঘাঁটি
(২) ২৮ টির মধ্যে ২২ টি রাজ্যে মাওবাদিরা সক্রিয় -এর মধ্যে চারটি রাজ্যে তারাই সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছে ( তোলাবাজি বা ট্যাক্সেশন পর্যন্ত)
(৩) সালোয়া জুডুম, সেনাবাহিনী-কোবরা--কোন কিছু দিয়েই তাদের দমানো যাচ্ছে না তাদের শক্তি বৃদ্ধি হচ্ছে উত্তোরোত্তর
(৪) গণতান্ত্রিক সিস্টেমের দুর্বলতার তারা সুযোগ নিচ্ছে পশ্চিম বংগে মাওবাদিরা নন্দীগ্রামে ছিল তৃণমূলের সাথে, গরবেতায় সিপিএমের সাথে-রাজনৈতিক পার্টিগুলি নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্যে এদের ডাকছে-মাওবাদিরা সুযোগের সম্পূর্ণ সদ্বাব্যাবহার করছে

আমরা বলছি মাওবাদিরা গণতন্ত্রে ফিরছে না কেন? কেন গণতান্ত্রিক পথে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে না?

আসলে এটা ওপর থেকে বলা সহজ -বাস্তবটাও দেখতে হবে কারা এম এল এ, এম পি হয় এসব জায়গা থেকে? আজই দেখলাম দলিত নেত্রীর এক চ্যালা যে এম পি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিল-পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে ৮ টি ধর্ষনের ঘটনা নথিবদ্ধ হওয়ার পরে! খুন, রাহাজানি, ধর্ষন ইত্যাদি ২২ টা মামলা তার বিরুদ্ধ! জমি দখলের বিরুদ্ধে লড়াই করা পার্টির এম এল এ জমি দখল করেই তিন বছরে ৮০ লাখ টাকার সম্পত্তি বানিয়েছেন!

জমি দখলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নামা নেতাই যদি ক্ষমতা পাওয়ার পরে জমি দখল করা শুরু করেন-তাহলে কি ভাবে এবং কেন গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করবে মানুষ? নেতা হওয়াটা আজকাল মিডিয়া মঞ্চে অভিণয় করে মানুষকে টুপি পড়িয়ে এম এল এ, এম পি হয়ে গুছিয়ে নেওয়ার সিস্টেম হয়েছে আপনারাই বুকে হাত দিয়ে বলুন কোন রাজনৈতিক নেতাকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে আপনাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে? দু এক জন এমন থাকলেও পার্টি কি তাকে রাখবে? তাহলে ওই এক বেলা পাতা-ভাত খেয়ে থাকা বনের মানুষ গুলো কাদের বিশ্বাস করবে? রঙ্গমঞ্চের রঙ মাখা অভিনেতাদের ? এ ব্যাপারে ত সবাই সমান সিপিএমের অনুজ পান্ডে ত শুধু লালগড়ে-চত্রিশগড় মধ্য প্রদেশে অমন অনেক অনেক অনুজ পান্ডে আছে!

এদেরকে গণতন্ত্রে ফিরতে বলাটা প্রহসন নেতা থেকে অফিসাররা কি তা ওরা দেখেছে-আবার মাওবাদি নেতারা কিভাবে ওদের পাশে নানান ভাবে দাঁড়িয়েছে, সেটাও ওরা জানে ন্যাড়াদের বেল তলায় বার বার যেতে বলাটা ঠাট্টা করা চে গুয়েভেরার ওপর একটা ডকুমেন্টারী মনে পড়ছে-চে আর কাস্ত্রো একের পর এক থানা আক্রমন করছেন-আর তত গ্রামের মানুষেরা স্বেচ্ছায় চে র গেরিলা ফোর্সের সাথে যোগ দিচ্ছেন ভারতের মাওবাদিরাও একই ভাবে এগিয়ে চলেছে তবে ভারতে গণতন্ত্র আছে এবং কিউবার থেকে ভারত একশোগুন বড়-তাই বাতিস্তুতা সরকারের মতন ভারতের পতন অসম্ভব-কিন্ত ভারতে একটা প্রাক বিপ্লব পরিস্থিতি মাওবাদিরা তৈরী করেছে, তা অস্বীকার করা অসম্ভব

যদি রাশিয়া , চীন আর কিউবার ইতিহাস সম্পূর্ণ না জানা থাকত-আমি বলতাম মাওবাদিরা এগিয়ে যাক কিন্ত ইতিহাস এটাও বলে কমিনিউস্ট বিপ্লব এই পচা গণতন্ত্রের চেয়েও আরো ভয়ঙ্কর এই গনতন্ত্র আর যাইহোক লাখে লাখে মানুষ মারে না-দুর্বল হলেও কিছু পরিবর্তন হয় আর পৃথিবীর কোন দেশেই কমিনিউজম শোষনের অবসান করে নি-বনিক শ্রেনীর বদলে পার্টির নেতা আর বুরোক্রাটরা শোষকের স্থান গ্রহণ করেছে-যে ব্যাপারের সাথে পশ্চিম বঙ্গের লোকজনের সামান্য পরিচয় হয়েছে আমাদের গণতন্ত্র যতই বাজে হৌক অতটা বাজে নয় যে পুলিশ স্টেটের ন্যায়, যা খুশি যাকে খুশী মারা যাবে, জেলে ভরা যাবে সুতরাং আমাদের গনতান্ত্রিক কাঠামোর যে সমস্যা আছে-গণতন্ত্রের যে সমস্যা আছে-যার বিরুদ্ধে মাওবাদিরা লড়াই করছে-সেই গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ব্যাপক ভাবে সংস্কার করতে হবে

কিন্ত কেও যদি মাওবাদিদের বিরুদ্ধে সিপিএমের মায়াকান্না দেখে পুলকিত হন ভুল করবেন সিপিএমের আরাধ্য দেবতা লেনিন রেড টেররের সময় গনতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীদের ঠিক এই ভাবেই পিঁপড়ের মতন মেরেছিলেন যেভাবে মাওবাদিরা সিপিএম মারছে সুতরাং সিপিএমের তাত্ত্বিক ভিত্তি ভাওতাবাজি দুনাম্বারীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে-মাওবাদিদের মধ্যে কিন্তু এই দ্বিচারিতা নেই তারা লেনিনের গনতান্ত্রিক এবং দক্ষিন পন্থীদের খুন করে লাল সন্ত্রাসের সাহায্যে ক্ষমতা দখলের পথই নিয়েছে সিপিএম মুখে লেনিনের কথা বলেলেও, আসলেই একটি বুর্জোয়া পার্টি স্টালিন দুবার মেনশেভিকদের সাথে হাত মিলিয়ে জারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চেয়েছিলেন-লেনিন দুবারই না করে দিয়েছিলেন লেনিন গনতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীদের সাথে কোনদিন হাত মেলান নি-এবং ১৯১৮ সালে তাদের মেরেই ফেললেন বা পিটয়ে বলশেভিক বানালেন মাওবাদিরা সিপিএম পিটিয়ে কিন্ত ঠিক এই কাজটাই করছে সুতরাং সিপিএম যখই মায়াকান্না কাঁদুক, কমিনিউজমের সামান্য ইতিহাস বা তত্ত্ব যাদের জানা আছে, তারা নিশ্চিত ভাবেই জানবেন মাওবাদিরাই আসল লেনিনবাদি দল-সিপিম হচ্ছে একটি বিশুদ্ধ হিপোক্রিট গজকচ্ছপ তাত্ত্বিক ভিত্তি এবং ক্যাডার বেসেও লেনিনে এরা সামনে দিকে মালা পড়িয়ে পেছনে পেচ্ছাব করছিল-এখন আসল লেনিনবাদিদের হাতে মার খেয়ে, আসল নকলটা সহজেই বেড়িয়ে আসবে

মাওবাদিদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান যেমন হওয়া দরকার-ঠিক তেমনই আমাদের গনতন্তের দুর্বলতা বুঝতে, মাওবাদি আন্দোলনের দরকার ছিল শুধু সেনা অভিযান করে এই আন্দোলন রোখা যাবে না ভারতীয় গনতন্তের আমূল সংস্কার সাধন করতে হবে, যাতে একদম পিছিয়ে পড়া লোকেদের গলাও দিল্লীতে পৌঁছাতে পারে প্রথম কাজটা যদি সরকার করে-দ্বিতীয় কাজটা আমাদের